উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
বরাহনগর
মুক্তির আশায়
র্ষা এলেই আতঙ্ক ছড়ায় বরাহনগরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বাসিন্দাদের কথায়, বরাহনগর জুড়েই এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের। বৃষ্টির জল জমে থাকে বেশ কয়েক দিন ধরে। অভিযোগ, প্রতিশ্রুতিই সার। কাজের কাজ হয়নি কিছুই। বরাহনগর পুরসভার দায়িত্বে এসে তৃণমূল পুরবোর্ড এই বিষয়টি রাজ্য সরকারের নজরে আনে। অবশেষে সেই সমস্যা সমাধানে জওহরলাল নেহরু আরবান রিনিউয়াল মিশন প্রকল্পের আওতায় বড় আকারে নিকাশি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কেএমডিএ এই প্রকল্পের কাজ করছে।
পূর্ব কিংবা পশ্চিম প্রান্তের বিভিন্ন এলাকা, বিশেষত বাগজোলা খালের ধারে বসতি এলাকায় বর্ষার জল জমার সমস্যা দীর্ঘ দিনের। এই নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ ছিল চরমে। এত বছরের বাম পুরবোর্ডের আমলে সেই সমস্যা মেটেনি বলে তাঁদের অভিযোগ। যেমন, সতীন সেন নগরের কাছেই থাকেন ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস আদক।
তিনি বলেন, “হাইড্রেন কিংবা ছোট নর্দমা দিয়ে ঘেরা বরাহনগর। অথচ, যেখানে নিকাশি জল ফেলা হবে, তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল ছিল। বর্ষাকালে তিন-চার দিন জমা জলের মধ্য দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। ফলে অসুখবিসুখও হয়। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” পুরকর্মীদের একাংশের মতে, পুর এলাকায় বর্ষার জমা জল বার করার মতো পরিকাঠামো বরাহনগরে পর্যাপ্ত নয়। বড় বড় নর্দমা থাকলেও জমা জলের সমস্যা কমেনি। নর্দমা দিয়ে বাগজোলা খাল ও গঙ্গায় বর্ষার জমা জল কিছুটা ফেলা হত। এখন বাগজোলা খাল সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে, আবার মূল পাইপটিও কার্যত রুদ্ধ। ফলে জল জমার সমস্যা থেকে গিয়েছে। প্রাক্তন পুরকর্তাদের একাংশের মতে, পরিকল্পনা করে এই জনপদ তৈরি হয়নি। জনসংখ্যা পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। এই অবস্থায় পুরসভার পক্ষে বিপুল অর্থের এ রকম প্রকল্প রূপায়ণ করা সম্ভব হয়নি। তবে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের আওতায় বাম সরকারের আমলে বাগজোলা খাল সংস্কার-সহ নিকাশি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছিল। বরাহনগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের অঞ্জন পাল বলেন, “গোটা বরাহনগর জুড়েই এই কাজ হবে। আমাদের ওয়ার্ড থেকে এই কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি, ৭২ ইঞ্চির মূল নিকাশি পাইপ সংস্কার ও বাগজোলা খালেরও সংস্কারের কাজ হবে। এই সব প্রকল্প হলে দীর্ঘ দিনের সমস্যা থেকে মুক্ত হবেন বরাহনগরবাসী।”
কেএমডিএ সূত্রে খবর, মাটির নীচে আট ফুট গর্ত করে তার সঙ্গে চার ফুট ব্যাসার্ধের পাইপ একটির সঙ্গে আর একটি যুক্ত করে বিভিন্ন আউটফলের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। পাশাপাশি, শীতলামাতা লেনে ১৭২ মিটার ও নমঃশুদ্র পাড়ায় ২৯১ মিটার বড় নর্দমা করে তার উপর ঢাকা দেওয়া হবে। এ ভাবে বিভিন্ন ওয়ার্ড জুড়ে নকশা করে এই কাজ হবে। আরও দুটি প্রকল্পে বাগজোলা খাল ও ৭২ ইঞ্চির পাইপলাইন সংস্কার করা হবে।
কেএমডিএ-র জনসংযোগ আধিকারিক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বরাহনগর পুরএলাকায় জমা জল সরাতে জেএনএনআরইউএম-এর একটি প্রকল্প গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের ব্যয় ৩৫৮৭ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা।”
বরাহনগর পুরসভায় বিরোধী দলনেতা সিপিএমের অশোক রায় বলেন, “এই প্রকল্পের ফলে সমস্যা কমা উচিত। এর আগেও আমাদের আমলে গঙ্গা স্যুয়ারেজ প্রকল্প করা হলেও আখেরে তা বিশেষ কাজে আসেনি। তবে এই প্রকল্প অনেক আগের। প্রাক্তন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের সময়ে এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল জেএনএনআরইউএম প্রকল্পের আওতায়।”
বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিকের কথায়: “বরাহনগর পুরসভাই এই প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়। গত ফেব্রুয়ারিতে এই প্রকল্প জেএনএনআরইউএম-এর অনুমোদন পায়। এর ফলে দীর্ঘ দিনের সমস্যা থেকে বরাহনগরবাসী মুক্তি পাবেন।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.