শান্তি পুরস্কারের দৌড়ে খুদে পাক সাহসিনী
জানত না ছুটির পরে স্কুলটা আর খুলবে কি না। মন খারাপ হত, যখন দেখত ছবির মতো সুন্দর ওদের উপত্যকায় তালিবান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। জঙ্গিদের ফতোয়ায় মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হওয়ার মুখে। অহরহ প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড, সাঁজোয়া হেলিকপ্টারের পাখার আওয়াজ আর বারুদগন্ধ। ও দেখত আর কষ্ট পেত ভেবে যে, দুনিয়ার একটা বড় অংশ ওদের এই সোয়াট উপত্যকার সব বাসিন্দাকেই জঙ্গি বলে মনে করে।
তার পর এক দিন ডায়েরিতে এই কথাগুলোই লিখতে শুরু করে এগারো বছরের মালালা ইউসুফজাই। দমবন্ধ তালিবানি শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঝরতে শুরু করে পাকিস্তানের সোয়াট উপত্যকার স্কুলছাত্রীর কলম থেকে। সেই বিদ্রোহকেই আজ কুর্নিশ করছে বিশ্ব। ২০১১ সালের ‘শিশুদের আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার’-এর জন্য মনোনয়ন পেয়েছে সে। ৪২টা দেশের ৯৩ জনের মধ্যে থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছে মালালা-সহ ৫ খুদে সাহসী চারটি মেয়ে ও একটি ছেলে। শেষ পর্যন্ত যে জিতবে, তার হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন শান্তির নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটু। খুশিতে ডগমগ মালালা বলেছে, “আরও তিন জন সাহসী মেয়ের সঙ্গে আমিও মনোনয়ন পেয়েছি এটা ভেবেই খুব ভাল লাগছে। এদের মধ্যে মাইকেলা নামে এক জন রয়েছে। নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও ও লড়াই করছে প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকারের জন্য।”
মালালা ইউসুফজাই
কখনও রাগ, কখনও দুঃখ। তালিবানি ফতোয়া সত্ত্বেও মহিলাদের শিক্ষার অধিকারের দাবিতে নিজের ডায়েরিতে নির্ভীক সওয়াল করেছিল মালালা। তার সেই ডায়েরিই এক দিন পৌঁছে যায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। আর দুঃসাহসী মালালা পৌঁছে যায় বিশ্বের দরবারে। সেই সাহসেরই স্বীকৃতি এই মনোনয়ন। মন উজাড় করে লিখতে লিখতে কোথায় যেন মালালা একাকার হয়ে যায় নাৎসি অত্যাচারের বিবরণ দিনলিপিতে লিখে যাওয়া দুই কিশোরী অ্যান ফ্রাঙ্ক আর রুটকা লাস্কিয়েরের সঙ্গে।
মালালার ডায়েরির শুরু ২০০৯-এর গোড়ার দিকে। ১৪ জানুয়ারি সে লিখেছিল, “হয়তো আর স্কুলে যাওয়া হবে না। প্রিন্সিপ্যাল শীতের ছুটি ঘোষণা করে দিলেন, কিন্তু বললেন না কবে আবার স্কুল খুলবে। এই প্রথম এমন হল।” ঠিক পরের দিনই মেয়েদের স্কুল যাওয়া নিষিদ্ধ করে দেয় তালিবান। বন্ধুদের সঙ্গে এই সব নিয়েই কথা হত মালালার। কখনও এফএমে ভেসে আসত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান-এর নেতা মোল্লা ফজলুল্লার গলা। সোয়াটবাসীকে ঘর ছেড়ে অন্যত্র না যাওয়ার ‘আদেশ’ দিতেন তিনি। কখনও আবার হানা দিত হেলিকপ্টার। ডায়েরিতে এমন নানা ‘দুঃস্বপ্নে’র বর্ণনা দিয়েছে মালালা। আর তাই আজ সে ভীষণ ভাবে চায়, সত্যাসত্য না জেনে তার এলাকার শান্তিপ্রিয় লোকগুলোকে ‘জঙ্গি’ বলা বন্ধ করুক বিশ্ব।
বন্দুকের নলকে উপেক্ষা করে মেয়েদের শিক্ষার অধিকারের জন্য লড়াই। এত সাহস পেলে কী করে? মালালা বলেছে, সোয়াট উপত্যকায় রোজ খুনোখুনি দেখতে দেখতেই মনটা বড় ধাক্কা খেয়েছিল তার। আর এখন ‘শিশুদের আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার’-এর জন্য মনোনয়ন পাওয়াটুকুই ওর সাহস দ্বিগুণ করে দিয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত পুরস্কারটা যদি না-ও আসে, ও দুঃখ পাবে না। কারণ ও বুঝে গিয়েছে, ওর লড়াইটা নেহাত ছোট নয়।
তাই মালালা স্বপ্ন দেখে আবার। এলাকার প্রান্তিক মহিলাদের জন্য একটা বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়তে চায় ও। চায় মেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়াক। “আমার লড়াই চলবে।” ওর দু’চোখে বিদ্যুৎ ঝলসে ওঠে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.