|
|
|
|
|
|
|
সঙ্গীত সমালোচনা... |
|
ব্যান্ড বাজা সংসার |
শীত পড়ছে। বাংলা ব্যান্ডের এই তো মরসুম। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাজারে আছেন
এঁরা। একান্নবর্তী সেই সব পরিবারের হালচাল ঠিকঠাক তো? খোঁজ নিলেন সুদীপ ঘোষ |
আপাত সুখের সংসার
চন্দ্রবিন্দু |
|
আজও যে গানের চাহিদা |
বন্ধু তোমায়, জুজু, ত্বকের যত্ন নিন, খেলছে সচিন, দুধ না খেলে, ভিনদেশি তারা |
সংসারের হালচাল |
২১ বছরের সাজানো সংসার। গানের ভাষা, আর বুদ্ধিমত্তা আর বাঙালিয়ানার ছাপ অন্য অনেক ব্যান্ডকে ছাপিয়ে যায়। কিন্তু গত তিন বছর কোনও অ্যালবাম নেই। অবশ্য পরের অ্যালবামটা আগামী বছর বের করার প্ল্যান করছেন। ব্যান্ড দুনিয়ার বাইরে অনিন্দ্য আর চন্দ্রিল অবশ্য সিনেমার গানে জাঁকিয়ে বসেছেন। গান লিখছেন, গাইছেনও। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘অন্তহীন’-এর জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। |
রান্নাঘর |
এখনও পর্যন্ত আপাত সুখের সংসার। প্রধানদের মধ্যে দ্রোণ ছেড়েছেন। কিন্তু অনিন্দ্য, উপল আর চন্দ্রিলের মধ্যে কখনও ভুল বোঝাবুঝি হয়নি। ব্যান্ডের কয়েক জন সদস্য নিজস্ব কাজ করছেন, কিন্তু তার পাশাপাশি সবাই একসঙ্গে গান-বাজনাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র অ্যালবামে না থেকে অন্যান্য দিকেও মন দিচ্ছেন। ব্যান্ড হিসেবেই ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবিতে গান আর সুর, দু’টোই দিয়েছেন। |
সাংসারিক হিসেব |
পিক সিজনে মাসে ১২ থেকে ১৫টা শোয়ের ডাক আসে। কলেজ ফাংশনের ডাক কমেছে, কিন্তু কর্পোরেট অনুষ্ঠানে যথেষ্ট চাহিদা আছে। সংসারের অর্থনীতি নিয়ে তাই কোনও উদ্বেগ নেই। |
বাজারহাট |
’৯০-এর দশকে কম বয়সীদের সব চেয়ে পছন্দের ব্যান্ড। গানের কথা এখনও ক্ষুরধার। ব্যান্ড মেম্বারদের সঙ্গে ব্যান্ডের শ্রোতাদের বয়সও বেড়েছে। ব্যস্ততাও। বছর তিনেক অ্যালবাম না করার ফলে নতুন গান শ্রোতারা অনুষ্ঠানের বাইরে শুনতে পাচ্ছেন না। তাতে আকর্ষণ মিটারে একটু ভাঁটা তো পড়েইছে। |
এক কথায় |
আমরা প্রত্যেকেই নানা ইন্টারেস্টিং কাজ করছি। গানের স্টকও প্রচুর। চন্দ্রবিন্দুর একটা আলাদা আইডেন্টিটিও তো তৈরি হতে পারে। হয়তো দেখবেন চন্দ্রবিন্দু একদিন একটা গোটা সিনেমা বানিয়ে ফেলল
উপল |
|
|
ফাটলের রেখা
ভূমি |
|
আজও যে গানের চাহিদা |
বারান্দায় রোদ্দুর, গাড়ি সিগনাল মানে না, লালে লালেশ্বরী |
সংসারের হালচাল |
’৯৯-তে প্রথম অনুষ্ঠান। প্রথম অ্যালবাম ‘যাত্রা শুরু’ই হিট। ১২ বছরে ১২টা অ্যালবাম। শেষ অ্যালবাম এ বছর পুজোয়। সঙ্গে তিনটে বিদেশ সফর। অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকায়। আসল আকর্ষণ সহজ ভাষায়, নানা রকমের ফোক সুরের গান। কল-শোয়ের হিসেবে ভূমির বাজার এখনও সব চেয়ে বেশি। কারণ বয়স নির্বিশেষে ভূমির গানের অ্যাপিল। কিন্তু এমন ভরন্ত সংসারেও সব কিছু শান্তিতে নেই এই মুহূর্তে। |
