বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বছর পঞ্চাশের রঞ্জন মণ্ডল। অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় নিয়মিত থাকতে হচ্ছে বাড়ির লোকেদেরও। কিন্তু হাসপাতাল চত্বরে ভাল খাবারের দোকান না থাকায় দু’বেলা হন্যে হয়ে ঘুরছেন তাঁরা। ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন। কিন্তু এই ছবি রাজ্যের যে কোনও জেলা বা মহকুমা হাসপাতালেই আকছার দেখা যায়।
সম্প্রতি এই অবস্থা বদলাতে উদ্যোগী হয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন, এ বার থেকে হাসপাতালেই রোগীর আত্মীয়েরা সামান্য খরচে নিজেদের রান্না করতে পারবেন। চালু হতে চলেছে ক্যান্টিনও। হাসপাতাল সুপার পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত বলেন, “রান্নাঘরের জন্য জায়গা দিয়েছি। ক্যান্টিনের ব্যাপারে কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের সঙ্গে কথা চলছে। ক্যান্টিনে সবার জন্য তৈরি খাবার মিলবে।”
পরিকাঠামোগত বেশ কিছু সমস্যায় ভুগছে বারাসত হাসপাতাল। রোগীর আত্মীয়দের রাত কাটানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘর নেই। সমস্যা রয়েছে খাবারেরও। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দাবি, কেন্দ্রের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের ‘ভিশন ২০১৫’ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ‘কমিউনিটি কিচেন’ গড়ার ব্যবস্থা। এই প্রকল্পেই তিনটি সংস্থার উদ্যোগে বারাসত হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়দের জন্য হবে বিশেষ রান্নাঘর। ঘণ্টায় মাত্র ৪ টাকা গ্যাস সিলিন্ডারের ভাড়া দিয়ে তাঁরা রান্না করতে পারবেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ভারত পেট্রোলিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করছে। আর ‘মডিউলার কিচেন’-সহ সব পরিকাঠামো তৈরির দায়িত্বে আছে বারাসতের এলপিজি গ্যাস সরবরাহকারী একটি সংস্থা। খুব শীঘ্রই ওই রান্নাঘর চালু হবে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। ভারত পেট্রোলিয়ামের কলকাতা অঞ্চলের ম্যানেজার সুবিকাশ জেনা বলেন, “গ্রামীণ এলাকায় এই প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে এই প্রথম। রোগীর আত্মীয়দের খাবার পাওয়া নিয়ে আর সমস্যা হবে না।” গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থাটির মালিক দেবব্রত পাল বলেন, “রান্নাঘর দেখভালের লোক এবং গ্যাসের জন্য ভর্তুকি দেব।”
কিন্তু প্রকল্পটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের কর্মী এবং রোগীদের মধ্যে। তাঁরা বলছেন, জেলা হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়দের থাকার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। প্রায় ৫০০ রোগী রোজ ভর্তি থাকেন। অথচ, ১০ টাকার বিনিময়ে তিনটি ঘরে প্রতি দিন ৬০ জন রাত্রিযাপন করতে পারেন। অন্যদের হাসপাতালের মাঠে বা কাছের হোটেলে থাকতে হয়। যেখানে রাত কাটানোই মূল সমস্যা, সেখানে এই নয়া রান্নাঘর কতটা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রোগীর আত্মীয়েরা। এই প্রশ্নও উঠেছে, এক জন সঙ্কটাপন্ন রোগীর আত্মীয়েরা কখন বাজার করবেন আর কখন রান্না করবেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, যে পরিমাণ গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়া হবে, তাতে একসঙ্গে পাঁচ জন রান্না করতে পারবেন। বারাসতের মতো ব্যস্ত হাসপাতালে এই ব্যবস্থা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কর্মীদের একাংশ।
সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। |