|
|
|
|
উন্নয়নে সহায়তা চেয়ে মমতার বার্তা দিল্লিকে |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
কলকাতায় সাত দিনের চলচ্চিত্র উৎসবের পর এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অগ্রাধিকার, দিল্লিতে বাংলার শিল্প ও উন্নয়নের মুখকে প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যেই ২২ তারিখ তাঁর দিল্লি সফর। এই সফরে মমতা বোঝাবেন, জোট শরিক হিসেবে তাঁরা যেমন বরাবর কেন্দ্রের পাশে রয়েছেন, তেমনই রাজ্যের আর্থিক সঙ্কটমোচন এবং উন্নয়নের স্বার্থে তাঁদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিক কেন্দ্র। চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনাসভায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে সফরের আগেই যার প্রস্তাবনা করে রাখলেন তিনি।
২৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় পশ্চিমবঙ্গ দিবস। এই মেলায় এ বার পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম সঙ্গী রাজ্য। ওই দিনটিতে বাংলার উন্নয়ন নিয়ে এক বিশেষ আলোচনাসভায় প্রগতি ময়দানে হাজির হতে চলেছেন মমতা। আর এই অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম, বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা এবং গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এই চার সদস্যকে এ দিন আমন্ত্রণ জানিয়ে মমতা বিশেষ বার্তা দিতে চাইছেন। প্রথমত, রাজ্যের তীব্র আর্থিক সঙ্কটে কেন্দ্রের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট সাহায্য চাইছেন তিনি। সেই কথাই আরও এক বার প্রণববাবুকে জানাবেন তিনি। দ্বিতীয়ত, জঙ্গলমহলে উন্নয়নের কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং শক্ত হাতে মাওবাদীদের মোকাবিলা করে মমতা এখন রাজ্যে নিরাপত্তা তথা আইনশৃঙ্খলার ছবিটাকেও ইতিবাচক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। জঙ্গলমহলে উন্নয়নের জন্য জয়রাম এবং মাওবাদী হিংসা দমনে তিনি চিদম্বরমের সক্রিয় সমর্থন পাচ্ছেন। জয়রাম আগামিকাল জঙ্গলমহল সফরে যাচ্ছেন। মমতার পরিকল্পনা, রাজ্যে এ বার শিল্পের পরিবেশ গড়ে তুলতে এবং সে জন্য বাইরে থেকে পুঁজি আনতে কলকাতায় একটি বিশ্ব বাণিজ্য মেলা ও শিল্প সম্মেলন অনুষ্ঠিত করা। বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে মমতা এক দফা আলোচনা করেছেন। কেন্দ্র ওই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। ঠিক হয়েছে, আগামী বছর কলকাতায় এই আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলন হবে। এই নিয়েও আনন্দ শর্মার সঙ্গে কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী। |
সহমত |
মমতার আর্থিক সাহায্যের দাবি
যুক্তিসঙ্গত। সব বিবেচনা করেই
সঙ্কটমোচনের চেষ্টা করছি।
প্রণব মুখোপাধ্যায় |
রাজ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
সম্মেলন করেই আমদানি-রফতানিতে
জোর। মমতার ধারণাও স্বচ্ছ।
আনন্দ শর্মা |
মাওবাদী প্রশ্নে মমতার পাশে
কেন্দ্র।
উন্নয়নের অস্ত্রেই তিনি মানুষকে
উগ্রবাদীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করছেন।
পি চিদম্বরম |
জঙ্গলমহল সফরের উদ্দেশ্য,
পরিস্থিতি দেখে জায়গা চিহ্নিত
করে উন্নয়নের ব্যবস্থা করা।
জয়রাম রমেশ |
|
মমতা বলেন, দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে সিপিএম রাজ্যের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার পরিবেশকে নষ্ট করেছে। জঙ্গলমহলে এত বছরেও কেন যথাযথ উন্নয়ন হল না, কেন এই জেলাওয়াড়ি আর্থিক অসম বিকাশ, তার জন্যও কি তৃণমূল দায়ী? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ বার দিল্লি সফরে পশ্চিমবঙ্গ দিবসে আমরা গোটা দেশ ও দুনিয়ার কাছে এই বার্তা দিতে চাই যে, শিল্প বিনিয়োগের উপযুক্ত গন্তব্যস্থল হয়ে উঠতে পারে পশ্চিমবঙ্গ।
