|
|
|
|
|
রেলনগরী |
রেলের হুইসলে বিপ্লব ছিল, তাই সে পথে আন্দোলনের কোনও সীমা নেই। গহন আঁধার, জঙ্গল পেরনো ঝিকঝিক, জোনাকির ঝিকমিকে চলমান ল্যান্ডস্কেপ! বাষ্পযানের সম্মতিতে তোলপাড় হল তিস্তাপার, গড়ে নিল রেলনগরী। পরাধীনতার আঁধারেও আলো জ্বেলে দিলেন অক্টাভিয়াস স্টিল কোম্পানির পল হুইল সাহেব। ১৮৯১-এ বেঙ্গল-ডুয়ার্স রেলওয়ে নাম দিয়ে তিস্তার পূর্ব পারে বার্নেশ ঘাট থেকে ৩১ মাইল দূরে ডামডিম এবং লাটাগুড়ি রামসাইহাট ৬ মাইল শাখা রেলপথ চালু হল। ১৮৯৩-এ বি ডি আর-এর প্রথম রেল চলল। ডুয়ার্সের চা, কাঠ কলকাতার বাজারে রফতানির জন্য গড়ে উঠল বেঙ্গল-ডুয়ার্স রেলওয়ে। এই রেলে চেপেই মানুষ যাওয়া-আসা করতেন। প্রথমে এই বি ডি আর-এর সদর দফতর জলপাইগুড়ি শহরে থাকলেও ১৯১৭-য় তিস্তাপারের দোমোহনিতে বি ডি আর-এর সদর গড়ে ওঠে। তদানীন্তন চা শিল্পের জিয়নকাঠি হয়ে ওঠে এই বি ডি আর। রেলকে কেন্দ্র করে একটা নগর জন্ম নিল। এই রেলনগরীর সর্বময় কর্তা ছিলেন কোম্পানির চিফ এজেন্ট। এমনই এক জন দাপুটে এজেন্ট ছিলেন পল হুইল সাহেব, যাঁর নামেই আজকের ঝাউঘেরা বিদ্যায়তন দোমোহনি পল হুইল হাইস্কুল। জলপাইগুড়ি-সহ উত্তর-পূর্ব বাংলার মানুষ এই প্রথম দেখল সমবেত স্বপ্নের রেলপথ। শুধু আজকের মাদারিহাট, লালমনির হাটে সুপারফাস্ট রেল চলাচলের চাকা চলছে সৌজন্যে বি ডি আর। চার পাশে রেলের বড় কর্তাদের বাংলো, টেনিস কোর্ট, স্টাফ কোয়ার্টার, অফিস, ওয়ার্কশপ, ইঞ্জিন শেড, ফুটবল মাঠ সবই আছে দোমোহনিতে। |
|
ছবি: সন্দীপন নন্দী |
সবেতেই ফিকে রক্তিম ইটের পাঁজর ভাঙা জড়তা, অবহেলার মস-ফার্নে হারিয়ে গিয়েছেন শাসক সাহেবরা। তবু ঐতিহ্যের বেড়া বুনে চলেছে এ রেলনগরী। তবে ভুটান হিমালয়ের পাদদেশে চেল, জলঢাকা, হাতিনালা, ডায়না, কিরপতির মতো পাহাড়ি নদী পেরোতে হলেও বি ডি আর ছিল তিস্তা-তোর্ষা নদীর মাঝেই সীমাবদ্ধ। চা রফতানিতে ওদলাবাড়ি, বাগরাকোট, চালসা, মেটেলি, বানারহাট, বিন্নাগুড়ি, বীরপাড়া, মাদারিহাট স্টেশনগুলি ছিল স্বনামধন্য! আর কাঠ রফতানিতে লাটাগুড়ি, ওদলাবাড়ি, রামসাই, চালসা প্রভৃতি। বি ডি আর-এ উঁচু মানের ফুটবল টিমও ছিল। সে কালের খরস্রোতা নদী, দু’পাশের সবুজ চা-বাগিচার কার্পেট, মাঝে পাহাড় কোলের মেটেলি স্টেশন যেন নয়নাভিরাম চলচ্চিত্রের আয়োজক। রেলে চড়ার ক্লান্তি, অবসাদের কাছে জিতে যায় বি ডি আর-এর রেলপথ। আজ বি ডি আর নেই, ক্যানভাসে ধূসর রং ছড়াবে হয়তো বা সময়। কিন্তু ওদের অভিনব ইন্টার ক্লাস, আমজনতার থার্ড ক্লাসে আর কেউ চড়বে না। এখন জাদু বলে উধাও আস্ত জনপদ, বি ডি আর-এর স্বপ্নরেল। কিন্তু লাল দালানের শরীর জড়িয়ে বট-পাকুড় ছাড়তে পারেনি, আত্মীয়ের ক্লাস হয় না।
|
আনন্দমেলা |
|
ছবি: সুদীপ দত্ত |
