নতুন সরকারও ফিরে দেখেনি, হতাশ হৈমবতী
মি-রক্ষার আন্দোলনে ২০০৭-এর ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামের ভাঙাবেড়ায় অবস্থানে সামিল হয়েছিলেন। ‘শিকার’ হয়েছিলেন পুলিশের গুলি-চালনার। গুরুতর জখম অবস্থায় ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। দু’মাসের বেশি চিকিৎসাধীন ছিলেন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। পাঁচ বছর হতে চলল। নন্দীগ্রামের হাওয়ায় রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলও হয়ে গেল। কিন্তু এখনও ক্ষতিপূরণ পেলেন না সোনাচূড়ার গাংড়া গ্রামের বছর ষাটের হৈমবতী হালদার।
হাইকোর্ট ওই দিনের ঘটনায় আহত, ধর্ষিত এবং নিহতদের পরিজনেদের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছিল। পূর্বতন বাম সরকার প্রথমে হাইকোর্টের নির্দেশও মানেনি। পরে অবশ্য নিহত ১৩ জনের পরিজনকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লক্ষ টাকা করে দিয়েছিল। আহত-ধর্ষিতদের ক্ষতিপূরণ পেতে পার হয়ে যায় আরও তিন বছর। তা-ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মাত্র কয়েক মাস আগে ক্ষতিপূরণের অর্থ পেয়েছেন ১৪ মার্চের ঘটনায় আহত ১৬২ জন। সেই প্রাপক-তালিকাতেও ঠাঁই হয়নি হৈমবতীর। জমি-আন্দোলনের প্রধান শক্তি তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেও সরকারি সাহায্যের হাত ছুঁয়ে দেখেনি এই বৃদ্ধাকে।
ডিএম অফিসেই দেখা মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের সঙ্গে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
মঙ্গলবার স্বামী নারায়ণ হালদারকে নিয়ে ক্ষতিপূরণের আবেদন জানাতে হৈমবতীদেবী এসেছিলেন তমলুকে জেলাশাসকের কার্যালয়ে। অশক্ত শরীরে দীর্ঘ অপেক্ষার পরে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মলয় হালদারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। কিন্তু এ দিনও খুব একটা আশ্বস্ত হয়ে ফিরতে পারলেন না। মলয়বাবুর বক্তব্য, “হৈমবতীদেবীর আবেদন পেয়েছি। কিন্তু কী কারণে ক্ষতিপূরণ পাননি, বুঝতে পারছি না। আদালতের তালিকা ধরে ক্ষতিপূরণ অর্থ দেওয়া হয়েছিল। তবে আমাদের তরফে কোনও ভুল হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হবে।” জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, কোর্টের নির্দেশের সঙ্গে যুক্ত তালিকায় যদি নাম না থাকে তবে প্রশসানের পক্ষে ক্ষতিপূরণ দেওয়াও সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে ফের হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েই ওই বৃদ্ধাকে আবেদন করতে হবে। অর্থাৎ, আবারও হয়তো দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হবে হৈমবতীদেবীকে। যিনি নিজেই জানাচ্ছেন, তাঁর মতো আরও অন্তত ১০-১২ জন, সে দিন যাঁরা গুরুতর জখম হয়েছিলেন, ক্ষতিপূরণ পাননি।
এমনকী সুরাহার আশায় পুজোর আগে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে গিয়েও হালদার দম্পতিকে ফিরতে হয়েছে হতাশ হয়ে। তৃণমূল কর্মীরা হৈমবতীদেবীর পরিচয় জেনেও চলে যেতে বলেন বলে অভিযোগ। বৃদ্ধা বলেন, “পেটে গুলি লেগেছিল। বেঁচে গিয়েছি কোনও রকমে। কিন্তু কোনও কাজই করতে পারি না। একমাত্র ছেলেরও গুলি লেগেছিল। এখন সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব।” ১১ ডেসিমেল মাত্র চাষ জমি রয়েছে হালদার পরিবারের। সংসারে বৃদ্ধা হৈমবতী-নারায়ণবাবু ছাড়াও রয়েছেন ছেলে, ছেলের বউ, নাতি-নাতনি। ছেলের দিনমজুরিতেই অতি কষ্টে সংসারটা টিকে আছে। এর উপর চিকিৎসার জন্য এখনও মাঝেমধ্যেই কলকাতায় যেতে হয়। কখনও সেই যাওয়ার টাকাটুকুও জোটে না।
জমি-আন্দোলনের ‘মুখ’ হতাশায় নুয়ে পড়ে মঙ্গলবার পড়ন্ত বিকেলে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.