|
|
|
|
কর্মী নেই, কালনায় বেহাল এসবিএসটিসি-র ডিপো |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কালনা |
দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এসবিএসটিসি)-র কালনা ডিপোর পরিকাঠামো বেহাল। দ্রুত আধুনিকীকরণ না হলে যাত্রী পরিষেবা ভেঙে পড়বে, দাবি এই ডিপোয় নিযুক্ত কর্মীদের।
কালনা শহর ঘেঁষা হিউধারা এলাকায় এই ডিপো। ১৯৯৬ সালে ইন্দিরা মার্কেটে প্রথম অস্থায়ী ভাবে এই ডিপো চালু হয়। ২০০০ সালে ডিপোর নিজস্ব ভবন এবং পরিকাঠামো গড়ে ওঠে পাকাপাকি ভাবে। তবে তৈরির পর থেকেই ডিপোর সংস্কারে আর হাত পড়েনি। ডিপো ঘুরে দেখা গিয়েছে, গাড়ি মেরামতির জন্য এখানে রয়েছে একটি শেড। কিন্তু বাকি অংশ একেবারেই ফাঁকা। রোদ-বৃষ্টিতে এই ফাঁকা জায়গাতেই পড়ে থাকে বাসগুলি।
এখানে সরকারি বাসের সংখ্যা ২০। তবে কর্মীদের দাবি, তার মধ্যে ১১টি গাড়ির অবস্থাই অত্যন্ত খারাপ। বাসগুলির কোনওটির ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। কোনওটির বসার জায়গা অত্যন্ত নিম্ন মানের। কোনওটির আবার যন্ত্রাংশেই ত্রুটি রয়েছে। সমস্ত বাসই অতীতে অন্যান্য ডিপোয় ব্যবহৃত হয়েছে। ডিপোর এক চালকের কথায়, “চাকা গড়ানোর পর থেকেই ঝুঁকির যাত্রা শুরু হয়ে যায়। মনে হয় এই বুঝি গাড়ি খারাপ হয়ে গেল। আর মাঝ রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়া মানেই যাত্রীদের গালিগালাজ।” কর্মীরা জানিয়েছেন, এই ডিপো থেকে বর্তমানে মাত্র সাতটি রুটে বাস চলাচল করে। সেগুলি হল বালুরঘাট, করুণাময়ী, কলকাতা, দুমকা, কুলি, বর্ধমান এবং সোনামুখি। অথচ, বছর দু’য়েক আগেই আরামবাগ, দিঘা, বাঁকুড়া, আসানসোল-সহ বেশ কয়েকটি রুটে আরও সাতটি বাস চলত। |
|
অধিকাংশ বাসেরই এই হাল। নিজস্ব চিত্র। |
কালনা ডিপো থেকে দিঘাগামী দূরপাল্লার বাস ছাড়ত ভোর চারটে পঞ্চাশ মিনিট নাগাদ। কিন্তু বছর খানেক আগেই ডিপো থেকে সেই বাসের বেরোনো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ, একটাই। প্রয়োজনীয় সংখ্যায় যাত্রী মেলে না। আর এই একটাই কারণে পর পর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এমনটাই দাবি ডিপো কর্তৃপক্ষের। ২০১০ সালের ২২ নভেম্বর কালনা ডিপো থেকে কলকাতা পর্যন্ত ‘ননস্টপ’ বাস পরিষেবা চালু হয়। কিন্তু মাত্র ২২ দিন চলার পরেই সেই পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৮ দিন ওই বাসটি চালিয়েছিলেন সমীর পাল। তাঁর কথায়, “কালনা থেকে ছেড়ে সেই একেবারে কলকাতায় গিয়ে থামতাম। যাওয়ার সময় কালনা থেকে কিছু যাত্রী মিললেও ফেরার সময় প্রায় ফাঁকা গাড়িই ফিরত কলকাতা। এর ফলে লোকসানের বহর বাড়ছিল প্রতিদিনই। পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না।” কর্মীদের অবশ্য দাবি, এই গাড়িটি নিয়ে সে ভাবে যাত্রীদের মধ্যে প্রচারই চালানো হয়নি। বাস না চলার পিছনে এটিও বিশেষ ভাবে দায়ী।
শুধু গাড়ি নয়। ডিপোর ভিতরের অবস্থাও খুবই সঙ্গীন। বাস রাখার জন্য যে প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, তার অবস্থা তথৈবচ। প্ল্যাটফর্মের চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোট ছোট পাথর। কোথাও কোথাও ছোট ছোট গর্ত। বর্ষায় সেখানে জমা জলে তৈরি হয় কাদা। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় ডিপোর চার পাশে জঙ্গল গজিয়ে গিয়েছে। রাতে অভাব রয়েছে পর্যাপ্ত আলোর। জ্বালানি কর্মী, হিসাবরক্ষক, স্টোর কিপার, এ সব নানা পদে কর্মী নেই।
সম্প্রতি কালনা ডিপো পরিদর্শনে এসেছিলেন দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ডিভিশনাল ম্যানেজার (দুর্গাপুর) প্রবীরকুমার ভৌমিক এবং পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক, তথা সংস্থার বোর্ড অফ ডিরেক্টর স্বপন দেবনাথ। তাঁরা দীর্ঘক্ষণ ডিপোর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রবীরবাবু আশ্বাস দেন, “কালনা ডিপোর সমস্যাগুলি ধীরে ধীরে মেটানোর চেষ্টা হবে।” তবে ডিভিশনাল ম্যানেজারের কাছে স্বপনবাবু এ দিন এই ডিপো থেকে কলকাতাগামী বাসটি ফের চালু এবং মাইথন হয়ে কল্যাণেশ্বরী পর্যন্ত নতুন একটি বাস পরিষেবা চালু করার কথা বলেছেন। |
|
|
|
|
|