শিক কাবাবে বড়বড় করে কাটা মাংস তেমন পছন্দ হয়নি লখনউয়ের নবাবের ইংরেজ অতিথির। তখন নাকি নবাব বাবুর্চিকে হুকুম করেছিলেন এমন কোনও কাবাব বানাতে, যা মুখে দিলেই জিভের সঙ্গে মিশে যাবে। আর বাবুর্চি বানিয়ে এনেছিলেন বিখ্যাত ‘কাকোরি কাবাব’। নবাবি হেঁশেলের বিশিষ্ট এই কাকোরি কাবাব এখন পরিচিত দেশ-বিদেশের নানা জায়গাতেই। কিন্তু মাংসের সঙ্গে পেঁপের অভাবনীয় মিশেলে তৈরি এই আওয়াধি খানা যে অনায়াসেই পৌঁছে দিতে পারে মোগলাই রসনার ইতিহাসে, তার খোঁজ আর রাখেন কজন!
|
অতিপরিচিত এই কাবাব নাকি প্রথম তৈরি হয়েছিল কোনও এক দরগায়। যে জায়গার নাম এখনও বয়ে চলেছে এই কাকোরি কাবাব। সময়ের সঙ্গে রসনা-প্রণালীর মজে ওঠার আরও অনেক গল্প জড়ো হয়েছে লখনউয়ের সংস্কৃতির আনাচ-কানাচে। শোনা যায়, এক-এক ধরনের কাবাব বানাতে সেখানে ব্যবহার হত প্রায় ১৬০-১৭০ রকমের মশলার। তা তৈরিও করতেন নবাবের বাবুর্চিরা নিজের হাতে। সেই মশলা নিজেদের হাতে বানানোর ধারা এখনও বহন করছেন সেখানকার মহিলারা। নিভু আঁচে রান্না কী ভাবে ওই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠল, নানা ব্যাখ্যা তৈরি হয়েছে সে কথা ঘিরেও। |
তেমন সব মশলা দিয়ে দম কায়দায় রাঁধা নানা স্বাদের মোগলাই খাবার এ বার চেখে দেখা যায় এ শহরে বসেও। বাইপাসের ধারের ‘সিগরি’র শেফেরা নানা জায়গা ঘুরে শিখে এসেছেন সেই সব পাকপ্রণালী। শুরু হয়েছে সেখানে লখনউয়ের নানা সুখাদ্য নিয়ে উৎসব। বিভিন্ন ধরনের জিনিস দিয়ে নিজেদের রান্নাঘরে মশলা বানিয়ে এ শহরে বসেই তৈরি হচ্ছে লগান কা মুরগ, কুন্দন কালিয়া, মুরগ কে পরচে, গিলাওয়াত কে গোস্ত কাবাবের মতো সব বাদশাহি খানা। সঙ্গে অবশ্যই থাকছে নান, রুমালি রুটির পাশাপাশি বেশ কয়েক ধরনের বিরিয়ানিও।
কিন্তু চেনা বিরিয়ানি, কাবাব আর গোস্তে কখনওই সীমিত ছিল না লখনউয়ের নবাবদের পঞ্চব্যঞ্জন। নানা নিরামিষ পদও বরাবরই সেখানকার মোগলাই হেঁশেলের হিস্সা। ঘরে ঘরে তৈরি হয় লাউ, ভিন্ডি, গাজরের মতো নানা সব্জি দিয়ে রকমারি স্বাদের রান্না। তবে তা চেখে দেখতে নাকি যেতে হবে ওই শহরে। কারণ,লখনউয়ে মা-কাকিমাদের হাতের লজিজ লউকি বা দম-কা-ভিন্ডি ততটা পরিচিত হয়নি দেশের অন্যান্য জায়গার রেস্তোরাঁমহলে। এই উৎসবে থাকছে তেমন কিছু নিরামিষ রান্না চেখে দেখার সুযোগও। সেখানকার হেঁশেল থেকে শেফেরা তুলে এনেছেন পনির নজাক্কত, বাঘদান ডালের মতো নানা পদের প্রণালী। সেই সব চটপটা রকমারি খাবারের পরে শেষ পাত জমিয়ে তুলতে থাকছে নরম তুলতুলে বাদশাহি মিঠাই জৌজি হাল্ওয়া সোহন।
শীত শুরুর কলকাতায় কোনও একটা দুপুর বা সন্ধ্যা এমন ভোজের সঙ্গে নবাবি মেজাজে কাটলে মন্দ কী! |