জলপাইগুড়ির ‘বাঁচব বাঁচাব’ সংস্থা মহালয়ার দিন আয়োজন করেছিল আনন্দমেলার। সংস্থাটি যার হাত ধরে একটু একটু করে গড়ে উঠেছে, সেই ইন্দিরা সেনগুপ্ত মেলাকে সাজিয়েছিলেন নানা স্বাদের অনুষ্ঠানে। হাতের কাজের কর্মশালা, পত্রিকা প্রকাশ, প্রদর্শনী, কোরিয়োগ্রাফিতে আগমনী, আবৃত্তি, গান এ সব কিছু মিলেই আনন্দমেলা। ছিল বস্ত্র বিতরণ আর নাটকও। ইন্দিরাজির পরিচালনায় মঞ্চস্থ হল দু’টি নাটক। অবাক জলপান উপহার দিল অজয়, সঞ্জয়, রিম্পা, শিল্পা, ভব, সুরজিৎ-রা এদের অভিভাবকদের কেউ গাড়ির চালক, কেউ বা ঠেলার, কারও পরিচয় কাজের মেয়ে। যদুর কীর্তির কুশীলব স্বজন, প্রভাকর, অশোক, রীতমরা। দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী এই ছেলেমেয়েদের অভিনয় রীতিমত চমকে দেওয়ার মতো। পুরসভার ‘প্রয়াস’ প্রেক্ষাগৃহের এই অনুষ্ঠান যেন দর্শকদের বলে গেল ‘বাঁচব বাঁচাব’।
|
অন্য দেবতা |
|
মন্দিরের মধ্যে বিগ্রহ। পিছনের দেওয়ালে মহাত্মা গাঁধী আর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতিকৃতি। মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তি। এমনটাই দেখা যাবে জলপাইগুড়ির মাষকলাইবাড়ি পঞ্চমুখী হনুমান মন্দিরে। ১৯৫৩-য় স্বামী করপাত্রী মহারাজ মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন। মন্দিরের পূজারি ভজন দাস জানান, করপাত্রী মহারাজের সঙ্গে গাঁধীজি, নেতাজি এবং বিধানচন্দ্র রায়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। মন্দিরের ভিতরে মহাপুরুষদের মূর্তিও তাই স্থান পেয়েছে। শালগ্রাম শিলা-ও রয়েছে মন্দিরে, অন্নভোগ হয় রোজ। সকাল-সন্ধ্যা হয় আরতিও। প্রচুর মানুষ আসেন মন্দিরটিতে। পুজো দেওয়ার পাশাপাশি মহাপুরুষদের শ্রদ্ধাও জানান দর্শনার্থীরা।
|
‘পীরনামা’ |
১৯৬৯ সালের ২৬ জুন জন্ম নিল ত্রিতীর্থ নাট্য সংস্থা। প্রথম মঞ্চস্থ নাটক ‘পুতুল খেলা’। এরপর একে একে মঞ্চস্থ হয়েছে এবং ইন্দ্রজিৎ, শের আফগান, মঞ্জরী আমের মঞ্জরী, দেবীগর্জন, দেবাংশী, চিরকুমার সভা, জল, কর্ণ-কুন্তী সংবাদ, করকুহক, বীজমন্ত্র-সহ একাধিক নাটক। সম্প্রতি মঞ্চস্থ হয়ে গেল ‘পীরনামা’। অভিনয়ে ছিলেন হরিমাধব মুখোপাধ্যায়, নির্মলেন্দু তালুকদার, রতন ঘোষ, ভাস্কর দাস, শতাব্দী নাথ প্রমুখ। এক মুসলিম পরিবারের মেয়ের নিকা হয় বৃদ্ধ পিরের সঙ্গে। কিন্তু মেয়েটি এই নিকা’কে মানতে পারেনি এবং পালিয়ে যায়। ঝড়-ঝঞ্ঝার রাতে আশ্রয় নেয় এক জমিদারের বজরায়। সেখান থেকেই প্রকৃত ঘটনার শুরু। জমিদারদের ছেলে হাসিম আলি-র সঙ্গে তার ভালবাসা হয়। এ দিকে পিরবাবা তার নিখোঁজ বিবিকে খুঁজতে খুঁজতে ঘটনাচক্রে ওই বজরাতেই আশ্রয় নেয়। শুরু হয় সম্পর্কের নানা টানাপোড়েন, মানবিক মূল্যবোধ, বাস্তব সমাজ ও নিরুপায় মায়ের করুণ কান্না এই সব কিছুকেই সুন্দর ভাবে গাঁথা হয়েছে পিরনামা নাটকে। পিরবাবার ভূমিকায় হরিমাধব মুখোপাধ্যায়, তানি-র ভূমিকায় নবাগতা শতাব্দী নাথ, জমিদারের ভূমিকায় বর্ষীয়ান নির্মলেন্দু তালুকদার, হাসিম আলির চরিত্রে ভাস্কর দাসকে সুন্দর মানিয়েছে। ইদের সন্ধ্যায় পীরনামা-র মঞ্চায়ন দর্শকদের মন জয় করেছে। |
|
|
|
|
|