চিঠি মুকুলকে
‘সোনার বাংলা’ মমতার নেতৃত্বে, আশা মহাশ্বেতারই
মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে বিশিষ্ট জনেদের একাংশের ‘সংঘাতে’ রাতারাতি নতুন মাত্রা যোগ করল মহাশ্বেতা দেবীর চিঠি!
মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর একটি সভার অনুমতি পুলিশ না-দেওয়ার ফলে তৈরি হওয়া ‘জটিলতা’কে ঘিরে সোমবার মমতার সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ত’ বলেছিলেন মহাশ্বেতাদেবী। কিন্তু তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না-কাটতেই সেই মমতার নেতৃত্বেই ‘সোনার বাংলা গড়ে উঠবে’ বলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়কে চিঠি দিয়েছেন বর্ষীয়সী লেখিকা। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য তেমনই। মহাশ্বেতাদেবীর সোমবারের মন্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতার কড়া প্রতিক্রিয়া এবং তার পরেই মুকুলবাবুর কাছে মহাশ্বেতাদেবীর এই চিঠিকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছে তৃণমূল শিবিরের একাংশ।
মুকুলবাবু জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তিনি মহাশ্বেতাদেবীর হাতে-লেখা চিঠিটি পেয়েছেন। মুকুলবাবুর কথায়, “এ রকম চিঠি প্রায়ই পাই। তবে এই চিঠির শেষে মহাশ্বেতাদি লিখেছেন, ‘তোমাদের সোনার বাংলা এক দিন গড়ে উঠবেই এবং সেটা মমতার নেতৃত্বেই হবে’। উনি নিজের হাতেই চিঠি লেখেন এবং এ দিনও নিজেই লিখে পাঠিয়েছেন।”
মহাশ্বেতাদেবীর এই চিঠি পাওয়ার পরে তৃণমূলের নেতৃত্বের একাংশের অভিমত, তাঁকে দিয়ে কিছু মানুষ ‘আত্মসিদ্ধি’র জন্য মমতাকে আক্রমণ করিয়েছিলেন। তা না-হলে ‘ফ্যাসিস্ত’ বলার পরেই তিনি আবার চিঠিতে এমন মন্তব্য করতে যাবেন কেন? তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “মহাশ্বেতাদেবী আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয়। মনে হয়, তাঁর বয়সকে কাজে লাগিয়ে, তাঁকে দিয়ে আমাদের সরকারকে ফ্যাসিস্ত বলানো হয়েছে!”
এই চিঠি লিখে তাঁর ২৪ ঘণ্টা আগের প্রতিবাদের মূল বক্তব্য থেকে তিনি কোনও ভাবে সরে এলেন কি না, তা নিয়ে স্বয়ং মহাশ্বেতাদেবীর বক্তব্য জানা যায়নি। রাত পর্যন্ত মোবাইল এবং ল্যান্ডলাইনে চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মুকুলবাবুকে লেখা মহাশ্বেতাদেবীর চিঠির খবর পেয়ে মুখ খোলেননি মুখ্যমন্ত্রীও। তবে মমতার ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের বক্তব্য, মহাশ্বেতাদেবী ‘ফ্যাসিস্ত’ বলেছিলেন সাংবাদিক সম্মেলনে। মমতার নেতৃত্বে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে ওঠার আশাপ্রকাশ করে তিনি চাইলে বিবৃতি দিতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি জানিয়েছেন মুকুলবাবুকে লেখা চিঠিতে। তার ফলে, মহাশ্বেতাদেবীর প্রকাশ্য বক্তব্যের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন, তার পরে আর কোনও মন্তব্য করা সমীচীন নয় বলে মতার ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের অভিমত।
এপিডিআর-এর ঘটনার জেরে সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ত’ বলা উচিত কি না, এই নিয়ে বিশিষ্টদের মধ্যেও মতের বিভাজন আছে। মহাশ্বেতাদেবীর চিঠি সেই ভিন্ন মতকে আরও স্পষ্ট করে দিল বলে একাংশের বক্তব্য। যার জেরে মহাশ্বেতাদেবীও সুর ‘নরম’ করলেন। আবার অন্য একাংশের বক্তব্য, মহাশ্বেতাদেবী সোমবারের সাংবাদিক সম্মেলনেও বলেন, মমতার নেতৃত্বে উন্নয়নমূলক কর্মসূচিকে তিনি সমর্থন করেন। সেই বক্তব্যের সঙ্গে চিঠির মন্তব্যের সাযুজ্য আছে। কাজেই চিঠির বিষয়টিকে আলাদা করে ‘ফ্যাসিস্ত’ সংক্রান্ত মন্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা উচিত নয়। প্রসঙ্গত, মেট্রো চ্যানেলে এপিডিআর-কে সভার অনুমতি না-দেওয়ার ঘটনার নিন্দা করে পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীর পূততুণ্ড এ দিনই বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সরকারের এই অগণতান্ত্রিক আচরণকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা না-দিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের পদক্ষেপ যাতে সরকার না-নেয়, সেই বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকার আবেদন জানাচ্ছি’।
