আগে চলত গ্রামের রাস্তায়। পুলিশ ও প্রশাসনের উদাসনীতায় যন্ত্রচালিত লছিমন এখন বহরমপুরে শহরের রাস্তায় নিয়মিত পরিবহণ পরিষেবা। পরিণতিতে শহরে বেড়েছে যানজট। ছোটখাটো দুর্ঘটনা। আর অবশ্যই দূষণ।
প্রবল শব্দে ব্যস্ত বহরমপুরের রাস্তা কাঁপিয়ে লছিমন ছুটলেও পুলিশ ফিরেও তাকাচ্ছে না। পুরসভাও নির্বিকার। কেন? জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় ঘোষ বলেন, “বুঝতে পারছি লছিমন একটা সমস্যা। রাস্তায় যানজটেরও কারণ। কিন্তু সমস্যা কোথায় জানেন, সরকারি ভাবে ওই যান নিষিদ্ধ না হলে আটকাই কী করে?”
তার মানে যে কোনও আইন বিরুদ্ধ কাজে সরকারি নির্দেশ ছাড়া এগোন যায় না? স্পষ্ট উত্তর মেলেনি অজয়বাবুর কাছে। বেআইনি জেনেও পুলিশ তাই সরকারি নির্দেশের অপেক্ষায়। বহরমপুরের ট্র্যাফিক ইন্সপেক্টর অতুল মণ্ডল বলেন, “পুরসভা, প্রশাসন ও বহরমপুর থানার পুলিশ ও ট্র্যাফিক পুলিশ একযোগে কাজ করলে তবেই বেআইনি ওই যান চলাচল ঠেকানো সম্ভব।” তার মানে কি পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যে কোনও বোঝাপড়া নেই? |
এ ব্যাপারে পরিবহণ দফতরের ভূমিকা কী? কাগজপত্র না থাকায় মোটর ভেহিক্যালস অ্যাক্ট অনুযায়ীও তাদের শহরের পথে চলাচল বন্ধ করা যায়? ওই দফতরের এক কর্তা বলছেন, “আমাদের তো লছিমন সম্পর্কে কোনও ধারনাই নেই। কোউ কোনও অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শহর জুড়ে মোটর ভেহিক্যাল ইন্সপেক্টররা তাহলে কী করছেন? উত্তর মেলেনি। অতএব লছিমন চলছে।
বহরমপুর শহরে গত কয়েক বছরে নতুন কোনও রাস্তা তৈরি হয়নি। কিন্তু তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রিকশার দাপট। যার ফল ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বহরমপুরের মানুষের অভিযোগ, জনসাধারণের স্বার্থে পুর-এলাকায় লছিমন চলাচল অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত। পুর-কর্তৃপক্ষ যদি বেআইনি রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, তাহলে লছিমনের ক্ষেত্রে নয় কেন?
পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যর উত্তর, “পুর-এলাকায় লছিমন চলাচল আটকাতে পুলিশ ও প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।”
জেলার বিভিন্ন প্রান্তে গ্রামের রাস্তায় লছিমন নতুন নয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে শহরের রাস্তাতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। প্রশাসনের উদাসীনতায় তা এখন রাজ্য সড়ক এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বহরমপুর শহরে ঢুকে পড়েছে। ভাগীরথীর পশ্চিমপাড় লাগোয়া খাগড়া স্টেশন থেকে প্রতি দিন যাত্রী বোঝাই করে লছিমন বহরমপুর পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ছে। লোক তুলছে। তারপর ছুটছে গন্তব্যে। মুর্শিদাবাদের বাস মালিক সংগঠনের তরফে লছিমন নিয়ে প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছিল। বাস মালিক সংগঠনের পক্ষে তপন বক্সি বলেন, “জেলা জুড়ে বেআইনি ভাবে লছিমন চলছে। তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমরা দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়ে আসছি। ফল হয়নি। এ জন্য তাদের সাহস বেড়ে গিয়েছে। আগে গ্রামের রাস্তায় চললে এখন বহরমপুরে ঢুকে যানজট তীব্রতর করছে।” |