মিশরের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে নতুন করে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভ এই নিয়ে চতুর্থ দিনে পড়ল। সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ সত্ত্বেও সেই বিক্ষোভ ক্রমশই বড় আকার ধারণ করছে। কায়রো ছাড়াও আলেকজান্দ্রিয়া-সহ একাধিক শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভের মুখে পিছু হটে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইস্তফা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এসাম শরাফের ইস্তফা ‘সুপ্রিম কাউন্সিল অফ দ্য আর্মড ফোর্সেস’ (এসসিএএফ)-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা অবশ্য এ সব কিছুই শুনতে রাজি নন। সেনা শাসনের অবসান দাবি করে আজ তাহরির স্কোয়্যারে অন্তত দশ লক্ষ বিক্ষোভকারী জমায়েত হতে চলেছে। ফেসবুক, টুইটারে অবিলম্বে ‘জাতীয় মুক্তি সরকার’ গড়ে তোলার দাবি করা হয়েছে। মুবারক জমানার অবসানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পরে গত শনিবার থেকেই মিশরে সেনা অবসানের দাবিতে নতুন করে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়ে গেলে ২০১২-র মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে বলে বিক্ষোভকারীদের দাবি। সেই সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে বলেও তাঁরা দাবি করেছেন। বিক্ষোভকারীদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের রাশ সেনার হাতেই থেকে গিয়েছে। তাই প্রকৃত গণতন্ত্র না পাওয়া অবধি তাঁদের এই বিক্ষোভ চলবে বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। পতাকা, ব্যানার হাতে জমায়েতকারীরা অবিলম্বে ফিল্ড মার্শাল মহম্মদ হুসেন তান্তোইয়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন। মুবারকের জমানায় ২০ বছর দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন তান্তোই। পরে মুবারকের বিরুদ্ধে গণ বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় পদত্যাগ করেন তিনি। বর্তমানে এসসিএএফ-এর প্রধানের দায়িত্বে আছেন তিনি। |
তাহরির স্কোয়ারের সামনে। মঙ্গলবার রয়টার্সের ছবি। |
তাহরির স্ক্যোয়ারের সামনে দেখা গেল সেনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধে মানব প্রাচীর গড়ে তুলেছেন তাঁরা। আর তার পিছন দিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ রকমই এক হাসপাতালের চিকিৎসক জানালেন, এঁদের অধিকাংশই রবার বুলেট আর টিয়ার গ্যাসের শেল ফেটে আহত। শনিবার রাত থেকে অন্তত কয়েকশো মানুষ এখনও পর্যন্ত ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করেছেন বলে দাবি ওই চিকিৎসকের। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা যথেষ্ট আশঙ্কাজনক বলে জানান তিনি।
গত কয়েক দিনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সেনার সংঘর্ষে ৩৫ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু নিয়ে দেশবিদেশে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে এসসিএএফ। হোয়াইট হাউসের তরফে সেনা ও বিক্ষোভকারীকে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যাতে দুর্নীতি মুক্ত অবাধ নির্বাচন হয় সে দিকে এসসিএএফ-কে নজর রাখতে বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুন বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশের নাগরিক অধিকার যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, কাউন্সিলকে তা দেখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
অন্তবর্তী সরকারের ইস্তফায় স্বভাবতই আরও চাপের মুখে এসসিএএফ। তবে সরকারি টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাউন্সিলের এক সদস্য মোহসেন আল ফাঙ্গারি জানিয়েছেন, ২৮ নভেম্বরের নির্বাচন হওয়া নিয়ে তাঁরা অনড়। যে কোনও অবস্থাতেই নির্বাচন হবেই বলে তিনি দাবি করেন তিনি। পরিস্থিতির পর্যালোচনা করতে এসসিএএফের তরফে সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছে। দেশের সব থেকে বড় রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুড এই বৈঠকে যোগ দিতে রাজি হয়েছে। সেনার হাতে বিক্ষোভকারীদের নিহত হওয়ার ঘটনার পর্যালোচনা করতে আইন মন্ত্রককে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করার কথা বলেছে এসসিএএফ। দেশের কর্তৃত্বের রাশ সেনার হাতে থাকা নিয়ে সমালোচনা করছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাদের আশঙ্কা, মুবারক জমানার অবসান ঘটলেও দেশের পরিস্থিতি উন্নতি হয়নি। বরং কাউন্সিলের নাম নিয়ে একই ভাবে দেশের সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার চলছে।
সামরিক শাসন না প্রকৃত গণতন্ত্র, এখন সময়েরই হাতে মিশরের ভবিষ্যৎ। |