রান্নাঘর |
ফাটলের রেখা দেখা যাচ্ছে। ১২ বছর একসঙ্গে গানবাজনা করার পর, ড্রামার এবং অন্যতম প্রধান গায়ক সৌমিত্র রায় ঘোষণা করেছেন যে তিনি অন্তত মাস তিনেকের ছুটি চান। অন্য ব্যান্ডের মতো ভূমির মধ্যেও কখনও কখনও সদস্যরা এসেছেন, গিয়েছেন। কিন্তু সৌমিত্র আর সুরজিৎ ব্যান্ডের প্রধান দুই স্তম্ভ বরাবর কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন। ডিসেম্বর থেকে মার্চ এই সময়টাতেই সব চেয়ে বেশি অনুষ্ঠান থাকে। সেখানে সৌমিত্রর ঠিক সেই সময়েই ছুটি নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশে ব্যান্ডের অন্য সদস্যরা হকচকিয়ে গেছেন। ক্ষোভও আছে কারও কারও ভেতর। শোনা যাচ্ছে পিক সিজনে বসে না থেকে সুরজিৎ নিজস্ব ব্যান্ড তৈরি করে অনুষ্ঠান করার কথা ভাবছেন। |
সাংসারিক হিসেব |
গড়ে মাসে ১০ থেকে
১৫টা অনুষ্ঠান করে ভূমি। পিক সিজনে কখনও কখনও মাসে প্রত্যেক দিনই অনুষ্ঠান থাকে। কিন্তু এ বছর ডিসেম্বরের পর আর কোনও অনুষ্ঠানের বুকিং তাঁরা নিচ্ছেন না। |
বাজারহাট |
ডিসেম্বরেই ২০-টার মতো অনুষ্ঠান বুক করা হয়ে গেছে। কিন্তু তার পর আর গ্রামগঞ্জের বুকিং নেওয়া হচ্ছে না। এ ভাবে হঠাৎ অনুষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তে বাজারে একটা বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। |
এক কথায় |
১২ বছরে ১৫০০-র বেশি অনুষ্ঠান করেছি আমরা। এ বার মনে হয় সবারই একটু বিশ্রাম দরকার। অন্তত আমার তো দরকারই। আবার ফ্রেশ হয়ে শুরু করা যাবে। তিন মাস যে ছুটি নেব বলেছি, সেটা মাচার অনুষ্ঠান থেকে। কিন্তু এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ উৎসবের মতো গুরুত্বপূর্ণ কোনও অনুষ্ঠান হলে অবশ্যই পারফর্ম করব। দরকার পড়লে একাই পারফর্ম করব
সৌমিত্র
ভরা মরসুমে হঠাৎ এ ভাবে বসে যাওয়া যায় না। আমার বিশ্রামের দরকার নেই। গ্রামগঞ্জের অনুষ্ঠানই আমাদের জনপ্রিয়তা দিয়েছে। সে সব অনুষ্ঠানকে উপেক্ষা করে কেবল গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান করব এই ভাবনায় আমি বিশ্বাসী নই। ভূমি ছাড়া ভাবতেই পারি না। আজও লোক উপচে পরে ভূমির গান শোনার জন্য। সেটাকে মর্যাদা দিতে আমাকে যদি আলাদা ব্যান্ডও তৈরি করতে হয়, করব
সুরজিৎ |
|
|
ঝড়ের পর শান্তি
ক্যাকটাস |
|
আজও যে গানের চাহিদা |
বুদ্ধ হেসেছে, হলুদ পাখি, আমি শুধু চেয়েছি তোমায় |
সংসারের হালচাল |
