মেডিক্যালে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা সংক্রান্ত বিতর্কের ফয়সালা করতে শেষমেশ অন্ধ্র-মহারাষ্ট্র-তামিলনাড়ুর পথেই হাঁটছে পশ্চিমবঙ্গ। এ ব্যাপারে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র জারি করা নির্দেশিকায় স্থগিতাদেশ চেয়ে আজ, বুধবার রাজ্য সরকার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
এমসিআইয়ের নির্দেশিকা মোতাবেক, শুধু ইংরেজি ও হিন্দিতে ওই পরীক্ষা দেওয়া যাবে। কিন্তু রাজ্যের দাবি ছিল, ইংরেজি-হিন্দির পাশাপাশি প্রশ্নপত্র হোক বাংলাতেও। পরীক্ষায় সিবিএসই পাঠ্যক্রম অনুসরণের ‘সিদ্ধান্তের’ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। দাবি সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসার জন্য এমসিআই-কে সাত দিন সময় দিয়েছিল রাজ্য। মঙ্গলবার সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে। এবং এমসিআই এখনও নিজের সিদ্ধান্তে অটল। ফলে রাজ্য এ বার আদালতের কাছে স্থগিতাদেশ চাইতে যাচ্ছে বলে এ দিন সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, অভিন্ন প্রবেশিকার এমসিআই-নির্ধারিত কিছু নিয়ম সম্পর্কে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশও আপত্তি তুলেছিল। এমসিআই তাতে আমল না-দেওয়ায় ওই তিন রাজ্য সংশ্লিষ্ট হাইকোর্টে আপিল করে। সেখানকার আদালত এমসিআইয়ের নির্দেশে ইতিমধ্যে স্থগিতাদেশ জারি করেছে। এখন এ রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন, “আমাদের বাংলা মাধ্যমের বা পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডের ছাত্রছাত্রীরা এত কম সময়ে কী ভাবে নতুন নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তৈরি হতে পারবে, এমসিআই তা এক বারও ভাবল না! ওরা একটা নির্দেশ চাপিয়ে দিতে চাইছে। বাধ্য হয়ে আমাদের আদালতে যেতে হচ্ছে।” কাউন্সিলের কী বক্তব্য?
এমসিআই বোর্ডের সদস্য আশোককুমার গুপ্তের ব্যাখ্যা, “পরীক্ষাটা নেবে সিবিএসই। তারাই জানিয়েছে, এ বছর হিন্দি ও ইংরেজি ছাড়া আঞ্চলিক ভাষায় প্রশ্নপত্র তৈরি সম্ভব নয়। পরের বছর থেকে ভাবা যেতে পারে।” এমসিআইয়ের কিছু কর্তা অবশ্য এ প্রশ্নও তুলছেন যে, যারা বারো ক্লাসের চৌকাঠ ডিঙিয়ে ডাক্তারি পড়তে চলেছে, ইংরেজি ভাষায় প্রশ্নপত্র বুঝতে তাদের অসুবিধে হবে কেন? আর অভিন্ন প্রবেশিকার পাঠ্যক্রম প্রসঙ্গে অশোককুমারের দাবি, “পাঠ্যক্রম মোটেই সিবিএসই-ঘেঁষা নয়। সব রাজ্যের বোর্ডের কোর্স মিলিয়ে প্রশ্ন হবে।” যার প্রেক্ষিতে রাজ্য মেডিক্যালের সেন্ট্রাল সিলেকশন বোর্ডের চেয়ারম্যান উৎপল দত্তের পাল্টা সওয়াল, “তা হলেও তো পশ্চিমবঙ্গের ছেলেদের বিভিন্ন বোর্ডের পাঠ্যক্রম সম্পর্কে জানতে হবে, সড়গড় হতে হবে! আমরা তাই এক বছর সময় চেয়েছিলাম।”
এবং এই পরিস্থিতিতে মামলা করা ছাড়া অন্য রাস্তা খোলা নেই বলেই রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তারা মনে করছেন। এঁদের অনেকের যুক্তি, “এইম্স বা পিজিআই চণ্ডীগড়ের মতো দেশের শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এমসিআই অভিন্ন প্রবেশিকা চালু করতে পারেনি। তারা নিজেদের মতো পরীক্ষা নিয়ে পড়ুয়া ভর্তি করে। সে সুযোগ রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলো পাবে না কেন?”
হাইকোর্টে এ প্রসঙ্গটিও রাজ্য সরকার তুলবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। |