ফের চাষিদের বাধায় বন্ধ হয়ে গেল উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্তে প্রস্তাবিত সুসংহত চেকপোস্ট প্রকল্পের কাজ। সোমবার সকালে জনা পঞ্চাশেক চাষি স্থানীয় জয়ন্তীপুর বাজার থেকে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করে পিরোজপুর প্রকল্প এলাকায় যান। সেখানে তখন কাজ চলছিল। আন্দোলনের ফলে সেখানে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রসঙ্গত, অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণ নিয়ে গোলমালে প্রায় দু’মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকার পরে রবিবারই কাজ শুরু হয়।
গত ২৭ অগস্ট পেট্রাপোল বন্দরে সেন্ট্রাল ওয়্যার হাউস কর্পোরেশনের গোডাউনে এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। ১৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই চেকপোস্ট তৈরির কাজ ২০১৩ সালের জানুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু প্রকল্পের জন্য জমিদাতা চাষিরা ক্ষতিপূরণের চেক না পাওয়া-সহ আরও কিছু দাবি তুলে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পিরোজপুরে প্রকল্প এলাকায় কাজ বন্ধ করে দেন। ওই সব কৃষকদের তৈরি ‘পিরোজপুর-পেট্রাপোল সরকার অধিগৃহীত জমি আন্দোলন কমিটি’র আন্দোলনকে সমর্থন জানায় সিপিএমের ছয়ঘরিয়া আঞ্চলিক কৃষক সভা। বনগাঁ কৃষক সভার সহ সম্পাদক ও স্থানীয় সিপিএম নেতা গোবিন্দ মণ্ডল সেই সময় জানিয়েছিলেন, সব চাষিরা যতক্ষণ না ক্ষতিপূরণের চেক পাবেন ততক্ষণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে।
এই প্রকল্পের জন্য সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত যে সব চাষি এতদিন ক্ষতিপূরণ পাননি, গত ১৮ নভেম্বর বনগাঁ বিডিও অফিস থেকে তাঁদের ক্ষতিপূরণের চেক বিলি করা হয়। মোট ৮৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিকে চেক দেওয়া হয় বলে জানান বনগাঁর মহকুমাশাসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। তারপরে রবিবার থেকে কাজও শুরু হয়। |
এ দিন ফের কাজ বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে দুলাল হলদার, আশিস হালদার, সুকুমার হালদাররা বলেন, “১০৪ জন চাষি এখনও ক্ষতিপূরণের চেক পাননি। এঁদের মধ্যে আবার ১১ জনের শুনানিই হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা সকলে চেক না পাওয়া পর্যন্ত কাজে বাধা দেওয়া হবে।” পাশাপাশি তাঁরা কৃষি পেনশন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের একজনকে চাকরি, প্রকল্পের কাজে খেতমজুর ও ভাগচাষিদের শ্রমিক হিসাবে নেওয়া-সহ নানা দাবি পূরণ নিয়ে প্রশাসনের লিখিত আশ্বাস দাবি করেছেন।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রকল্পের কাজে অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণ পাননি এমন পরিবারের সংখ্যা ১৭। আর যে ১১ জন চাষির শুনানি হয়নি বলে আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, সেই সব চাষিদের গত ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমি সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা আসেননি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত সকলকেই চেক দিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে বার বার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পিছনে রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। তাঁর অভিযোগ, “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে সিপিএমের মদতে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ওরা উন্নয়নবিরোধী। সামনে পঞ্চয়েতে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে চাষিদের একাংশকে ভুল বুঝিয়ে ওরা হারানো জমি ফিরে পেতে চাইছে। তবে মানুষই এর জবাব দেবেন। ”
বিধায়কের অভিযোগের উত্তরে বনগাঁ কৃষক সভার সহ-সম্পাদক ও স্থানীয় সিপিএম নেতা গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, “এ সব অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। জমির ক্ষতিপূরণের দাবিতে যে সব চাষিরা আন্দোলন করছেন তাঁদের মধ্যে তৃণমূল-সহ সব রাজনৈতিক দলের মানুষই রয়েছেন। আমরা আগেও যা বলেছি। এখনও তাই বলছি। সবাই ক্ষতিপূরণের চেক পেয়ে গেলে কাজ করার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধাই থাকবে না।” |