কর্তাদের নিষেধাজ্ঞায় পেনরা চুপ
টেনশন তাড়াতে আজ দুই কোচের দুই দাওয়াই
খনও বাঁশি নিয়ে মাঠে নামেন না ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। মুখে একটা অদ্ভুত শিস দিয়ে খেলা থামিয়ে দেন। রকম এক ‘বাঁশিতে’ খেলা থামানোর পর চেনা গেল ভদ্রলোককে। জেমস মর্গ্যান ইস্টবেঙ্গল কোচের ছেলে। ডার্বির উন্মাদনার গল্প বাবার মুখে শুনে চাক্ষুস করতে এসেছেন। নেমে পড়েছেন সটান যুবভারতীতেই। যেখানে আজ রবিবার সন্ধ্যায় ধুন্ধুমার যুদ্ধ।
সুব্রত ভট্টাচার্যের অনুশীলনে অবশ্য রকম ‘অনুপ্রবেশের’ গল্পই নেই। গলায় সেই লাল ‘পয়া’ বাঁশি। জার্সির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে। সেটা বাজার পর তাঁর চোখ ঘুরল মাঠের চার দিকে। লক্ষ্য টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা। মাঠের মধ্য থেকে তাদের গ্যালারিতে পাঠিয়ে আবার মাঠে সুব্রত। কখনও ব্যারেটোর কাঁধে হাত, কখনও রাকেশ মাসিকে ডেকে নিয়ে স্ট্র্যাটেজি বুঝিয়ে দেওয়া।
যুবভারতীতে লক্ষ দর্শকের সামনে খেলতে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে দুই প্রধানের দুই হেড মাস্টারের কথাবার্তায়, আচার -আচরণে সাদৃশ্যের চেয়ে বৈসাদৃশ্যই যেন বেশি। টেনশন কাটাতে দু’জনেই হাঁটছেন দু’দিকে। ম্যাচের আগের দিন পরে থাকা জার্সির মতোই। মর্গ্যানের রং নীল। সুব্রত - লাল।
দু’টো ব্যাপারে মর্গ্যান এবং সুব্রত শুধু একই রাস্তায়।
তা হল,
অধিনায়ক বাদে বাকি ফুটবলারের কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন দু’জনেই।
এই ম্যাচ জিততে মরিয়া দু’জনেই।
“ফুটবলার জীবন থেকে এই ম্যাচের সময় টেনশনে ভুগি, এ বারও ভুগছি। এই ম্যাচে টেনশনে ভোগে না রকম বাঙালি কেউ আছে? এই ম্যাচ জিতলে, পরে অন্য ম্যাচ হারলেও কেউ কিছু বলবে না,” অকপটেই বলে দেন মোহন টিডি। তার কিছুক্ষণ আগে মর্গ্যানের মন্তব্য, “আমার কোনও টেনশন নেই। ডার্বির গুরুত্ব আলাদা। সমর্থকরা জিতলে বেশি আনন্দ পায়। আমার কাছে এটা আর একটা তিন পয়েন্টের ম্যাচ। জিতলে লিগও জিতব না। হারলেও ছিটকে যাব না।”
অস্ত্রে শান: মর্গ্যানের প্র্যাক্টিসে পেন -গাও। ছবি: উৎপল সরকার
উনিশ মাস এই ডার্বি জেতেনি মোহনবাগান। ছয় বছর পর সেই দলের কোচিংয়ের দায়িত্বে ফিরেছেন সুব্রত। ফলে প্রত্যাশার চাপটা কয়েক গুণ বেশি মোহন -টিডির উপর। সুব্রত তাঁবু ছেড়ে বেরনোর সময় দ্বিগুণ চিৎকার সেটা আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। সুব্রত -প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন জুটির কাছেও আজকের ম্যাচ অগ্নিপরীক্ষা। টিঁকে থাকার, দেখিয়ে দেওয়ার। ইস্টবেঙ্গলকে ষোলো মাস কোচিং করানো ট্রেভর মর্গ্যানের অবশ্য সবের বালাই নেই। তাঁর চাপও কম। রকম পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘ভাগ্যের সহায়তা’ বিশেষনে তীব্র আপত্তি রয়েছে সুব্রতর।