বাংলায় রক-ব্যান্ডের প্রথম স্বাদ এনে দিয়েছিলেন এঁরাই। চন্দ্রবিন্দুর সমসাময়িক। ১৯ বছর হতে চলল। কিন্তু প্রথম থেকেই ব্যান্ডের সদস্যদের মধ্যে নানা ভুল বোঝাবুঝি ভুগিয়েছে। অ্যালবামের সংখ্যাও কম। মোটে চারটে। শেষ অ্যালবাম বেরিয়েছে বছর তিনেক আগে। আগামী অ্যালবাম ২০১২-র আগে নয়। তাই নতুন গানের সংখ্যাও তেমন নেই। তবে এঁরাই প্রথম বাংলা ব্যান্ড হিসেবে সিনেমার গানে সুর দিয়েছেন, অভিনয়ও করেছেন। ২০০২। ‘নীল নির্জনে’। |
রান্নাঘর |
সব চেয়ে বেশি হইচই হয়েছিল যখন অন্যতম প্রধান গায়ক অভিজিৎ বর্মন, যাঁকে ব্যান্ড দুনিয়া চেনে ‘পটা’ নামে, হঠাৎ ব্যান্ড থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু পর পর দু’টো নামে নিজের ব্যান্ড তৈরি করেও তেমন সাফল্যের মুখ দেখেননি অভিজিৎ। ও দিকে তাঁর গায়কির অভাবে ক্যাকটাসও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। ২০১০ নাগাদ সম্পর্ক মেরামত হয়। ঘরের ছেলে ঘরে ফেরেন। কিন্তু তার মধ্যেই গিটারিস্ট অ্যালেন বেরিয়ে যান। |
সাংসারিক হিসেব |
ভরা মরসুমে ছ’টা থেকে আটটা মাসে। ব্যান্ডের দাবি, বয়স বাড়ার জন্য যুব সম্প্রদায়ের কাছে অ্যাপিল কমেনি। শোয়ের সংখ্যা কমেছে, কিন্তু এখনও পঞ্চাশ থেকে ষাট শতাংশ আমন্ত্রণ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান থেকেই আসে। |
বাজারহাট |
নতুন গানের সংখ্যা কম। ব্যান্ডের সদস্য খালি বদলে যাওয়ায় অনেক সময়ে স্টেজ-শোয়ে বোঝাপড়ার সমস্যা হয়। মাঝে অভিজিতের অনুপস্থিতিও অ্যাপিলের বাজারে ভাটার জন্য খানিকটা দায়ী। তবে এখন আবার আকর্ষণ মিটার বাড়ছে। বাজারদরও বেড়েছে। |
এক কথায় |
অনুষ্ঠানের সংখ্যাটা আমরা ইচ্ছে করেই কমিয়েছি। যাতে প্রচুর অনুষ্ঠানে একই ব্যান্ডকে দেখতে দেখতে শ্রোতাদের মধ্যে একঘেয়েমি না আসে। তা ছাড়া রেট বেড়ে যাওয়াও অনুষ্ঠান কমার একটা কারণ। আর ব্যান্ড ছেড়ে সদস্যদের চলে যাওয়া যেমন আছে, ফিরে আসারও সব চেয়ে বড় উদাহরণ তো পটা।
সিদ্ধার্থ |
|
|
সাফল্য আসছে, সম্পর্কও মধুর
ফসিল্স |
|
আজও যে গানের চাহিদা |
একলা ঘর, বিষাক্ত মানুষ, হাসনুহানা, অ্যাসিড, বেঁচে থাকার গান, জন্নত, মা, চাদর |
সংসারের হালচাল |
শুরু ’৯৮ সালে। কয়েক জন সদস্য ছেড়েছেন। নতুন সদস্য যোগ হয়েছে। কিন্তু হইচই ফেলতে ফেলতে ২০০৩। নিজেদের এ পার বাংলার প্রথম রক-ব্যান্ড বলে দাবি করেন। যত দিন গেছে রূপম ইসলামের আকর্ষণ বেড়েছে নতুন প্রজন্মের কাছে। সঙ্গে বেড়েছে বাজারে ফসিল্সের অ্যালবামের চাহিদা। শেষ অ্যালবাম বেরিয়েছে ২০১০-এ। ইতিমধ্যে রূপম সিনেমার গানের গায়ক হিসেবে ভালই প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। |
রান্নাঘর |
সাফল্য আসছে, সম্পর্কও মধুর। এ দিকে রূপমের ব্যস্ততা বাড়ছে। গান গাইছেন, সুর দিচ্ছেন একা, বা ব্যান্ডের আর এক সদস্য অ্যালেনের সঙ্গে। যেমন, দু’জনে মৈনাক ভৌমিকের ‘বেডরুম’-এ সুর দিয়েছেন। শতাব্দী রায়ের ‘ওঁ শান্তি’তে একটি গানের সুর দিয়েছেন ও গেয়েছেন। তৃণমূলের যুব দলের থিম সং তৈরি করেছেন। তার বাইরে রূপমের লেখা দু’টো বই প্রকাশিত হয়েছে। এ মাসেই রূপমের একক অ্যালবাম ‘নিষ্ক্রমণ’ বেরিয়েছে। আবার ব্যান্ড হিসেবে ফসিল্স এ বছরের অন্যতম হিট ছবি ‘ইচ্ছে’তেও গান গেয়েছে। |
