|
|
|
|
‘সমবায়-দুর্নীতি’র অভিযোগ |
ফড়ে এড়াতে ধানের টাকা চেকে, তবু নিশ্চিন্ত নন চাষি |
অজয় বিশ্বাস • কলকাতা |
চাল সংগ্রহের লক্ষ্যে চাষির থেকে ধান কেনে সরকার। কিন্তু চাষির প্রাপ্য টাকার অনেকটাই ফড়ের পকেটে চলে যায় বলে অভিযোগ। কৃষক ঠকানোর এই ‘চক্র’ ভাঙতে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ধানের দাম চাষিদের সরাসরি চেক মারফত মিটিয়ে দেওয়া হবে।
কিন্তু উদ্যোগটি ভেস্তে দিতে ঘুরপথে সেই চক্রই ফের সক্রিয় হয়েছে বলে অভিযোগ খাদ্য-কর্তাদের। অভিযোগ পৌঁছেছে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছেও। মন্ত্রীর অবশ্য দাবি, “চাষিদের ঠকানোর চক্রটি আমরা ভাঙবই।”
এ বছরে চাষিদের থেকে ২০ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে খাদ্য দফতর। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগম একাই কিনবে ৬ লক্ষ টন। বেনফেড, কনফেড, এনসিসিএফের মতো সমবায় সংস্থার প্রতিটি কিনবে ১ লক্ষ টন। বাকি ১১ লক্ষ টন আসবে ‘লেভি’ থেকে। এত দিন সরকারের এজেন্ট হিসেবে চালকলের মালিকেরাই নগদ টাকায় সরকারি দামে ধান কিনতেন চাষির কাছ থেকে। এবং সেই ধান ভাঙিয়ে চাল করে সরকারের থেকে পাওনা বুঝে নিতেন ‘এজেন্ট’ মিল-মালিকেরা।
কিন্তু বহু দিনের অভিযোগ যে, ফড়েদের কারসাজিতে চাষিদের হাতে ন্যায্য দাম পৌঁছায় না। বহু ক্ষেত্রে ফড়েরা প্রান্তিক চাষির থেকে অল্প টাকায় চাল কিনে সরকারকে বেশি দামে বিক্রি করে। ফলে প্রাপ্যের বেশিটাই ফড়ের পকেটে চলে যায়। এই দুর্নীতি-চক্রে দাঁড়ি টানতেই কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চাষিদের প্রাপ্য টাকা সরকার সরাসরি তাঁদের নামে কাটা অ্যাকাউন্ট-পেয়ি চেকের মাধ্যমে মিটিয়ে দেবে, মাঝখানে কেউ থাকবে না।
প্রক্রিয়াটির তোড়জোড় পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হয়ে গিয়েছে। কোন এজেন্ট কত ধান সংগ্রহ করতে পারবেন, নিগমের সঙ্গে সে ব্যাপারে তাঁর চুক্তি হবে। চুক্তিপত্রে উল্লিখিত পরিমাণ ধানের দাম এজেন্ট আগাম দিয়ে দেবেন নিগমকে। রাজ্য সরকার এখন এজেন্টদের থেকে সেই আগাম টাকা জমা নিচ্ছে। ব্যাঙ্কে নিগমের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা পড়লে বিক্রেতা চাষিদের নামে অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক কাটবে নিগম। নিগমের কর্মীরা ওই চেক নিয়ে গিয়ে চাষির হাতে সরাসরি তুলে দেবেন। রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, “ব্যাঙ্কের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। চাষিদের নামে জিরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হবে। ওঁদের কোনও অসুবিধে হবে না।”
কিন্তু নিয়মের ব্যতিক্রম সমবায় সংস্থাগুলো। আর এই সূত্রেই নয়া প্রক্রিয়াতেও ফড়ে-চক্রের সক্রিয়তার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কী ভাবে?
নতুন নিয়মে সমবায় সংস্থাকে এজেন্টের মতো ধান কেনার আগাম টাকা নিগমের অ্যকাউন্টে জমা দিতে হবে না। তারা শুধু হাজার টাকার ফর্ম কিনে স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তিপত্র করবে। এবং চাষিদের ধানের দাম তারাই মেটাবে চেক মারফত। নিগম-সূত্রের অভিযোগ, এই ব্যবস্থার ফায়দা লুটতে ইতিমধ্যে কিছু কিছু মিল-মালিক মিলে ‘সমবায়’ খুলে ফেলেছেন। নিগমের চুক্তিপত্র দেখিয়ে তাঁদের ‘সমবায়’ ঋণ নিচ্ছে ব্যাঙ্ক থেকে। সেই টাকা ব্যবসায়ে খাটাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট মিল-মালিকেরা। পাশাপাশি ওই সব ‘সমবায়ে’ ধান বিক্রি করছেন যে চাষিরা, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের ন্যায্য দামে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
এর সুরাহা কী?
খাদ্যমন্ত্রীর প্রত্যয়ী জবাব, “চাষিদের ঠকানোর যে চক্র এত দিন রাজ করেছে, এ বার তা ভেঙে দেবই। সব কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কি না দেখতে বিশেষ টিম পাঠানো হবে জেলায় জেলায়।”
কিন্তু নিগমের আধিকারিকদের অনেকের ধারণা, এতে লাভ কিছু হবে না। কেন? নিগমের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, “প্রান্তিক চাষিকে আলাদা ভাবে চেনার উপায় নেই। তাই যাঁরা ধান বিক্রি করতে আসছেন, তাঁরা ফড়ে হলেও করার কিছু থাকছে না। আগে ভোটার লিস্ট দেখে খাতায় চাষির নাম লেখা হতো। সার্টিফিকেট দিত পঞ্চায়েত। এখন তার বদলে ব্যাঙ্কের পাশবই। তফাত বলতে এটুকুই।” |
|
|
|
|
|