সুব্রত তাঁর কাছে ভাগ্য পরীক্ষা করান, খবরের কাগজে প্রায়ই রকম বিজ্ঞাপন বেরোয় এক জ্যোতিষীর নামে। তাকে গুরুত্ব না দিয়ে সুব্রত দিন বলে দিলেন, “ভাগ্যে বিশ্বাস করি না। কর্ম না করলে কোনও ভাগ্যই কাউকে সাফল্য দেয় না। আমি সৎ কর্মে বিশ্বাস করি।” যুবভারতীতে সকালে গেট না খোলায় টপকে ঢুকতে হয়েছিল কিছু লাল -হলুদ ফুটবলারকে। সেই ঘটনার পরও মর্গ্যান ভাগ্যের উপর বিশ্বাস রাখছেন। “ভাগ্য তো একটা ফ্যাক্টরই। সেটা মাঠে দরকার হয় কোচেদের। আমার ছেলে লাকি কি না সেটা বুঝতে পারব কাল ম্যাচের পর,” সরাসরি বলে দেন লাল -হলুদ কোচ।
ইস্টবেঙ্গল অনুশীলনে টিম গেমের উপর প্রাধান্য বেশি। সামান্য ধোঁয়াশা ছড়াতে ফরোয়ার্ডে অ্যালান গাও -এর সঙ্গে শুরুতে মর্গ্যান খেলান সঞ্জু প্রধানকে। পরে অবশ্য প্রত্যাশিত গাও -রবিন জুটি ফিরিয়ে আনেন। সুব্রত জোর দেন রক্ষণ সংগঠনে। তাঁরও আনোয়ার, হাদসন নেই। ঘণ্টাখানেক অনুশীলনের পরে অবশ্য দু’জনেই প্রতিপক্ষ সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল, অন্তত প্রকাশ্যে। “ওরা এক সঙ্গে অনেক দিন খেলেছে। ভাল দৌড়োয়,” বলেই থেমে যান পোড়খাওয়া বাবলু। চতুর মর্গ্যান আরও দড়। “লিগ টেবিলই তো বলছে ওরা কী রকম !
ম্যাচের আগের দিন ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের পর পকেট থেকে একটা ছোট সাদা কাগজ বের করেন মর্গ্যান। তাতে তিন -চার রকম ফর্মেশন লেখা থাকে। আগের দিন রাতেই সেটা তৈরি করে রাখেন ব্রিটিশ কোচ। কাগজটা দেখতে চাইলে হাসতে হাসতে বলেন, “ওটা আমার বাড়ির আলু -ডিমের লিস্ট। কী দেখবেন ! ” এ দিনও বললেন। আসলে ওই কাগজেই কিন্তু থাকে ম্যাচ জেতার রসায়ন। মর্গ্যান -স্ট্র্যাটেজি।
সুব্রত অবশ্য কাগজের ধার ধারেন না। “তিন দিন ধরে তৈরি হচ্ছি। লিখে আনার কী দরকার? মাথাটা আছে কী করতে?” বলে দেন সুব্রত। কথার মধ্যেই বেরিয়ে আসে পুরোনো মেজাজ। কথা বলতে বলতেই হাল সিটির প্রাক্তন ম্যানেজার সম্পর্কে বলে দেন, “আমি আর সুভাষ যে রকম কোচ, মর্গ্যানও সেরকমই। আলাদা কী আছে।”
এর আগেও মর্গ্যানের মুখোমুখি হয়েছেন সুব্রত। তবে ইউনাইটেড স্পোর্টসের জার্সিতে। জিতেছেন। হেরেছেন। কিন্তু সবুজ -মেরুন জার্সিতে কী হবে? “১৯৭৫ - ছয় বছর পর মোহনবাগানকে জিতিয়েছিলাম এই ম্যাচে। ডুরান্ড কাপে। সেটা ছিল আমার প্রথম ডার্বি। বার তো দেড় বছর। দেখুন না কী হয়।” হো হো করে হাসতে হাসতে বলে দেন সুব্রত। বোঝা যায়, ইতিহাস ভেবে টেনশন সামলাচ্ছেন। হাসছেন তো মর্গ্যানও। চতুর হাসি। টোলগে -মেহতাব না থাকা সত্ত্বেও বলছেন, “কালকের ম্যাচের পর বোঝা যাবে ক্ষতি হয়েছে কি না? আর তো এক দিন। অপেক্ষা করুন।”
দুই হেড মাস্টারের মধ্যে শেষ হাসি হাসবেন কে, জানতে রবিবার রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.