উত্তর ২৪ পরগনা
কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি, বহাল তবিয়তে ভেড়ি-রাজ
কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে উত্তর ২৪ পরগনার মাছ চাষ। বেআইনি ব্যবসার কালো টাকার বখরা নিয়ে ভেড়ি এলাকায় রাজনৈতিক সংঘর্ষ অব্যাহত। আগে যা ছিল মূলত সিপিএম-তৃণমূলের লড়াই, ‘পরিবর্তনের’ পরে তা অনেক ক্ষেত্রেই দাঁড়িয়েছে শাসক দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে।’
জেলা মৎস্য আধিকারিক (লাইসেন্স) সৌমেন ভট্টাচার্য বলেন, “জেলার বেশিরভাগ মৎস্যচাষিই প্রয়োজনীয় লাইসেন্স (ফিস প্রডিউসার লাইসেন্স) নেন না। এ জন্য বার্ষিক ৬ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে মৎস্য দফতরের। সরকারের কাছে বহু বার অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি।” রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী আবু হেনার বক্তব্য, “এই জেলা থেকে প্রচুর টাকার চিংড়ি মাছ বিদেশে রফতানি হয়। রফতানি যাঁরা করেন, তাঁদের অনেকেরই লাইসেন্স নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। সে ব্যাপারটা দেখা হচ্ছে। বিপুল পরিমাণে রাজস্ব ক্ষতির বিষয়টিও দেখা হবে।” মাছ উৎপাদনে রাজ্যে প্রথম সারিতেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। গত বছর জেলায় মোট মাছ চাষ হয়েছে ২ লক্ষ ৭ হাজার মেট্রিক টন, যার প্রায় ৮. ৫ শতাংশই বাগদা চিংড়ি। বাজারে ওই চিংড়ির দাম প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। বেশ কয়েক কোটি টাকার বাগদা চিংড়ি জাপান ও আমেরিকায় রফতানিও হয়েছে।
সরকারি নিয়ম হল, ৪০ বিঘের কম জায়গায় মিষ্টি জলে মাছ চাষ করলে লাইসেন্স লাগে না। তবে, নোনা ও ময়লা জলে মাছ চাষ করলে মৎস্য দফতরের লাইসেন্স নিতে হয়। লাইসেন্স-এর জন্য টাকা লাগে না। তবে রাজস্ব বাবদ বছরে দু’টি ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি ১৭ টাকা এবং ৬৫ টাকা দিতে হয়। এই হিসেবে ২০১০ সালে রাজস্ব আদায় হয়েছে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা। চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত আদায়ের অঙ্ক সাড়ে ৪ লক্ষ। অথচ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, রাজস্ব অনেক বেশি হওয়া উচিত ছিল। কারণ, জেলার ২১টির মধ্যে ১২টি ব্লকের প্রায় দেড় লক্ষ বিঘে নোনা জমি এবং সাড়ে ১৩ হাজার বিঘে ময়লা জলে মাছ চাষ হয় বলে খবর রয়েছে মৎস্য দফতরের কাছে। সেই অনুপাতে রাজস্ব হওয়ার কথা বার্ষিক ৬ কোটি টাকা। মৎস্য দফতরের এক কর্তা জানান, জেলায় কম পক্ষে ৫ হাজার লাইসেন্স থাকার কথা। অথচ, রয়েছে মাত্র ২০২টি।
মৎস্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী, সম্ভাব্য ৬ কোটি টাকা রাজস্বের মধ্যে ১ কোটি টাকা মেলেনি শুধুমাত্র শাসন-খড়িবাড়ি এলাকা থেকেই। ওই এলাকায় ৫,৬৭০ একর ভেড়িতে মাছ চাষ হয়। কিন্তু মাত্র ৫০০ একর জমিতে মাছ চাষের লাইসেন্স আছে। রাজস্ব মেলে ৫ লক্ষ টাকার মতো। পুলিশ সূত্রের খবর, রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া বিপুল কালো টাকার লোভেই শাসন-খড়িবাড়ি দখলের জন্য রাজনৈতিক সংঘর্ষ অব্যাহত। এই এলাকার বেশিরভাগ ভেড়ি সরকারি কিংবা লিজে চলছে। কিন্তু সেই ভেড়িগুলির কর্তৃত্ব পঞ্চায়েত বা স্থানীয় নেতাদের হাতে। যখন যে দলের ক্ষমতায় থেকেছে, নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবৈধ ভাবে মদত দিয়েছে ব্যবসায়। আগে এলাকা সিপিএমের দখলে ছিল। মজিদ মাস্টারের মতো নেতার উত্থানও ভেড়ি এলাকা রাজনীতির মধ্যে দিয়েই। একের পর এক গণ্ডগোল আর রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর এখন অবশ্য তৃণমূলের প্রভাব-প্রতিপত্তি বেড়েছে। কিন্তু ভেড়ি এলাকার ‘চরিত্র’ বদল হয়নি। লভ্যাংশের বখরার লোভে টক্কর চলছেই।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিতাভ বসুর দাবি, “আগে মাছ-চাষিরা কিছু টাকা আমাদের দলীয় তহবিলে চাঁদা দিতেন। কিন্তু এখন সে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লাইসেন্স না থাকায় রাজস্ব বাবদ ক্ষতির বিষয়টি বর্তমান রাজ্য সরকার বুঝবে।” তৃণমূলকে উদ্দেশ্য করে তাঁর কটাক্ষ, “আর এখন তো এ সব নিয়ে ওদের নিজেদের মধ্যেই গণ্ডগোল বেঁধেছে।” বসিরহাটে তৃণমূল সাংসদ নুরুল ইসলাম অবশ্য বলেন, “কে কী করছে, তার সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে মাছচাষিদের লাইসেন্স না থাকা এবং রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না এত দিন? মৎস্য দফতরের যুক্তি, লাইসেন্স না থাকলে আগে থানায় এফআইআর করা হত। কিন্তু রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ভেড়ি মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে ২০০৪ সালের পর থেকে অভিযোগ জানানোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাছ চাষের ‘ঘোলা জল’ স্বচ্ছ হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই এখনও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.