কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক
মেয়াদ-উত্তীর্ণ ব্যাগে ভরায় নষ্ট দানের রক্ত
স্বেচ্ছায় দান করা রক্ত জলে গেল!
কারণ রক্ত সংগ্রহের সময়ে কোনও টেকনিশিয়ান খেয়ালই করেননি যে, ব্লাডব্যাগগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে নষ্ট হয়ে গেল তাতে ভরা সব রক্তই।
গত ২৯ অক্টোবর মানিকতলার কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানেরা বারাসতের একটি ক্লাবের আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরে যান। সেখানে ৫০ জন দাতার রক্ত ৫০টি ট্রিপ্ল ব্যাগে সংগ্রহ করা হয়। ওই ব্যাগে রক্তের উপাদান (প্লাজমা, প্লেটলেটস্ ও আরবিসি) আলাদা আলাদা রাখা যায়। তাই ওই ৫০ ইউনিট রক্তকে ১৫০ ইউনিটে ভেঙে দেড়শো জন রোগীকে দেওয়া যেত। কিন্তু ওই শিবিরে পাঠানো প্রতিটি ব্লাডব্যাগের (ব্যাচ নম্বর আইবি-১১-১০৪৬) মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ফলে, সে দিন সংগ্রহ করা সব রক্তই ফেলে দিতে হয়েছে বলে স্বীকার করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
এমনিতেই অক্টোবর মাসে উৎসবের মরসুমে রক্ত সংগ্রহ তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এমন প্রয়োজনের সময়ে রাজ্যের সর্ববৃহৎ ব্লাড ব্যাঙ্কের গাফিলতিতে এত রক্ত নষ্ট হওয়ার কোনও অজুহাত নেই স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে। কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা সৌরেন্দ্রনাথ গুছাইত যেমন ভুল স্বীকার করে বলেছেন, “কর্মীদের গাফিলতিতেই হয়েছে। তাড়াহুড়ো করে শিবিরে যেতে গিয়েই যত গোলমাল। আগে এমন হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না। এ ভাবে রক্ত নষ্ট হওয়ায় আমরা দুঃখিত।”
আর ব্লাড ব্যাঙ্কের স্টোরের দায়িত্বে থাকা জয়দেব সেনের বক্তব্য, “আমাদের দরকার কতগুলি, তা জানতে না-চেয়েই দিল্লি থেকে ব্যাগ পাঠানো হয়। ফলে পড়ে নষ্ট হয় ব্লাডব্যাগ।” তাই বলে মেয়াদ-উত্তীর্ণ ব্যাগ বাইরে চলে যাবে? জয়দেববাবুর উত্তর, “নার্সরা স্টোর থেকে ব্যাগ নিয়ে দোতলায় সাব-স্টোরে রাখেন। সেখান থেকেই শিবিরে ব্যাগ যায়। তখনই গোলমাল হয়েছে।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেরই খবর, ২০০৯ সাল থেকে কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের স্টোরে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পাঠানো ট্রিপ্ল ও ডবল ব্লাডব্যাগ স্তূপীকৃত হয়ে রয়েছে। এক-একটি ব্যাগের মেয়াদ দেড় থেকে দু’বছর। ব্যাগের মেয়াদ কবে ফুরোচ্ছে, তা দেখার পরিকাঠামোই নেই কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে। বিষয়টি যাদের দেখার কথা, সেই ড্রাগ কন্ট্রোলের তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্কের জন্য আমাদের সাকুল্যে চার জন অফিসার। অথচ সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক ৫৮টি। এ ছাড়া আছে বেসরকারি ব্যাঙ্ক। নজর রাখা অসম্ভব।”
সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া ব্যাগে এর আগে যে কোনও শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ হয়নি, সে দিকেই বা কে নজর রাখেন? ইতিমধ্যে ‘খারাপ’ ব্যাগে করে রক্ত যে কোনও সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে যায়নি, তার নিশ্চয়তা আছে কি? উত্তর মেলেনি ব্লাড ব্যাঙ্কের টেকনিশিয়ানদের কাছেও। কারণ, এ বারও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া ব্যাগে উপাদান পৃথকীকরণের ল্যাবরেটরি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল রক্ত। বিষয়টি আচমকা এক টেকনিশিয়ান লক্ষ করেন। পরিস্থিতি সামলাতে সৌরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ব্লাডব্যাগের তারিখ দেখে নেওয়ার জন্য খবর পাঠানো হয়েছে সব সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে।” কিন্তু মেয়াদ-উত্তীর্ণ ব্যাগে সরবরাহ হওয়া রক্ত তো ইতিমধ্যেই ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে? ব্লাড সেফটি বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর রতনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের জবাব, “তদন্ত চলছে। যাতে ভবিষ্যতে এ রকম না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে।”
কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, তাদের স্টোরে এখনও প্রায় ১২০০ মেয়াদ-উত্তীর্ণ ট্রিপ্ল ব্যাগ রয়েছে। নভেম্বরেই মেয়াদ ফুরোবে আরও প্রায় ১৬০০ ডবল ব্যাগের। ইতিমধ্যে ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক সম্পর্কে ড্রাগ কন্ট্রোল লিখিত রিপোর্টে বলেছে, “এখানে ব্লাডব্যাগের কোনও স্টেরিলিটি টেস্ট হয় না। ব্লাডব্যাগ-সহ কোনও জিনিসের লগবুক নেই। কোনও জিনিসের কোয়ালিটি কন্ট্রোল টেস্টের রিপোর্ট রাখা হয় না।” তবে ফের যে মেয়াদ-উত্তীর্ণ ব্যাগে রক্ত সংগ্রহ হবে না, তার নিশ্চয়তা আছে কি? পূর্বাঞ্চলের মডেল ব্লাড ব্যাঙ্ক হতে চলা এই কেন্দ্রের কারও কাছেই মেলেনি এর উত্তর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.