পার্থ-সৌম্যজিৎ হত্যা
কী করে এমন কাজ করল জাগরী, প্রশ্ন স্বচ্ছতোয়ার
ক মা চার বছরের ছেলের হাত ধরে বেরিয়ে এসেছেন জঙ্গলের জীবন ছেড়ে।
আর এক মা বত্রিশ বছরের ছেলের শোকে আজও ডুকরে কেঁদে উঠছেন।
এক স্ত্রী আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্বামীকে পাশে নিয়ে বাঁচতে চান।
আর এক স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মুহূর্তগুলো ভোলার চেষ্টায় মনোবিদের শরণাপন্ন।
এক মা, জাগরী বাস্কে। তাঁর ছেলে বাহাদুরের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে মাওবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ফিরে আসতে চাইছেন স্বাভাবিক জীবনে।
অন্য মা, সুমিতা বসু। গত তিন দিন খবরের কাগজ পড়ে, টেলিভিশন দেখে জানতে পেরেছেন তাঁর ছেলে সৌম্যজিতের হত্যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জাগরীর নাম। প্রশ্ন তুলেছেন, “ওরও তো চার বছরের ছেলে রয়েছে। কোল থেকে ছেলে চলে গেলে মায়ের মনের কী অবস্থা হয়, সেটা কি ও বোঝে না? আমার ছেলেকে মারার সময়ে ওর হাত এক বারের জন্যও কাঁপেনি? তখন তো ওর কোলেও ছেলে চলে এসেছে!”
এক স্ত্রী, জাগরী বাস্কে। স্বামী রাজারামের সঙ্গে নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছেন।
অন্য স্ত্রী, স্বচ্ছতোয়া বসু। অহরহ তাড়া করে বেড়ানো সৌম্যজিতের স্মৃতি ভোলার জন্য মনোবিদের সঙ্গে কথা বলছেন। একমাত্র ছেলে রোদ্দুরের মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ছেন। জাগরীর খবর জেনে তাঁর প্রশ্ন, “যে নিজে সন্তানের জন্ম দেয়, সে কী করে হত্যা করে? এই মানসিক দ্বিচারিতা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।”
২৭ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার আর্জি জানিয়ে এসেছিলেন স্বচ্ছতোয়া। ছ’মাসে ডাক আসেনি। কাগজে, টিভিতে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে জাগরী-রাজারাম ও তাঁদের ছেলেকে দেখে রোদ্দুরের মায়ের বক্তব্য, “আমাদের ভোটে জিতে উনি (মমতা) আজ মুখ্যমন্ত্রী। কোনও অপরাধ না করে আমার স্বামীকে খুন হতে হল। অথচ আমরাই ব্রাত্য হয়ে গেলাম।”
পার্থ বিশ্বাস সৌম্যজিৎ বসু জাগরী বাস্কে
আরও এক জন স্ত্রী রয়েছেন। সৌম্যজিতের সঙ্গেই নিহত পুলিশ ইনস্পেক্টর পার্থ বিশ্বাসের স্ত্রী বর্ণালি। শনিবার তাঁর সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল। জাগরীর আত্মসমর্পণ, মহাকরণের অলিন্দে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি কিছুতেই আর বিচলিত হন না বর্ণালি। শুধু বলেন, “অনেককে বিশ্বাস করেছি। এখন আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কোনও কথা বলতে চাই না। এখনও আপনাদের কিছু বলার মতো সময় আসেনি।”
২০১০-এর ২২ অক্টোবর পার্থ-সৌম্যজিতের খবর মিলেছিল শেষ বার। দুই বন্ধু বেড়াতে গিয়েছিলেন অযোধ্যা পাহাড়ে। পুলিশের কর্তা-ব্যক্তিরা বারবার বলে এসেছেন, তাঁদের কাছে খবর আছে, দু’জনেই বেঁচে রয়েছেন।
সেই কথা বিশ্বাস করেন বর্ণালি। কিন্তু মে মাসে অযোধ্যা পাহাড়ের কোল থেকে দুই ব্যক্তির দেহাবশেষ তুলে এনে ডিএনএ পরীক্ষা করে পুলিশ জানায়, দেহ দু’টি পার্থ ও সৌম্যজিতের। এ বারে সেটা বিশ্বাস করতে চাননি বর্ণালি।
রাজ্য পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, জাগরী তাঁদের কাছে পার্থ-সৌম্যজিৎ হত্যার কথা কবুল করেছেন। জাগরীর বক্তব্য, ২০১০ সালের ২২ অক্টোবর রাতেই মেরে ফেলা হয়েছিল ওই দুই যুবককে। মাওবাদীদের সেই স্কোয়াডে জাগরী এবং রাজারামও ছিলেন। সমস্ত ঘটনাই তাঁদের সামনে ঘটেছিল। পুলিশ অফিসার হিসেবে পার্থকে যে তাঁরা আগে থেকেই চিনতেন, তা-ও জানিয়েছেন জাগরী। তবে সৌম্যজিতের পরিচয় নিয়ে সংশয় ছিল। সব কিছু জানার পরেও তাই রাতে সৌম্যজিতের বাড়িতে ফোন করে তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিল মাওবাদীরা।
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, জাগরী জানিয়েছেন, সৌম্যজিতকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পার্থ তাদের অনুরোধ করেন। তাঁকে ছাড়া হবে কি না, তা নিয়ে বিস্তর তর্কাতর্কি হয়েছিল দলের মধ্যে। শেষে দুই বন্ধুকে খুন করে একটি গর্তের ভিতরে পুঁতে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে আরও দু’টি গর্ত করা হয়। যে মোটরবাইকে করে পার্থরা ঘুরতে গিয়েছিলেন, সেটি একটি গর্তে এবং তাঁদের ঘড়ি, আংটি-সহ অন্যান্য সামগ্রী আর একটি গর্তে পুঁতে দেওয়া হয়। জায়গাটা ছিল, অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে ধানছাটানি গ্রাম। পরে পুলিশ সেখান থেকেই দুই বন্ধুর দেহাবশেষ উদ্ধার করে।
সৌম্যজিতের মা সুমিতাদেবী শনিবার বলেন, “জানি না কী বিচার হবে। বিচার শেষ হওয়া পর্যন্ত আমি হয়তো বেঁচে থাকব না। হত্যার বদলা হত্যা হোক, সেটাও আমি চাই না। একটা মেয়ে (জাগরী) স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইছে। সেটা ভাল। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম, আমার কষ্টটাও সরকার বুঝবে। একটু সান্ত্বনা ছাড়া আর তো কিছু চাইনি।”
৬৪ বছরের সন্তানহারা মায়ের আর একটি আবেদন: স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পরে জাগরী বরং এক বার তাঁর বাড়িতে ঘুরে যাক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.