মমতার মন জয়ের আপ্রাণ চেষ্টা কেন্দ্রের, তবে প্রশ্ন থেকেই গেল
ক দিকে রাজ্যস্তরে রাজনৈতিক তিক্ততা, অন্য দিকে বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের পথে যাওয়ার প্রস্তুতি। শরিকি রাজনীতির এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে আজ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন জয় করার একটি চেষ্টা শুরু হল রাজধানীতে।
আজ প্রগতি ময়দানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ‘বেঙ্গল রাইজিং’ আলোচনাসভায় আমন্ত্রিত ছিলেন মনমোহন সরকারের দুই মন্ত্রী আনন্দ শর্মা এবং জয়রাম রমেশ। দু’জনেই মমতাকে ঘিরে রইলেন অনুষ্ঠানের প্রায় আগাগোড়া। মঞ্চে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা জানালেন, “ভারতের রাজনীতি দরিদ্র হয়ে যেত, যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কেউ না থাকতেন।” স্মৃতিচারণার স্বরে বললেন, “মমতার অসম্ভব সাহসী, কিন্তু খুব সহজ মানুষও। আমার হৃদয় তিনি ছুঁয়ে গিয়েছেন। ৮০-র দশকে আমরা একসঙ্গে যুব কংগ্রেসের কাজ করেছি। তিনি আমার ছোট বোনের মতো। অবশ্যই ওঁর সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে চাই।”
দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের আগে তৃণমূলকে দূষে কংগ্রেসের একটি মিছিল নিয়ে মমতা প্রবল রুষ্ট হন মমতা। আর তখন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজ্য কংগ্রেসের মনোবলকে চাঙ্গা করতে চেয়ে বলেছিলেন, ‘‘কংগ্রেস তো ভিআরএস নেয়নি! বনবাসে যায়নি!’’ আর আজ তিনি মমতার পাশে বসে কার্যত যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। তৃণমূল নেত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে দরাজ ভাবে বললেন, “পশ্চিমবঙ্গের গ্রামোন্নয়নের প্রশ্নে পুরো সহায়তাই আমরা দেব। পশ্চিম মেদিনীপুরে গত দশ বছরে যা কাজ হয়নি, আগামী ২ বছরে তাই হবে।” তাঁর কথায়, “আমি কলকাতায় প্রায়ই যাই। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে জনপ্রিয়তা, তা অবিশ্বাস্য। এই জনপ্রিয়তার একটা তুমুল চাপও রয়েছে। তবে ‘জাদু কি ছড়ি’ মমতার হাতেই আছে।”
রাইজিং বেঙ্গল আলোচনাসভায় মমতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
আনন্দ শর্মা ও জয়রাম রমেশ। ছবি: পি টি আই
মমতাকে প্রশমিত করার একটা চেষ্টা আজ মনমোহন সরকারের পক্ষ থেকে চালানো হল ঠিকই। জয়রাম এবং আনন্দের দৌত্যে কংগ্রেস-তৃণমূলের ‘ঘনিষ্ঠতার’ একটি ছবি জাতীয় সাংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরার চেষ্টাও হল। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতা কতটা বাস্তব, সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেল। সূত্রের খবর, মঞ্চে ওঠার আগে বা পরে মমতার সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতারা নীচু স্বরে আলোচনা করলেও, রাজ্য কংগ্রেসের নেতাদের নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রাশ টানা হবে, এমন কোনও আশ্বাস কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্বকে দেওয়া হয়নি।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ মঞ্চে চুপ করে বসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসি মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তিনি আগাগোড়া নীরবই রইলেন। প্রথমে তাঁকে এই আলোচনা সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, শেষ মুহূর্তে আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র শিল্পে বিনিয়োগ থেকে রাজ্যের বিপণন কোনও বিষয়েই মানসবাবু মুখ খুললেন না। কেউ তাঁকে বলার জন্য অনুরোধও জানাল না।
ফলে সাংবাদিক বৈঠকে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠল, মমতা এবং কেন্দ্রের ঘনিষ্ঠতার যে ছবি আজ দেখা গেল, তা কি ভবিষ্যতে কেন্দ্র-পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হবে? কেন্দ্র কি মমতার দাবি মেনে পশ্চিমবঙ্গকে আর্থিক প্যাকেজ দিতে রাজি হবে?
জবাবে জয়রাম রমেশ বললেন, “প্রশ্নটাই তাত্ত্বিক। অর্থমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ। গত ৪৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। ফলে এমন সন্দেহ কেন করা হচ্ছে যে এই ঘনিষ্ঠতা থাকবে না?” এখানেই না থেমে তিনি বলেন, “এখন বেসরকারি বিনিয়োগের যুগ। পর্যটন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মরিয়া হয়ে বেসরকারি বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করুক পশ্চিমবঙ্গ। আর কেন্দ্র শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, তামিলনাড়ু, জম্মু ও কাশ্মীর, পঞ্জাব সব রাজ্যের শিল্পোন্নয়নের জন্য দায়বদ্ধ।”
এর পরেই জয়রামকে থামিয়ে সহাস্যে সাংবাদিকের করা প্রশ্নটাই ফের তাঁর সামনে তুলে ধরেন মমতা: “অতীতে কেন্দ্র সাহায্য করেছে ঠিকই। কিন্তু গত ৩৪ বছরের বাম শাসনের ফলে আমাদের সামনে উন্নয়ন এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। রাজ্য ঋণের ভারে ধুঁকছে। ফলে এই প্রশ্নটাই করা হচ্ছে যে, কেন্দ্র কি এই বিশেষ পরিস্থিতিতে রাজ্যকে আর্থিক সাহায্য করবে?”
তৎক্ষণাৎ মমতাকে তুষ্ট করার ‘ঘনিষ্ঠতায়’ ফিরে যান সপ্রতিভ জয়রাম। লঘু স্বরে সুকৌশলে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর লেগে থাকার ক্ষমতা অসামান্য। ফলে তিনি যদি তাঁর মতামত প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তা হলে কেন্দ্র অবশ্যই তাঁর কথা শুনবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.