মেট্রো-চ্যানেলে আজ, বুধবার ও কাল, বৃহস্পতিবার এপিডিআর-সহ ২১টি সংগঠনের সভা করার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ অনুমতি ‘প্রত্যাহার’ করেছে বলে অভিযোগ করে মহাশ্বেতাদেবী এবং এপিডিআরের প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ জানান। পুলিশ জানিয়েছিল, এই দু’দিনই অন্য একটি সংগঠন ওখানে সভা করার জন্য আগেই অনুমতি চেয়েছিল। তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলেই এপিডিআর-কে অনুমতি দেওয়া হয়নি। ঘটনাচক্রে, আজ ও কাল মেট্রো চ্যানেলে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র সভা করার কর্মসূচি রয়েছে। তাদের পুলিশ অনুমতিও দিয়েছে। সংগঠনের সভানেত্রী দোলা সেন এ দিন জানান, জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে আজ তাঁরা ওখানে সভা করবেন। আর নন্দীগ্রাম, নেতাইয়ের গণহত্যার বিচারের দাবিতে কালও মেট্রো চ্যানেলে সভা করবেন।
যাদের কর্মসূচি ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত, সেই এপিডিআর-সহ ২১টি গণ সংগঠন অভিযোগ করেছে, ফ্রন্ট আমলের ‘জনবিরোধী’ নীতিগুলিই মমতার সরকার অনুসরণ করে চলেছে। নিউ সেক্রেটারিয়েটের সামনে এ দিন এক পথসভায় এই অভিযোগ করে তাঁদের দাবি, জঙ্গলমহলে যৌথবাহিনী প্রত্যাহার, ইউএপিএ আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করা-সহ যে সব দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছেন, বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন সেগুলি মমতারও দাবি ছিল।
বিশিষ্টদের একাংশের সঙ্গে ‘বাগ্যুদ্ধে’ জড়িয়ে সোমবার এপিডিআর সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “সামনে মাওবাদীদের মুখোশ পরে পিছনে নারী অধিকার, ছাত্র সংগঠনের নামে খুন করা, লুঠ করার কমিটি চলছে!” মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ করে এপিডিআর-এর সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রসাদ রায়চৌধুরী এ দিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বিগত বামফ্রন্ট সরকারের শাসনের সময়ে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, রিজওয়ানুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এপিডিআর যখন আন্দোলনের পুরোভাগে, এই রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এই মহাকরণে দাঁড়িয়েই এপিডিআর-কে মাওবাদীদের প্রকাশ্য সংগঠন বলেছিলেন’! এপিডিআর-এর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জিত শূরের আরও অভিযোগ, “বিরোধী নেত্রী থাকার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলে যৌথ বাহিনীর অভিযান বন্ধ করা এবং ইউএপিএ-র অপপ্রয়োগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনিই ফের যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু করে দিলেন। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই উনি মাওবাদী তকমা লাগিয়ে দিচ্ছেন!”
রঞ্জিতবাবু জানান, জঙ্গলমহলে যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার, রাজনৈতিক বন্দিমুক্তি-সহ বিভিন্ন দাবিতে বৌবাজারের ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার পাশে আজ, বুধবার ও কাল, বৃহস্পতিবার অনশন করবেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন এপিডিআর-এর তরফে লালবাজারে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, শুক্রবার কলেজ স্কোয়্যার থেকে মিছিল করে প্রথমে তাদের কর্মী-সমর্থকেরা বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট ও ফিয়ার্স সেন সংযোগস্থলে জমায়েত করবেন। সেখান থেকে কয়েক জন হেঁটে মহাকরণে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ‘ডেপুটেশন’ জমা দেবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.