মাওবাদী-প্রভাবিত জেলাগুলির জন্য কেন্দ্রের বিশেষ প্রকল্প এবং বাড়তি আর্থিক সাহায্যের আওতায় পশ্চিম মেদিনীপুরের পরে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াও আসতে চলেছে। শনিবার জঙ্গলমহল সফরে এসে এ কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। তিনি বলেন, “আপাতত ৬০টি জেলা এই বিশেষ প্রকল্পে রয়েছে। এই জেলাগুলি ৩০ কোটি টাকা করে বিশেষ সাহায্য পায়। আরও ১৮টি জেলাকে বিশেষ সাহায্যের আওতায় আনা হবে। এর মধ্যে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াও রয়েছে।” মাওবাদী প্রভাবিত প্রতিটি পঞ্চায়েতে উন্নয়ন-কাজে গতি আনতে ‘পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিক’ ও জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করা হবে এবং এলাকার যুবক-যুবতীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মতে, মাওবাদী সমস্যার মোকাবিলায় ‘উন্নয়ন’ এবং ধারাবাহিক ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি’র উপরেই জোর দিতে হবে। এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে বিভিন্ন গ্রাম ঘোরার ফাঁকে এবং সন্ধ্যায় মেদিনীপুর সার্কিটহাউসে সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য, “বন্দুকের মোকাবিলা শুধু বন্দুক দিয়ে হয় না। খুন-সন্ত্রাস-নাশকতার মতো ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর প্রয়োজন ঠিকই। তবে, সমস্যার গভীরে রয়েছে অনুন্নয়ন এবং সরকারের সঙ্গে এলাকার আদিবাসীদের দূরত্ব।”
মন্ত্রীর মন্তব্য, “গত ৫০ বছরে এই সব এলাকায় ঠিকঠাক উন্নয়নের কাজ না হওয়ায় আদিবাসীদের মধ্যে সরকারের প্রতি কিছুটা বিশ্বাসহীনতা তৈরি হয়েছে।” পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, “মাওবাদীরাও সত্যকে বিকৃত করে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। এলাকায় সব রাজনৈতিক দলেরই ধারাবাহিক কর্মসূচি সংগঠিত করা দরকার।” |
দুয়ারে মন্ত্রী। আবাস খাসজঙ্গলে ইন্দিরা আবাস যোজনায়
তৈরি ঘরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ |
শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ কলকাতা থেকে মেদিনীপুরে পৌঁছন জয়রাম। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব ভিনিল কৃষ্ণ (যিনি কিছুদিন আগেই এই এলাকা ঘুরে গিয়েছেন)। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শিশির অধিকারী, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন সচিব বরুণকুমার রায়, জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত, পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী-সহ প্রশাসনের অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলমহল সফরে বেরোন জয়রাম। মেদিনীপুর শহর লাগোয়া শিরোমণি গ্রাম পঞ্চায়েতের আবাস-খাসজঙ্গল এলাকায় গরিবদের জন্য ইন্দিরা আবাস যোজনায় তৈরি কয়েকটি বাড়ি দেখেন তিনি। কিছু দূরে ভালুকখুনিয়ায় সজলধারা প্রকল্পে পানীয় জল সরবরাহের কাজ দেখেন। শিরোমণি পঞ্চায়েত অফিসে পঞ্চায়েতে স্বেচ্ছাসেবকদের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরেও কিছু ক্ষণ ছিলেন মন্ত্রী। এর পর শালবনির গোবরুতে ১০০ দিনের প্রকল্পে তৈরি একটি বাগান ঘুরে দেখেন। বাগানের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় বনসুরক্ষা কমিটির সদস্য চম্পা সিংহ, পূর্ণিমা সিংহদের কাছে মজুরি নিয়েও জানতে চান। স্থানীয় লোধাপল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে লোধা-শবরদের জন্য তৈরি বাড়িও দেখেন। সেখানেই লোধা-শবর স্কুলে যান। পিরাকাটার নতুন মোরাম রাস্তা দেখে মন্ত্রী পৌঁছন ভীমপুরে। এখানে তৈরি হওয়া একটি কমিউনিটি হল দেখেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জয়রামকে জানান, উপযুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সেচের অভাব রয়েছে। সেখান থেকে জঙ্গলপথে ঝিটকা হয়ে লালগড়ের ধরমপুর অঞ্চলের জিরাপাড়ায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। ধরমপুর-ধেড়ুয়ায় মাত্র সাড়ে তিন বছর আগে তৈরি রাস্তা বেহাল দেখে জেলার এক ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
মেদিনীপুর সার্কিটহাউসে সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও
করেন। সকালে সার্কিটহাউসে পৌঁছনোর পরে মন্ত্রীর হাতে জেলা প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে জেলার জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ, কতটা কী কাজ হয়েছে তার তথ্য সংবলিত ২৭ পাতার একটি রিপোর্ট তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেটি খুঁটিয়ে পড়েন মন্ত্রী। সন্ধ্যার বৈঠকেও জেলা
প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে সে নিয়ে খুঁটিনাটি জানতে চান। |