রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
‘একে একে নিভিছে দেউটি।’
যত সময় যাচ্ছে, তত স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটছে এক-একটা করে। পাঁচ পয়েন্ট তো আসছেই না, তিন-ও প্রায় যায়-যায়। থাকল পড়ে এক। কিন্তু তাতে সম্মান বাঁচবে কতটুকু?
সোজাসাপ্টা তথ্যে আসা যাক। সরাসরি ফয়সালা দূর অস্ত্। মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট ঘরে তুলতেই বাংলার চাই সাত উইকেট। হাতের মূলধন? মাত্র ১৫২ রান। সেটাও কি না এমন একটা দলের বিরুদ্ধে, যারা আগের ম্যাচেই অলআউট হয়েছে মাত্র ৬৩ রানে! হেরেছিল ইনিংসে।
কিন্তু বরোদা আর বাংলায় যে বড় তফাত। ইরফান পাঠানরা যা আধবেলায় করে দেখান, রণদেব বসু-অশোক দিন্দারা তার তিন ভাগের এক ভাগ দেড় দিনেও পারেন না! সারাদিন খাটাখাটনি করে কপালে জোটে দুটো উইকেট! খরচ করেন শ’য়ে-শ’য়ে রান। পড়ন্ত বিকেলে ম্যাচ দেখতে এসে সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়াকে বলে যেতে হয়, “ভাল পেসার, স্পিনার দু’টোরই অভাব আছে আমাদের। বিশেষ করে স্পিনার।”
প্রেসিডেন্টের হতাশাটা স্বাভাবিক। এই টিমের বোলিংয়ে না আছে ধার, না ধারাবাহিকতা। না দায়দায়িত্ব। ‘রণ-হুঙ্কার’-এর স্মৃতিতে ধুলো জমছে। গত বছর থেকে রণদেবের উইকেটের সেনসেক্স সেই যে পড়েছে, বছর ঘুরেও উঠল না। আউটসুইংয়ে সেই বিষ নেই। সতেরো ওভার বল করেও উইকেট নেই। অথচ এই রণ বছর কয়েক আগেও নিয়ম করে চার-পাঁচটা উইকেট তুলতেন। হল কী তাঁর?
এবং অশোক দিন্দা! ধারাবাহিকতা শব্দটাই যিনি সম্ভবত নিজের পেস বোলিং অভিধান থেকে মুছে ফেলেছেন। এক ম্যাচে চার উইকেট, তো পরের ম্যাচে সাকুল্যে একটা! তৃতীয় পেসার সামি আহমেদ মন্দের ভাল। গতি আছে। সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের মরা পিচ থেকেও বাউন্স তুলতে পারেন। উইকেটও পান খানদুয়েক। কিন্তু একটা ‘শিবশঙ্কর পাল’ হয়ে উঠতেও তাঁর সময় লাগবে। আর স্পিন? ইরেশ সাক্সেনাদের (০-৪৮) দেখার পরে ভাবতে অবাক লাগতে পারে, এই বাংলাতেই একজন উৎপল চট্টোপাধ্যায় জন্মেছিলেন!
বাংলা টিম ম্যানেজমেন্ট আবার সল্টলেক মাঠের পিচ নিয়ে বড়ই অসন্তুষ্ট। ক্ষোভ, তিন পেসার খেলানোর ছক ‘ফ্লপ’ নাকি উইকেটের জন্য। উইকেট যে পাটা তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তা হলে পাল্টা প্রশ্ন ওঠে, মধ্যপ্রদেশের বোলাররা দশটা উইকেট তুললেন কী ভাবে? সিএবি কর্তারাই প্রশ্নটা তুলছেন। মনোজের অধিনায়কত্ব নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। বেহাল দশা কী ভাবে সামলানো যায়, তা নিয়ে মাঠেই বাংলার টিম মিটিং বসছে। কিন্তু তা শেষ হয়ে যাচ্ছে সেখানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নামের একজন প্রাক্তন জাতীয় অধিনায়ক পৌঁছনোর আগেই! আশ্চর্যের নয়?
দুঃখ আর যন্ত্রণার চিত্রনাট্যে আরও আশ্চর্য হওয়ার উপকরণ চাই? মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসা জনা পঞ্চাশেক দর্শককে ধরা যাক। বিপক্ষের মণীশ মিশ্রের সেঞ্চুরিতে প্রবল হাততালি দিচ্ছেন! অটোগ্রাফের খাতা তাড়া করছে দিনের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিকারী নমন ওঝাকে! নমন ড্রেসিংরুমে, কিন্তু ক্রিজে রবিবার থাকবেন মণীশ। সঙ্গে আব্বাস আলি, যিনি আবার প্রবাদপ্রতিম ক্রিকেটার মুস্তাক আলির নাতি। পুণে ওয়ারিয়র্সের মণীশ যদি এ দিন বাইশ গজে টি-টোয়েন্টির মেজাজে থাকেন, তো আব্বাস মন দিলেন স্ট্রোকের ছবি আঁকতে। সময় আছে অনেক...পুরো একটা দিন। কপাল ছাড়া আর কে এখন বাঁচাবে বাংলাকে ?
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলা ৪৯৬, মধ্যপ্রদেশ ৩৪৪-৩ (নমন ১২৭, মনীশ ১৩০ ব্যাটিং, সামি ২-৮০, দিন্দা ১-৯০, রণ ০-৬০)। |