সাংসারিক হিসেব |
পিক সিজনে মাসে ১২ থেকে ১৪টা শো থাকে। সব চেয়ে বেশি ডাক আসে কলেজ ফেস্ট থেকে। কলকাতার ব্যান্ডের মধ্যে সব চেয়ে বেশি বাজারদরও তাঁদের। |
বাজারহাট |
ফসিল্সের প্রধান দর্শক যুব সম্প্রদায়। কিন্তু রূপম ছাড়া ফসিল্স ভাবা যায় না। ব্যান্ডের যে গানই হিট হোক, সেটা রূপমের গাওয়া। রূপমের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করেই ব্যান্ডের বাজারদর ঠিক হয়। |
এক কথায় |
ব্যান্ডে আমরা পাঁচ জনই মুখ্য। প্রত্যেকেই অপরিহার্য। আমার মতে যে কোনও ব্যান্ডের ক্ষেত্রে সেটাই সত্যি হওয়া উচিত
রূপম |
|
|
ভুল বোঝাবুঝির খবর নেই লক্ষ্মীছাড়া |
|
আজও যে গানের চাহিদা |
জীবন চাইছে আরও বেশি, পালিয়ে বেড়াই, কে কী বলে আমায় |
সংসারের হালচাল |
‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র প্রধান পুরুষ গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ আছে প্রথম থেকেই। ব্যান্ড হিসেবে প্রথম গানটা যখন প্রকাশ পায়, ‘লক্ষ্মীছাড়া’র সদস্যরা তখন নেহাতই বাচ্চা। সেটা ’৯০-এর প্রথম দিকে। গানটা ছিল ‘পড়াশুনোয় জলাঞ্জলি’। সেই দলের অনেকেই আর নেই আজকের ব্যান্ডে। তবে যিনি আছেন সেই প্রথম থেকে, তিনি গৌতম-পুত্র গৌরব। পেশাদারি ব্যান্ড হিসেবে অনুষ্ঠান করা শুরু অবশ্য ’৯৯ থেকে। |
রান্নাঘর |
সংসারে ঝড় এসেছিল প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের এক বছরের মধ্যেই। অন্যতম প্রধান গায়ক সায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যান্ড ছেড়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। তার পরও ধাক্কা এসেছে। ২০০৪ থেকে মোটামুটি সুখের সংসার। জয়েন্ট ফ্যামিলিতে বিরাট কোনও ভুল বোঝাবুঝির খবর এখনও পর্যন্ত নেই। ফসিল্সের উত্থানের আগে কলকাতার কিছু অংশে লক্ষ্মীছাড়াকে নিয়েই সব চেয়ে বেশি মাতামাতি হত। তবে ফসিল্সের মতো মেনস্ট্রিম হতে সময় লেগেছে লক্ষ্মীছাড়ার। |
সাংসারিক হিসেব |
ভরা মরসুমে মাসে আট থেকে ন’টা অনুষ্ঠানের ডাক আসে। |
বাজারহাট |
১০ বছরে মোটে চারটে অ্যালবাম। শেষ অ্যালবাম বছর দু’য়েক আগে। গান আর সুরের আবেদন মূলত শহরভিত্তিক। তাই এখনও ডাক আসে মূলত যুব উৎসব আর কলেজ-ইউনিভার্সিটির ফেস্ট থেকে। নতুন গানের স্টক ভালই, কিন্তু সবার কাছে অ্যাপিল নেই। |
এক কথায় |
আসলে আমাদের ব্যান্ডে কোনও এক জন তারকা নেই। কোনও এক জন তারকা হলে, সেই ব্যান্ডের ফ্যান ফলোয়িং-এ একটা সুবিধে আছে। তারা এক জনকে দেখবার জন্য আসে। আমাদের গোটা ব্যান্ডটাই তারকা। সেটাই আমাদের ইউএসপি
গৌরব |
|
|
|
|
|
|