ঐতিহ্য হারাচ্ছে পুরুলিয়ার রাস
র্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পুরুলিয়ার রাস মহোৎসব। এ বার ৬৫ বছরে পদার্পণ করল এখানকার রাস। এই উৎসব এখন আর শুধু পুরুলিয়া শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, আশপাশের গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দারাও মেতে ওঠেন।
রাস পূর্ণমার দিন থেকে নয়, এখানকার রাস শুরু হয় পঞ্চমীর দিন থেকে। কেন এই ব্যতিক্রম? রাসমহোৎসব কমিটির কার্যকরী সভাপতি গোবিন্দ মুখোপাধ্যায় জানালেন, “৬৫ বছর আগে পুরুলিয়া শহরে এই উৎসব হত না। মেলা বসত না। কাশীপুর পঞ্চকোট রাজবাড়ি ও ঝালদার বেগুনকোদরে রাস উৎসব হত। পুরুলিয়া শহরের কয়েকজন বেগুনকোদরে রাস দেখতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে তাঁরা ঠিক করেন, এখানে রাস উৎসবের আয়োজন করা হবে।”
রাসের শোভাযাত্রা। নিজস্ব চিত্র।
সেই পরম্পরা মেনেই পুরুলিয়া শহরের রাস ময়দানে পঞ্চমীর দিনে এই উৎসব শুরু হয়। এই নিয়মের পরিবর্তন কখনও হয়নি। ফি বছরের মতো এ বারও মেলার মাঠে নাগরদোলা এসেছে। বিভিন্ন জেলা তো বটেই, ভিন রাজ্য থেকেও দোকানিরা পসরা নিয়ে এসেছেন। এ ছাড়া বাউল, ছৌ, যাত্রা- মনোরঞ্জনের যাবতীয় আয়োজন থাকছে। কিন্তু, প্রবীণদের চোখে কোথায় যেন এই মেলার সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গিয়েছে। সুর কেটে গিয়েছে। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে মেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের মতে, সেই পুরনো গরিমা যেন আজ নেই।
রাস মহোৎসব কমিটির অন্যতম সদস্য কানাই ধীবরের স্মৃতিতে, প্রথম যখন এই উৎসব শুরু হয়েছিল তখন মেলার এই চেহারা ছিল না। নাচ-গানা-কীর্তন হত। দিনে দিনে মেলার চেহারা পাল্টাতে শুরু করল। আগে ওড়িশা থেকে নন্দনকানন নামের একটি সংস্থা শিল্পকর্ম প্রদর্শন করতে আসত। তাঁরা নানা শিল্পকর্ম প্রদর্শন করতেন। এখন তাঁরা আর আসেন না। আেগৈ চিড়িয়াখানা আসত। এখন তাও আসে না। তবে আগেও ঘর গেরস্থালির জিনিসপত্র নিয়ে বিক্রেতারা আসতেন। এখনও তাঁরা আসেন। আর এর আকর্ষণে অনেকে মেলায় আসেন।
শহরের বাসিন্দা কবি নির্মল হালদারের কথায়, “আসলে প্রযুক্তি পুরনো ঐতিহ্যে থাবা বসিয়েছে। তাতে চাকচিক্য বেড়েছে, কিন্তু সেই টান যেন কমে গিয়েছে। আগে দেখতাম গ্রাম থেকে কাতারে কাতারে মানুষজন রাস দেখতে আসতেন। সারা রাত ধরে তাঁরা মেলায় থাকতেন। আগুন পোহানো হত। মেলায় রাত জেগে যাত্রা দেখতেন। ভোরে ঘুন জড়ানো চোখে তাঁরা বাড়ি ফিরতেন। এই ছবি হারিয়ে যাচ্ছে।” তিনি জানান, আগে লক্ষ্নৌ থেকে পাজামা-পাঞ্জাবী নিয়ে ব্যবসায়ীরা আসতেন। কত মানুষ সেই সব পোশাক কিনতেন। এখন তো সেসব গল্প কথা! আক্ষেপ ঝরে পড়ে তাঁর গলায়। মেলার এই সুর কেটে যাওয়া নজরে এসেছে কলেজ ছাত্রী মৌসুমী সেনের নজরেও। তাঁর উপলব্ধি, “আগে রাসের মেলার জন্য আমরা সারা বছর অপেক্ষা করতাম। সার্কাস, কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল-কত আকর্ষণ ছিল। গ্রামের মানুষজন কত জিনিস নিয়ে এখানে আসতেন। এখন সে সব কোথায়?” বৃহস্পতিবার থেকে মেলা শুরু হয়েছে। চলবে প্রায় এক মাস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.