কলেজে নয়, এমনকী বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েও তিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দাঁড়াননি। পাশ করে কুলটির এক স্কুলে পার্শ্বশিক্ষকের চাকরি নিয়েছেন। কিন্তু চাকরি-বাকরি ছেড়ে এ বার সর্বক্ষণের রাজনীতিতে আসতে চাইছেন সদ্য যুব কংগ্রেসের অন্যতম সর্বভারতীয় সচিব হিসেবে নিযুক্ত ইন্দ্রাণী মিশ্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোটে দাঁড়াননি মানেই আসানসোলের ইন্দ্রাণী যে রাজনীতির আবহের মধ্যে ছিলেন না, তা কিন্তু নয়।
বরং কুলটির নিয়ামতপুরে কট্টর কংগ্রেসি পরিবারেই তাঁর জন্ম। ঠাকুর্দা তিমিরবরণ চট্টোপাধ্যায় এক সময়ে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে দাপুটে কংগ্রেস নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বাবা চণ্ডী চট্টোপাধ্যায় দলের বর্ধমান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তথা ইসিএলের আইএনটিইউসি নেতা। ছোটবেলায় তাঁদের হাত ধরে সভা-সমিতিতেও গিয়েছেন ইন্দ্রাণী। প্রদেশ ও জাতীয় স্তরের নেতাদের বক্তৃতা শুনেছেন, মুখোমুখিও হয়েছেন।
আসানসোলের বনোয়ারিলাল ভালোটিয়া কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক হওয়ার পরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। বছর আঠাশের ইন্দ্রাণীর কথায়, “কলেজে এসএফআইয়ের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। তাই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়েও তা-ই।” তবে এলাকায় কংগ্রেসের মিটিং-মিছিলে যেতেন নিয়মিত। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন তিনি। সেই সূত্রেই তাঁর রাহুল গাঁধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ।
ইন্দ্রাণী মিশ্র।-ফাইল চিত্র |
যুব কংগ্রেসের তৃণমূল স্তরের নির্বাচন চলাকালীন আসানসোলে এসেছিলেন রাহুল। শহরের একটি প্রেক্ষাগৃহে বিশেষ কনভেনশনে ইন্দ্রাণীর চোখা চোখা প্রশ্নের মুখে পড়ে তিনি কিছুটা বিস্মিতই হয়ে যান। এর পরেই সারা দেশের লোকসভা কেন্দ্রগুলি থেকে বাছাই যুবকর্মীদের দিল্লিতে ডেকে সচিব বাছাই পর্ব শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গ থেকে দু’শো জন এবং সর্বভারতীয় স্তরে আটশো জনের নাম বিবেচনাধীন ছিল। এর মধ্যে যে ১১ জন শেষ পর্যন্ত মনোনীত হয়েছেন, ইন্দ্রাণী তার অন্যতম। ২১ অক্টোবর রাহুল নিজেই চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়েছেন।
শনিবার দিল্লি থেকেই ইন্দ্রাণী বলেন, “রাহুলজিকে আমার সশ্রদ্ধ অভিনন্দন। তিনি এত বড় সুযোগ আমাকে করে দিয়েছেন।” দিন কয়েক পরে সদ্য মনোনীতদের নিয়ে একটি কনভেনশন ডেকেছেন রাহুল গাঁধী। সেই দিনই ঠিক হয়ে যাবে, ইন্দ্রাণী কোন রাজ্যের দায়িত্ব পাবেন। আপাতত তিনি এখন তারই প্রতীক্ষায়। আর আসানসোলের নুরউদ্দিন রোডের বাড়িতে স্ত্রীর ফেরার প্রতীক্ষায় রয়েছেন তাঁর স্বামী, পরিবহণ ব্যবসায়ী অরূপ মিশ্র। স্ত্রীর সাফল্যে তিনিও উচ্ছ্বসিত। সংসার ক্ষতিগ্রস্ত হবে না?
অরূপ বলেন, “ও সর্বক্ষণের কংগ্রেস কর্মী হলেও আমার কোনও আপত্তি নেই। যদি কোনও সমস্যা হয়, দু’জনে কথা বলে সমাধান করব।” কোনও মহাপুরুষ নন, ইন্দ্রাণীর আদর্শ তাঁর বাবা। ইন্দ্রাণী বলেন, “বাবাকে দেখেছি রাত-দিন নাওয়া-খাওয়া ভুলে শ্রমিকদের জন্য লড়তে। বাবাই
আমার আইডল।” |