বেশ কিছু দিন ধরেই এলাকার চাষিদের থেকে সহায়ক মূল্যে ধান না কেনার অভিযোগ উঠছিল চালকল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার অন্য জেলা থেকে আসা ধানের বস্তা বোঝাই দু’টি ট্রাক ঢুকতে দেখে গলসির বড়মুড়িয়া গ্রামের ওই চালকলের মালিককে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় চাষিরা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। ট্রাক দু’টিকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বড়মুড়িয়া গ্রামের কাছে ওই চালকলে ঢোকে দু’টি ধানের বস্তা বোঝাই ট্রাক। একটিতে ৩৫০ ও অন্যটিতে ৪৫০ বস্তা ধান ছিল। চাষিরা তা দেখে চালকলে ছুটে আসেন। তাঁরা দাবি করেন, তাঁদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান না কিনে চালকলের মালিক প্রবীর নিয়োগী বাইরে থেকে ধান আনছেন। |
স্থানীয় চাষি রফিকুল হোসেনের অভিযোগ, “চালকলের গায়ে সরকারি দামে চাল কেনার ব্যানারে টাঙানো থাকলেও এক বস্তা চালও চাষিদের কাছ থেকে কেনা হয়নি।” আর এক চাষি আবু তাহেরের কথায়, ‘‘গ্রামে প্রায় ৮০০ চাষির কাছে অন্তত দশ হাজার বস্তা ধান জমে রয়েছে। বাজারে খরিফের নতুন ধান চলে এলে এই ধান বিক্রি করা মুশকিল হয়ে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতেও গ্রামের কাছের চালকল আমাদের থেকে না কিনে বাইরে থেকে চাল আনাচ্ছে।” নুরুল ইসলাম নামে এক চাষির দাবি, “ধান কেনার জন্য চালকলে যোগাযোগ করলে বলা হচ্ছে, বস্তা প্রতি আট কিলো ধান বাদ দিতে হবে। জমির দলিল, ভোটার পরিচয়পত্র দেখতে চেয়েও হেনস্থা করা হচ্ছে।” এ দিন ট্রাক আটকে বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় কংগ্রেস নেতা সিরাজুল হক মণ্ডল। তিনি বলেন, “প্রশাসনের কাছে এই চালকলের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
এ দিন আটক হওয়া ট্রাক দু’টির সঙ্গে যে চালান ছিল, তাতে দেখা গিয়েছে সেগুলি আসছিল উত্তর ২৪ পরগানার হাবড়া থেকে। যাওয়ার কথা আরামবাগে। কিন্তু কী ভাবে ট্রাক দু’টি গলসিতে চলে এল, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি চালকলের মালিক প্রবীরবাবু। তিনি বলেন, “ওই ট্রাক দু’টিতে মিনিকিট চাল রয়েছে। এই ধরনের চাল সরকারি দামে কেনার করার কথা নয়। তাই এই ধান আমি আনাতেই পারি।” চাষিদের কাছ থেকে ধান না কেনার অভিযোগ অবশ্য সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন তিনি। এ দিন ঘণ্টা তিনেক তাঁকে ঘেরাও করে রাখেন চাষিরা।
গলসি-২ যুগ্ম বিডিও বিকাশকুমার দত্ত বলেন, “ওই চালকলের বিরুদ্ধে চাল না কেনার অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত হবে। তবে ওই ধান তিনি অন্য জায়গা থেকে আনাতে পারেন কি না, তা এখনই বলতে পারব না।” তিনি জানান, আজ, বুধবার চালকল মালিক, চালকল সমিতির কর্তা ও চাষিদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা চালকল মালিক সমিতির সম্পাদক দেবনাথ মণ্ডল বলেন, “চালকল যে কোনও জায়গা থেকে ধান আনাতে পারে। এ ব্যাপারে কোনও বাধা নেই।” |