সীমান্তের খুচরো অশান্তি যাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত না করতে পারে তার জন্য নতুন যৌথ মেকানিজম তৈরি করতে চলেছে ভারত ও চিন। সেই মোতাবেক এখন থেকে শুধু সামরিক স্তরেই নয়, রাজনৈতিক ভাবেও সীমান্ত-সমস্যার মোকাবিলা করবে দুই দেশ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি সম্প্রতি এই যৌথ মেকানিজমের ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে।
ঠিক হয়েছে, ভারত এবং চিনের সংসদীয় প্রতিনিধি, গোয়েন্দা প্রতিনিধি ও কূটনৈতিক কর্তাদের নিয়ে তৈরি হবে একটি যৌথ প্রতিনিধিদল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির বক্তব্য, চিনের সঙ্গে এই বছরের মধ্যেই একটি সীমান্ত মেকানিজম গড়ে তোলার কথা হয়েছে। সেখানে সব ধরনের প্রতিনিধিই থাকবেন। আগামী ২৮ তারিখ নয়াদিল্লিতে দু’দেশের ১৫তম সীমান্ত-আলোচনায় এই মেকানিজমের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
গত ডিসেম্বরে চিনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের ভারত সফরের সময়েই এ ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়েছিল দু’পক্ষের। গত বছর ভারত-চিন সীমান্তে একের পর এক ফৌজি অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। দু’টি পোস্টের মাঝে যেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই, সেই সব জায়গায় চিনা অনুপ্রবেশ এবং লাল পতাকা পুঁতে যাওয়া নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম উত্তাল হয়েছে। চিনের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয়েছে ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে তিক্ততা বেড়েছে বই কমেনি। কিন্তু সীমান্তের নানা সমস্যা যাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ছায়া না ফেলে, তার জন্যই এ বার যৌথ মেকানিজমের উদ্যোগ।
গত এপ্রিল মাসে চিনের সানিয়ায় ব্রিকস-এর পার্শ্ববৈঠকে নতুন সীমান্ত মেকানিজম নিয়ে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং চিনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে চিনের গুরুত্ব যথেষ্ট রয়েছে ভারতের কাছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের নিরিখেও চিনের সঙ্গে সখ্য বজায় রাখাটা জরুরি। যদিও দক্ষিণ চিন সাগরে তেল-বিতর্ক থেকে শুরু করে চিনের মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশ ঢুকিয়ে নেওয়া অথবা কাশ্মীরিদের স্টেপল ভিসা দেওয়ার মতো ঘটনাগুলির প্রতিবাদ সর্বদাই করছে সাউথ ব্লক। কিন্তু চিনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতেও তারা মরিয়া। পাশাপাশি ব্রিকস অথবা জি-২০-র মতো বিভিন্ন বহুপাক্ষিক মঞ্চে চিনকে পাশে নিয়ে উষ্ণায়ন থেকে আর্থিক মন্দার মতো সমস্যার মোকাবিলা করার চেষ্টা চালাচ্ছে সাউথ ব্লক। সীমান্তে ছোটখাটো অশান্তিও এই উদ্যোগে ছায়াপাত করবে বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। সেটা রুখতেই এই নয়া ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে।
দু’দেশের মধ্যে আসন্ন সীমান্ত-আলোচনায় চিনের বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন সে দেশের স্টেট কাউন্সিলর জাই বিনগুয়া। ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ প্রতিনিধি হচ্ছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। যেহেতু এ ব্যাপারে দু’দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বেরই সবুজ সংকেত রয়েছে, তাই আগামী ২৯ তারিখ চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়ে যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে। আগামী বছর নেতৃত্বের বদল হচ্ছে চিনে। থাকবেন না বিনগুয়াও। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার আগেই এই নতুন ব্যবস্থা তৈরি করে যেতে চাইছেন বিনগুয়া।
|
শেষ পর্যন্ত ইস্তফাই দিলেন আমেরিকায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হুসেন হক্কানি। আজ ইসলামাবাদে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি, সেনাপ্রধান আশফাক কিয়ানি ও গোয়েন্দাপ্রধান সুজা পাশার সঙ্গে এক বৈঠকে বসেছিলেন হক্কানি। তখনই তাঁকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকের পরে তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে হক্কানি জানিয়ে দেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। ইস্তফা গৃহীতও হয়েছে। দিন কয়েক আগে এক পাক বংশোদ্ভূত মার্কিন শিল্পপতির ফাঁস করে দেওয়া স্মারকলিপিতে হক্কানির নাম জড়িয়ে যায়। মনসুর ইজাজ নামে এই শিল্পপতি দাবি করেন, মে মাসে হক্কানির নির্দেশে তিনি একটি স্মারকলিপি বানিয়ে মার্কিন সেনাপ্রধান মাইক ম্যুলেনকে দিয়েছিলেন। সেই স্মারকলিপিতে বলা হয়েছিল, গোপনে অভ্যুত্থানের ছক কষছে পাক সেনাবাহিনী। হক্কানি অবশ্য দাবি করেছেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে দুরত্ব তৈরি করতেই এই ভুয়ো স্মারকলিপির গল্প তৈরি করা হয়েছে। তবে তিনি এ-ও বলেছিলেন, এই প্রসঙ্গে যে কোনও রকম তদন্তের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত তিনি। |