এক প্রসূতির মৃত্যুতে নার্সিংহোমে ভাঙচুর ও চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার হলেন বাঁকুড়া শহরের এক তৃণমূল নেতা। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাঁকুড়া শহরের প্রতাপবাগান এলাকার ঘটনা। প্রহৃত চিকিৎসক শহরের অন্য একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় এক দিকে যেমন চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, পক্ষান্তরে শহরের নার্সিংহোমগুলির চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ।
মৃত প্রসূতির পরিবার ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। বাঁকুড়ার এসপি প্রণব কুমার বলেন, “নার্সিংহোমে ভাঙচুর ও চিকিৎসককে মারধর করার অভিযোগে বাপি মজুমদারকে ধরা হয়েছে। তদন্ত চলছে।” বাপি এলাকায় তৃণমূল নেতা হিসেবেই পরিচিত।
মৃত রেখা পাত্রের (২৪) শ্বশুরবাড়ি ছাতনা থানার কমলপুরে। বাপের বাড়ি বাঁকুড়া শহরের পাঁচবাগা এলাকায়। বৃহস্পতিবার ভোরে প্রসব যন্ত্রণা ওঠায় তাঁকে প্রতাপবাগানের ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অশোক সাহা সন্ধ্যায় রেখার অস্ত্রোপচার করেন। রেখা পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। |
জখম চিকিৎসক। নিজস্ব চিত্র |
এর পরেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তাঁকে শহরের অন্য একটি নার্সিংহোমে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পরে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর সদ্যোজাত ছেলেকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। রাত ১২টা নাগাদ চিকিৎসক অশোক সাহা প্রতাপবাগানের নার্সিংহোমে ফিরে এলে তাঁর উপরে ‘হামলা’ হয়। তাঁর মুখে ও ঘাড়ে চোট লেগেছে।
নার্সিংহোমের মালিক মানিক নন্দীর দাবি, সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরেই রেখাদেবীর শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। অশোকবাবু নিজে রেখাদেবীকে অন্য নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে ভাল চিকিৎসা দেওয়ার সব রকম চেষ্টা করেন। মানিকবাবুর অভিযোগ, “চিকিৎসক নার্সিংহোমে ফিরে আসতেই বাপি মজুমদার দলবল নিয়ে চড়াও হয়। তাঁকে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়। অপারেশন থিয়েটার-সহ কয়েকটি ঘরে ভাঙচুর চালায়।” বাপিবাবুর দাবি, “রেখা আমার পাড়ার মেয়ে। সন্ধ্যায় নার্সিংহোমে তাঁর খবর নিতে যাই। নার্সিংহোমে গোলমালের সময় আমি ছিলাম না। মিথ্যা অভিযোগে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”
রেখার বাবা গুরুপদ রায়ের অভিযোগ, “চিকিৎসার গাফিলতিতেই আমার মেয়ের প্রাণ গেল। ওই নার্সিংহোমে প্রসূতিদের চিকিৎসার পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও প্রসূতিদের ভর্তি করা হয় কেন?” এ দিন কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না প্রহৃত চিকিৎসক।
শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, “ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। প্রশাসন ব্যবস্থা নেয় না।” বাঁকুড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাশীনাথ মিশ্রও বলেন, “শুধু এই নার্সিংহোম নয়, জেলার অধিকাংশ নার্সিংহোমই স্বাস্থ্য দফতরের নিয়মবিধি মানে না। চিকিৎসক ও পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। লোকে উপযুক্ত পরিষেবা পান না। স্বাস্থ্য দফতরকে বিষয়টি দেখতে বলব।” বাঁকুড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ দিন্দা বলেন, “ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে বারবার কেন অভিযোগ উঠছে, তা দেখা হবে।”
|