লাইনে ফাটল, স্ত্রী-র শাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনা রুখলেন যুবক
ক যুবকের তৎপরতায় বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেল ডাউন পুরী-নয়াদিল্লি পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস।
শনিবার কাকভোরে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার বাখরাবাদ স্টেশনের কাছে রেললাইনে ফাটল দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দা বেণু প্রধান। তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে স্ত্রী-র লাল কাপড় এনে তাতে সার্চলাইট ফেলে লাইন ধরে ছুটতে আরম্ভ করেন বেণুবাবু। সিগন্যাল সবুজ থাকায় প্রচণ্ড গতিতে খড়্গপুরের দিকে আসছিল ডাউন পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস। কিন্তু চালক লাল কাপড়ের বিপদ-সঙ্কেত বুঝতে পেরে ব্রেক কষেন। ট্রেনের কিছুটা অংশ অবশ্য ফাটল পেরিয়ে গিয়ে থামে। নেমে আসেন চালক এবং গার্ড। ততক্ষণে ছুটে আসেন স্টেশন-মাস্টারও। বেণুুবাবু তাঁদের ফাটলের অংশটি দেখান। একটি পাতের থেকে আরেকটি পাত প্রায় ৬ ইঞ্চি নীচে নেমে গিয়েছে বলে দেখা যায়। রেলের লোকজন বুঝতে পারেন, বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন ওই যুবক।

বেণু প্রধান।
বাখরাবাদের স্টেশন মাস্টার হরিলাল মুর্মু বলেন, “বেণুবাবুর জন্যই বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলেন ট্রেনযাত্রীরা। কয়েক মাস আগেও ওই পরিবারেরই এক জনের তৎপরতায় একই ভাবে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল ট্রেন।” চাষাবাদ ও দিনমজুরি করে সংসার চলে বছর বত্রিশের বেণুবাবুর। তিনি জানান, গত অগস্টেও ওই স্টেশনের কাছে লাইনে ফাটল দেখা গিয়েছিল। সে সময়ে তাঁর দাদা ভানুভূষণ সবাইকে সতর্ক করেছিলেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “দুই ভাইকে কোনও ভাবে পুরস্কৃত করা কিংবা সংবর্ধনা জানানো যায় কি না ভাবা হচ্ছে।”
সৌমিত্রবাবুই জানান, খবর পেয়েই খড়্গপুর থেকে ঘটনাস্থলে যান রেলের পদস্থ আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়রেরা। সকাল ৬টার মধ্যে ভাঙা লাইন দু’টি জোড়া লাগিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। তবে ওই অংশের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ৩০ কিমির চেয়ে বেশি গতিতে ট্রেন না চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শীতের সময়ে তাপমাত্রার তারতম্যেই লাইনে ফাটল ধরেছিল বলে মনে করছেন রেলের কর্তারা। খড়্গপুরের ডিআরএম রাজীবকুমার কুলশ্রেষ্ঠ বলেন, “শীতকালে ভোররাতে এমনিতে তাপমাত্রা কম থাকে। কিন্তু ট্রেন যাওয়ায় রেললাইনের তাপমাত্রা বাড়ে। এই তারতম্যের জন্য অনেক সময় লাইন ফেটে যায়। বাখরাবাদে তেমনটাই হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
লাইনে ফাটল।
বাখরাবাদ স্টেশনের কাছেই বাড়ি বেণু প্রধানের। শনিবার ভোর ৩টে ৫০ নাগাদ জোরালো শব্দে ঘুম ভেঙে চমকে ওঠেন তিনি। তখনই ডাউন লাইনে যশোবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস গিয়েছে। বেণুবাবুর কথায়, “শব্দ শুনে সার্চলাইট নিয়ে বাড়ি থেকে ছুটে যাই। প্ল্যাটফর্ম পেরিয়ে দেড়শো মিটার দূরে লাইনে একটা জায়গা ভেঙে রয়েছে দেখতে পাই। যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস সেই জায়গাটা পেরোনোর সময়েই শব্দ হয়েছিল বোধহয়।” সামান্য পরেই ওখান দিয়ে যাওয়ার কথা ডাউন পুরুষোত্তম এক্সপ্রেসের। সিগন্যালে সবুজ আলো দেখে সময় নষ্ট করেননি বেণুুবাবু। তিনি বলেন, “ছুটে বাড়ি থেকে স্ত্রীর একটা লাল শাড়ি নিয়ে ফের স্টেশনে যাই। লাইনের উপর দিয়ে ছুটতে ছুটতে কাপড়ে সার্চ লাইট দিয়ে চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করি।” চালক তা দেখেই ‘ব্রেক’ কষেন।

— নিজস্ব চিত্র


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.