|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
সিরিটি জলপ্রকল্প |
তৃষ্ণা প্রবল |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
তিরিশ লক্ষ গ্যালন জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্পিং স্টেশনটি পুরোপুরি চালু হলে লাভবান হবে তিনটি ওয়ার্ড সমেত একটি ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা। সরবরাহ করা যাবে গার্ডেনরিচের পরিস্রুত পানীয় জল। কিন্তু, সিরিটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরির আগে জনসংখ্যার যে সমীক্ষা করা হয়েছিল তা প্রায় দশ বছর আগের। আর এই ক’বছরে প্রতি ওয়ার্ডভিত্তিক জনসংখ্যা প্রায় পনেরো শতাংশ হারে বেড়েছে। ফলে এই জলপ্রকল্প দীর্ঘকালীন সমস্যা কতটা মেটাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কলকাতা পুরসভার আওতায় এলেও সংযুক্ত এলাকার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পুরোপুরি ভাবে আজও পুরসভার পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছয়নি। তাই ১৩ নম্বর বরোর ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড় ধরে কিছু এলাকা, ১১৫, ১১৬ এবং ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা হয় সিরিটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরির। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৯ ও ২০০১ সালের জনসংখ্যার পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় সিরিটির বুস্টার পাম্পিং স্টেশনটি। ২০১০ সালে আগের পুরবোর্ড ৩০ লক্ষ গ্যালন জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সিরিটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন উদ্বোধন করে। ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় পাইপলাইন বসানোর আগেই স্টেশন থেকে আংশিক ভাবে জল সরবরাহ শুরু করে দেওয়া হয়। লাভ বলতে ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা, অর্থাৎ খালপাড়ের ধার বরাবর কিছু অঞ্চল, ১১৫, ১১৬ এবং ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি জায়গায় সামান্য জল সরবরাহ করা গেলেও বেশির ভাগ জায়গাতেই এখনও জল পৌঁছয়নি। তাই চলতি বছরে পুজোর আগে পুরসভা বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাকি জলের পাইপলাইন বসানো শুরু করেছে।
|
|
পুরসভা সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, গার্ডেনরিচে বর্তমানে দেড় কোটি গ্যালন জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। খরচ পড়ছে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। গার্ডেনরিচের এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে সেই জল নিয়ে যাওয়া হবে বেহালা দাসপাড়া সমেত সিরিটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনে। সিরিটি প্রকল্প থেকে প্রতি দিন ৩০ লক্ষ গ্যালন জল সরবরাহ করা যাবে ১৩ নম্বর বরোর তিনটি ওয়ার্ড-সহ একটি ওয়ার্ডের আংশিক অঞ্চলে। লাভবান হবে বেহালা দাসপাড়া বুস্টার পাম্পিং স্টেশনও। ফলে বেহালার বিভিন্ন এলাকায়, অর্থাৎ ১১৮, ১২১ এবং ১২২ নম্বর ওয়ার্ডে জল সরবরাহ আগের তুলনায় অনেকটাই বাড়বে।
বর্তমানে গার্ডেনরিচ থেকে বেহালা চৌরাস্তা পর্যন্ত গার্ডেনরিচের পরিস্রুত জল সরবরাহ হয়। এই পাইপলাইনকেই সম্প্রসারণ করে আনা হয়েছে সিরিটি পর্যন্ত। তৈরি হয়েছে সিরিটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন। পুরসভা সূত্রে খবর, সিরিটি পাম্পিং স্টেশন তৈরি করতে খরচ পড়ছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। আর পাইপলাইন বসাতে আরও ৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মোট প্রকল্পে খরচ প্রায় ১৭ কোটি টাকা।
পুরসভা সূত্রে খবর, সিরিটি থেকে পুরোপুরি জল সরবরাহ শুরু হলে ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড়, ১১৫, ১১৬ এবং ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পানীয় জলের সমস্যা অনেকটাই মিটবে। যদিও১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রত্না শূরের দাবি, ওয়ার্ডের তারামণি ঘাট রোড, পশ্চিম পুঁটিয়ারি কলোনিতে পুরসভার একফোঁটা জলও পৌঁছয় না। তাঁর কথায়: “বিগত বোর্ডের আমলে কথা হয়েছিল, ২ কোটি টাকা দিয়ে বেহালা চৌরাস্তা থেকে ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যানার্জিপাড়া পর্যন্ত পাইপলাইন বসানো হবে। কিন্তু সেই পাইপলাইন বসেছে ধাড়াপাড়া পর্যন্ত। তাই যত ক্ষণ পুরোপুরি জল সরবরাহ না হচ্ছে, তত ক্ষণ বোঝা যাচ্ছে না, এলাকার মানুষ এতে কতটা উপকৃত হবেন। যে পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তার তুলনায় বতর্মানে জনসংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। এখন ওয়ার্ডের মাত্র ২০ শতাংশ এলাকায় পানীয় জল পৌঁছয়।” |
|
১১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের কৃষ্ণা সিংহ অবশ্য অনেকটাই আশাবাদী। তাঁর বক্তব্য: “বর্তমানে আমার ওয়ার্ডে সিরিটি থেকে যে জল সরবরাহ হয় তা নামমাত্র। কেননা, এই মুহূর্তে গার্ডেনরিচ থেকে জল সরবরাহই চালু হয়নি। হলে জলের সমস্যা মিটবে।” তবে তিনি এ-ও বলেন, “এখন আমার ওয়ার্ডের জনসংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার আর ভোটার ১৭ হাজার। গত দশ বছরে জনসংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। তাই শুধু পরিস্রুত পানীয় জলের উপর নির্ভর করে থাকলে হবে না। যে ক’টি টিউবওয়েল রয়েছে সেগুলিও চালু রাখতে হবে।”
আবার ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শৈলেন দাশগুপ্তের বক্তব্য, “লোকসংখ্যা অনেক বেড়েছে। এখন নামমাত্র পানীয় জল আসে। বর্তমানে দশ লক্ষ গ্যালন জল সিরিটি থেকে সরবরাহ হয়। বাকি আরও ২০ লক্ষ গ্যালন চালু হলে পানীয় জলের সমস্যা অনেকটা মিটবে।”
১৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তৃণমূলের সুশান্ত ঘোষ বলেন, “গার্ডেনরিচের প্রকল্পটি তৈরি হয়ে গেলেই এই তিনটি ওয়ার্ডের পানীয় জলের সমস্যা অনেকটা মিটবে। এটা ঠিক যে জনসংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এখন প্রতিটি ওয়ার্ডকেই নির্ভর করতে হয় টিউবওয়েলের উপর। সিরিটি থেকে জল সরবরাহ শুরু হলে ওয়ার্ড তিনটিতে পানীয় জলের যে চাহিদা আছে তা মেটানো যাবে।” একই দাবি পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, “গাডের্নরিচে কাজ চলছে। সেই কাজ সম্পূর্ণ হলে সিরিটি থেকে প্রস্তাবিত জল সরবরাহ হবে। বর্তমানে এই অঞ্চলগুলিতে পানীয় জলের যে সমস্যা আছে, সিরিটি স্টেশন থেকে পুরোপুরি জল সরবরাহ হলে আপাতত সেই সমস্যা মিটবে। পরবর্তীকালে চাহিদা দেখে আমরা জলের পরিমাণ বাড়াব।” |
|
|
|
|
|