তৃণমূল-কংগ্রেসের জোট-সম্পর্কে ‘জটিলতা’ বেড়েই চলেছে। মালদহে কংগ্রেসকর্মীদের উপরে ‘হামলা’র জন্য এ বার জেলা তৃণমূল সভানেত্রী তথা রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের দিকে আঙুল তুললেন উত্তর মালদহের কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূর।
রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির দাবি নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূলের ‘ব্যবধান’ স্পষ্ট হচ্ছিল। গত শুক্রবার কলকাতায় তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের’ প্রতিবাদে মৌনীমিছিল করে ‘বিতর্ক’ তৈরি করে যুব কংগ্রেস। তার রেশ না কাটতেই এ দিন প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি মৌসমের অভিযোগ, “তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী মালদহ থেকে কংগ্রেসকে শেষ করতে সিপিএমের সমাজবিরোধীদের দলে ঢোকাচ্ছেন। তারা তৃণমূলের হয়ে কংগ্রেসকর্মীদের উপরে হামলা করছে।” পাশাপাশি তাঁর দাবি, “রাজ্যের নানা এলাকায় যুব কংগ্রেসের কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলেই আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। ওই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভুল বোঝানো হয়েছে।” কারা ‘ভুল বুঝিয়েছেন’ তা না ভাঙলেও, মৌসম জানিয়েছেন, তিনি শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কোথায়, কী ভাবে যুব কংগ্রেসকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, সেই সংক্রান্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে দেবেন।
গাজলে একটি হত্যাকাণ্ডের পরে তৈরি হওয়া ‘পরিস্থিতি’ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে মালদহ সদরে জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পালকে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন মৌসম। গত ১৬ নভেম্বর গাজলে তৃণমূলের অঞ্চল সম্পাদক প্রেমচাঁদ বল খুন হন। ওই খুনের মামলায় ২০ জন কংগ্রেসকর্মী গ্রেফতার হন। কংগ্রেসের অভিযোগ, তাদের কিছু ‘নিরীহ’ কর্মী-সমর্থককে ধরেছে পুলিশ। স্মারকলিপি দিতে গিয়ে পুলিশের একাংশের ‘ভূমিকা’র সমালোচনা করে পুলিশ সুপারকে কড়া পদক্ষেপ করার অনুরোধ জানান কংগ্রেস সাংসদ। তাঁর বক্তব্য, “গাজলে ওই খুনের পরে পুলিশের ভয়ে বহু নিরপরাধ কংগ্রেসকর্মী ঘরছাড়া। যে কোনও দিন গাজলে ফের বড়সড় ঝামেলা বাধতে পারে। তাই ওই এলাকায় পুলিশ-ক্যাম্প বসানোর জন্য এসপি-কে বলেছি।” |
এর পরেই আসে অভিযোগের পালা। মৌসমের দাবি, গাজলের কয়েকটি গ্রামে ‘তৃণমূল-আশ্রিত’ দুষ্কৃতীদের ‘দৌরাত্ম্যেও’ বহু কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া হয়ে রয়েছেন। জমিতে ধান পাকলেও তাঁরা কাটতে পারছেন না। প্রায় ৯০০ বিঘা জমির ধান ‘নষ্ট’ হচ্ছে। তৃণমূলের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের পাল্টা অভিযোগ, “এলাকা থেকে কর্তৃত্ব হারাতে শুরু করায় জেলা কংগ্রেস আতঙ্কিত। কর্তৃত্ব ফিরে পেতে কংগ্রেস কয়েকদিন আগে গাজলে আমাদের দলের অঞ্চল সম্পাদককে খুন করেছে। প্রকৃতপক্ষে কংগ্রেসই তৃণমূলের উপরে হামলা চালাচ্ছে। তৃণমূলের ঘাড়ে মিথ্যা দোষ চাপাচ্ছেন প্রদেশ যুব
কংগ্রেস সভাপতি।”
পুলিশ সুপার বলেন, “সাংসদ অভিযোগ করতেই পারেন। পুলিশ যা করছে, তা আইন মেনেই করছে। যে অভিযোগ মিলেছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।” গাজল-সহ জেলার বেশ কয়েকটি স্পর্শকাতর এলাকায় পুলিশ-ক্যাম্প বসিয়ে টহলদারি বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি জানান। |