মহিলাদের জন্য বিশেষ লোকাল ট্রেনে উঠতে দেওয়ার দাবিতে অবরোধ করেছিলেন পুরুষ-যাত্রীরা। কিন্তু মহিলা-যাত্রীদের প্রতিরোধের সামনে পড়ে কিছু ক্ষণের মধ্যেই রণে ভঙ্গ দিতে হল অবরোধকারীদের। শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটে অশোকনগর স্টেশনে। ফেরার ট্রেনটিতে অবশ্য যথারীতি দেখা গিয়েছে পুরুষ-যাত্রীদের।
শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় শুধুমাত্র মহিলাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বছর দুয়েক আগে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করেছিলেন বিশেষ ট্রেন ‘মাতৃভূমি লোকাল’। কয়েক মাস পর থেকে ওই ট্রেনে পুরুষ-যাত্রীরাও উঠতে থাকেন। ট্রেনটি বনগাঁ থেকে ছাড়ে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। ফেরার সময়ে শিয়ালদহ থেকে ছাড়ে বিকেল সাড়ে ৫টায়। অফিস যাতায়াতের সময়ে বিশেষ ট্রেনটি ফাঁকা থাকায় অনেক পুরুষ-যাত্রীই ওঠেন। আরপিএফ-জিআরপি-র দাবি, পুরুষ-যাত্রীদের ঠেকাতে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। ধরপাকড় করা হয়। তবু পুরোপুরি সমস্যাটি মেটানো যাচ্ছে না। |
মহিলাদের বিশেষ ট্রেনে পুরুষ যাত্রীরা। শনিবার সন্ধ্যায় বারাসত স্টেশনে। পার্থসারথি নন্দীর তোলা ছবি। |
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিট নাগাদ ট্রেনটি অশোকনগরে স্টেশনে পৌঁছতেই শ’খানেক পুরুষ-যাত্রী বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। দাবি তোলেন, ওই ট্রেনে তাঁদের উঠতে দিতে হবে। পুলিশি ধরপাকড় চলবে না এবং ট্রেনে একটি সাধারণ কামরা জুড়তে হবে। হাবরা জিআরপি এবং অশোকনগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। এ ভাবে ট্রেন থেমে যাওয়ায় রাগে ফুঁসতে থাকেন মহিলা-যাত্রীরা। পুলিশ আসতে দেখে তাঁরা প্ল্যাটফর্মে নেমে আসেন। অবরোধকারীদের মহিলারা বলেন আপনারা কেন অন্যায় দাবি করছেন? মহিলাদের সুবিধার জন্য ট্রেন চালু করা হয়েছে। পুলিশ আইন মেনে ধরপাকড় করে ঠিকই করেছে। আপনারা সাধারণ ট্রেনে যাতায়াত করুন।
এ কথার পরেই পুরুষ যাত্রীদের সঙ্গে ওই মহিলাদের বচসা শুরু হয়ে যায়। পুলিশ মহিলাদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। যৌথ চাপের কাছে অবরোধকারীরা নতি স্বীকার করতে বাধ্য হন। অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। তার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী আজ জানিয়েছেন, অবরোধকারীদের দাবি কোনও মতেই মানা সম্ভব নয়।
ওই ট্রেনে পুরুষ-যাত্রীরা ওঠায় অসুবিধা হয় বলে অভিযোগ অনেক মহিলা-যাত্রীরই। ওই ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করেন মছলন্দপুরের সবিতা বালা। তিনি বলেন, “শিয়ালদহ যাওয়ার সময়ে ঠাকুরনগরের পর প্রতিটি স্টেশন থেকেই পুরুষ যাত্রীরা উঠতে থাকেন। আগে স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারতাম। কিন্তু এখন পুরুষ যাত্রীরা ট্রেনে ওঠায় ভিড় বাড়ে। তাঁরা কামরায় সিগারেটও খান।” হাবরার মৌসুমি সাহা কলকাতার একটি কলেজে পড়তে যান। তিনিও প্রতিদিন ওই ট্রেনে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, “ছেলেরা গেটের মুখে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে, ওঠানামা করতে সমস্যা হয়। অনেক সময়ে ট্রেন ছেড়ে দিতে হয়।” আর এক যাত্রী, বনগাঁর রিমলি দাঁ বলেন, “ফেরার সময়ে শিয়ালদহ থেকেই অনেক লোক উঠে পড়ে। কেউ কেউ নেশা করেও থাকে।”
মহিলাদের অভিযোগ যে ভিত্তিহীন নয়, তা বোঝা গেল এ দিন সন্ধ্যায় শিয়ালদহ থেকে ছাড়া ‘মাতৃভূমি লোকাল’ দেখে। সন্ধ্যা সওয়া ৬টায় ট্রেনটি বারাসতে ঢোকে। প্রতিটি কামরার দরজার সামনে দেখা গেল পুরুষ-যাত্রীরা দাঁড়িয়ে। ভিড় বাড়ে হাবরাতে। সকালের ওই ঘটনার পরেও সন্ধ্যায় ওই ট্রেনে পুরুষ-যাত্রীদের ওঠা আটকানো যায়নি। রেল পুলিশের সাফাই, পুলিশকর্মীর সংখ্যা পর্যাপ্ত না হওয়ায় প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে তল্লাশি চালানো সম্ভব নয়। কয়েক দিন আগে মছলন্দপুরে তল্লাশি চালানোর সময়ে দুই যুবক চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালান। তাই তল্লাশি সাবধানে চালাতে হয়। তবু নিয়মিত ওই ট্রেনে টহল চলে। অক্টোবর মাসে ওই ট্রেন থেকে ২৯২ জন পুরুষ-যাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। |