প্রথম পর্যায়ে বুদ্ধদেব জমানার প্রকল্পগুলি নিয়ে মমতা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিঙ্গুরে টাটার কারখানা না হলেও নয়াচরে প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের প্রকল্প, শালবনিতে জিন্দলের প্রকল্পে তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কার-সংশোধন করে ছাড়পত্র দিয়েছেন। এবং সেটা করে এই বার্তাই দিয়েছেন যে, তিনি রাজনৈতিক সংকীর্ণতার মন নিয়ে শিল্পায়ন করতে চাইছেন না। এমনকী, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অন্ডাল বিমাননগরী প্রকল্পটিও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথম পর্যায়ে পুরনো প্রকল্পগুলিকে ছাড়পত্র দেওয়ার পরে এ বার কিন্তু নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে আরও প্রসারিত করতে চাইছেন মমতা।
২২ নভেম্বর দিল্লি আসবেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন পরদিন, ২৩ নভেম্বর। তা ছাড়া এই সফরে তাঁর সঙ্গে চিদম্বরম, প্রণববাবুরও দেখা হবে। ওই দিনই সংসদের সেন্ট্রাল হলে গিয়ে নানা দলের নেতা ও সাংসদদের সঙ্গে তিনি দেখা করবেন। দেখা হবে স্পিকার মীরা কুমারের সঙ্গেও।
তার পর ২৪ নভেম্বর হবে পশ্চিমবঙ্গ দিবসের অনুষ্ঠান। সে দিন সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে মমতা দিল্লিতে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের ক্যাডারের সমস্ত আইএএস এবং আইপিএস অফিসারদের সঙ্গেও দেখা করবেন। বাংলার জন্য রাজধানীতে বিশেষ ভাবে ‘লবি’ করতে তিনি এ বার আমলাতন্ত্রকে সক্রিয় করতে চাইছেন। ২২ তারিখ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন বাসভবনে জাতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জন্য নৈশভোজেও থাকবে একই বার্তা বাংলার জন্য ভাবুন। এ সবই হল বৃহত্তর জনসংযোগ কর্মসূচি।
দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর মমতা রাজ্য ও দিল্লিতে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যা থেকে প্রতিষ্ঠিত হবে, এ বার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ছাড়া তাঁর সর্বাধিক অগ্রাধিকারের জায়গা হল শিল্প। প্রথমত, রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ অবসর নিচ্ছেন মার্চ মাসে। মমতা চাইছেন, সমরবাবুই যেন আরও কিছু দিন মুখ্যসচিব হিসাবে কাজ চালিয়ে যান। তবে তিন মাসের বেশি মুখ্যসচিবের মেয়াদ বাড়ানো যায় কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। আবার কেন্দ্রের ক্যাবিনেট সচিব বা স্বরাষ্ট্রসচিবের মতো রাজ্যের মুখ্যসচিবের পদটিও পাকাপাকি ভাবে দু’বছরের জন্য স্থায়ী করা যায় কি না, সেই প্রস্তাবও রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়েও মমতা দিল্লিতে আলোচনা করবেন। পাশাপাশি, রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী কাকে করবেন, দক্ষিণ কলকাতার ফল প্রকাশের পরে সেই সিদ্ধান্তও নিতে হবে তাঁকে। তখন শুধু পরিবহণ নয়, সামগ্রিক ভাবেই মন্ত্রিসভায় কিছু ছোট রদবদল করা হবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে। আমলাতন্ত্রেও কিছু রদবদল হবে। অর্থসচিবের অধীনে কেন্দ্রের ধাঁচে বাজারসচিব ও ব্যয়বরাদ্দ সচিব, দু’টি পৃথক পদ তৈরির একটি প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা চলছে।
সব মিলিয়ে, কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত নয়, রাজ্যের শিল্প ও উন্নয়নের স্বার্থে আপাতত মৈত্রীর পরিবেশেই যে এগোতে চান তিনি, দিল্লি সফরে সেই বার্তা দিতে চাইছেন মমতা। |
|
|
|
|
|