ব্ল্যাক বোর্ডের সামনে সুব্রত ভট্টাচার্য। হাতে চক-পেন্সিল। সামনে বাধ্য ছাত্রের মতো বসে ড্যনিয়েল জিলানি।
অ্যালান গাও, রবিন সিংহ, পেন ওর্জিমোহন টিডি-র মুখে ঘুরে ফিরে আসছে লাল-হলুদের নানা ফুটবলারের নাম। রবিবারের ডার্বিতে কোথায় কী ভাবে আক্রমণে আসবেন ওঁরা, কোন রাস্তায় আটকাতে হবে বলে যাচ্ছেন সুব্রত। বোঝাচ্ছেন ডার্বি ম্যাচের গুরুত্ব। আর ছয় ফুট দু’ ইঞ্চির অস্ট্রেলীয় মাথা নাড়াচ্ছেন জোরে জোরে অস্ফুট স্বরে বলছেন, “ও-কে, ও-কে”।
মাঠের পাশে বহু দিন পর পাশাপাশি বসে চুনী গোস্বামী, প্রদীপ চৌধুরী আর সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়মোহনবাগান টেকনিক্যাল কমিটির তিন সদস্য। সবার চোখ ‘সাহেব’-এর (চুনীর দেওয়া ড্যানিয়েলের নতুন নাম) দিকে। ভেসে আসছে টুকরো টুকরো নানা মন্তব্য‘‘ছেলেটা স্টপারে খারাপ হবে না। ব্যারেটোর সঙ্গে তো লড়ে যাচ্ছে দেখছি,’’ পাশ থেকে অন্য জনের মন্তব্য, ‘‘স্টোরির চেয়ে মনে হচ্ছে স্পিড ভাল। বলটা ঠিক সময়ে ধরছে,’’ তাঁকে থামিয়ে দিয়ে আর এক জন, ‘‘অনুশীলন আর মাঠে নেমে খেলার মধ্যে কিন্তু অনেক পার্থক্য। ডিফেন্সটাই আমাদের চিন্তা।”
অনুশীলনের পর চুনী এগিয়েও গেলেন ড্যানিয়েলের দিকে। পরামর্শ দিলেন। বুঝতে অসুবিধা হল না, মোহনবাগানের জয়-পরাজয়ের সঙ্গে লাখ লাখ সমর্থকের সঙ্গে ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার জড়িয়ে পড়েছেন। বহু দিন পর। ওতপ্রোতভাবে।
ওডাফা, ব্যারেটো, সুনীল, নবি, জুয়েলপ্রচুর তারকা হাজির শুক্রবার সকালের মোহনবাগান অনুশীলনে। কিন্তু বড় ম্যাচের আট চল্লিশ ঘণ্টা আগে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এক জনইশুক্রবার দুপুরে সই সেরে ফেলা ড্যানিয়েল। রক্ষণের অন্যতম স্তম্ভ আনোয়ার আলি চোটের জন্য বড় ম্যাচে পাকাপাকি বাইরে চলে গেলেন এ দিনই। ফলে ড্যানিয়েলকে নিয়েই আশা আর আশঙ্কার চোরা স্রোত পালতোলা নৌকোর নীচে। শুধু মাঠে আসা সদস্য-সমর্থকরা নন, টুইটার ফেসবুকেও নানা রকম মন্তব্য উপচে পড়ছে মোহনবাগানের নতুন বিদেশিকে নিয়ে। পর পর দু’বছরে ডায়মন্ডস্টার আর সাইমন স্টোরির ব্যর্থতা দেখে আশঙ্কায় ডুবে থাকা সকলেরই প্রশ্নড্যানিয়েল ডোবাবেন না তো? পারবেন গাও-পেনকে সামলাতে?
|
ড্যানিয়েলকে নিয়ে কৌশল সাজাচ্ছেন সুব্রত। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
অনুশীলনে সুব্রত-প্রশান্তরা ড্যানিয়েলকে ব্যবহার করলেন প্রথমে ডিফেন্সিভ স্ক্রিনে। ডাহা ফেল! পরে স্টপারে। কিংশুক দেবনাথের পাশে। ম্যাচে উল্টো দিকে খেলা ওডাফা-ব্যারেটোকে সামলালেন বেশ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে। তবে একটা পেনাল্টিও উপহার দিলেন। নিজেদের বক্সে ফাউল করে। দেখে মনে হল, বাঁ পাটা ভাল। লম্বা হওয়ায় হেডও। চিৎকার করে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাও আছে। কিন্তু রক্ষণ-দক্ষতা আশানুরূপ নয়। পাসিংয়েও দুর্বলতা প্রকট।
ড্যানিয়েল জিলানি অবশ্য সব আশঙ্কাকেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন! “টোলগেকে আগে থেকে চিনি। ও অস্ট্রেলিয়ার প্রিমিয়ার ডিভিসনে খেলত। আমিও। ও তো খেলছে না। অ্যালান গাও-কে অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে দেখিনি। তবে এখানে একটা ম্যাচে দেখেছি। ওকে কিছুতেই গোল করতে দেব না।” অনুশীলনের পর জিমে ঢোকার মুখে বলছিলেন বড় ম্যাচে সুব্রতর ‘ঝুঁকির বাজি’ ড্যানিয়েল। স্বীকার করলেন, “এক লাখ লোকের সামনে কখনও খেলেনি। তবে অ্যাস্ট্রোর্টাফে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সমস্যা হবে না। সিডনি অলিম্পিক ক্লাবের হয়ে খেলেছি এ রকম টার্ফে।” তাতে অবশ্য আশঙ্কা যাচ্ছে না কোচ প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। বলছিলেন, “দু’-একটা কলকাতা লিগের ম্যাচ খেলিয়ে নিয়ে ওকে নামালে ভাল হত। কিন্তু যা অবস্থা সে সুযোগ নেই।” সঙ্গে মোহন-কোচের সংযোজন, “ব্যারেটো-ওডাফা-সুনীল আছে। গোলের চিন্তা করছি না। কিন্তু ডিফেন্সে এত চোট-আঘাত? চিন্তা তো সেটা নিয়েই।”
সুব্রত ডার্বি ম্যাচের দু’দিন আগের অনুশীলনের বেশির ভাগ সময় ব্যায় করলেন রক্ষণ সংগঠনে। আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতে রহিম নবিকে মোহনবাগান তুলে আনছে মাঝমাঠে। নবির ফেলে যাওয়া জায়গায় লেফট ব্যাক খেলবেন সম্ভবত ধনরাজন। ফলে রক্ষণটা দাঁড়াচ্ছে এই রকমসুরকুমার, কিংশুক, ড্যানিয়েল ও ধনরাজন। দুই স্টপারের সামনে রক্ষণ-পর্দা রাকেশ মাসি। মাঝমাঠে বাকি তিনজুয়েল, ব্যারেটো আর নবি। সামনে ফুরফুরে মেজাজে থাকা ওডাফা ওকোলির সঙ্গে দেশের হয়ে জোড়া গোল করে আসা সুনীল। “দৌড় চাই দৌড়। ওদের দৌড়টা আটকাতে হবে, পাল্টা দৌড়তে হবে” অনুশীলনের সময় খেলা থামিয়ে বলছিলেন সুব্রত। কিছুটা মরিয়া ভঙ্গিতেই।
সবুজ-মেরুনের পোড়খাওয়া ‘নম্বর সিক্সটিন’ বার বার বুঝিয়ে দিচ্ছিলেনমরিয়া না হলে এই ম্যাচ জেতা যায় না। |