মরসুমের প্রথম ডার্বি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকেই এগিয়ে রাখছেন ইপিএলের দুই প্রাক্তন তারকা ফুটবলার জন বুরিজ এবং কার্লটন পামের।
কলকাতায় এসেই চলে এসেছিলেন হোটেল লাগোয়া স্টেডিয়ামে। শুক্রবারের ঠা ঠা রোদে প্রায় এক ঘণ্টা এক টানা দাঁড়িয়ে ট্রেভর মর্গ্যানের অনুশীলন দেখলেন দু’জনেই। কথা বললেন ইস্টবেঙ্গল কোচের সঙ্গে। আর তার পর একই ধরনের প্রতিক্রিয়া বেরিয়ে এল। প্রথমে পামের বললেন, “মোহনবাগানের চেয়ে অনেক এগিয়ে ইস্টবেঙ্গল। ওদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হল গতি। আমার মতে রবিবারের ম্যাচ ২-০ গোলে জিতবে ইস্টবেঙ্গল। খুব খারাপ হলে ১-১ ড্র।” বুরিজেরও এক মত, “ইস্টবেঙ্গলই এগিয়ে।”
টেন অ্যাকশন প্লাস চ্যানেলে বিশেষজ্ঞের কাজ করার সুবাদে আই লিগের সব দলগুলোকে দেখেছেন দুই তারকা। দুবাইয়ের স্টুডিওতে বসে। সেই সুত্রেই বড় ম্যাচ নিয়ে কথা বলছিলেন দু’জনে। কিন্তু তাঁদের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা ভাল হল না। কারণ ইস্টবেঙ্গল অনুশীলনের পাশেই চলছিল একটি স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া।
মোহনবাগান নয় কেন? মেহতাব হোসেন এবং টোলগে ওজবের মতো দুই গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারকে পাচ্ছে না ইস্টবেঙ্গল। আর সেখানে আনোয়ার ছাড়া সবাইকে নিয়ে নামছে মোহনবাগান। ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলা পামেরের যুক্তি, “যে দল এক বছরে চারটে কোচ পরিবর্তন করে, তাদের সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। দলের মানসিকতায় প্রভাব পড়ে। সেখানে মর্গ্যান দু’বছরে দলটাকে খুব ভাল সাজিয়েছে। তবে একটা কথা অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি। ডার্বিতে প্রথম গোলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রবিবারের ম্যাচে যে আগে গোল করবে, সেই এগিয়ে থাকবে।”
|
গাও-এর সঙ্গে ইপিএলের দুই প্রাক্তন বুরিজ (বাঁ দিকে) ও পামের। -নিজস্ব চিত্র |
প্রাক্তন দুই তারকা ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে রাখলেও, মর্গ্যানের ফ্রি কিক স্পেশালিস্ট অ্যালান গাও কিন্তু বেশ সতর্ক। উল্টে ওডাফাকে সমীহ করে তিনি বললেন, “ওডাফা খুব ভাল ফুটবলার। আমাদের ওকে একটু দেখে খেলতে হবে।” টোলগের অনুপস্থিতিতে কি চাপটা একটু বেশি? গাও বলছিলেন, “টোলগে না থাকায় আমরা আরও তেতে আছি। যে করেই হোক ম্যাচটা জিততে চাই।” গাওয়ের একটু দূরেই দাঁড়িয়ে লাল-হলুদ অধিনায়ক সঞ্জু প্রধান বলছিলেন, “মোহনবাগানের অ্যাটাকিং লাইন খুব ভাল। সবচেয়ে বেশি ভয় ব্যারেটোকে। যে কোনও জায়গা থেকে গোল করতে পারে। ওদের আক্রমণের জবাব প্রতি আক্রমণে দিতে চাই।” চোটের জন্য সম্ভবত পাইতেকে শুক্রবারের ম্যাচে পাচ্ছে না ইস্টবেঙ্গল। এ দিকে, রবীন্দর সিংহকে নথিবদ্ধ করানো হল ইস্টবেঙ্গলে।
যুবভারতীর কৃত্রিম ঘাস নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা বিতর্কের ঝড় উঠলেও, ইপিএলের দুই প্রাক্তন তারকা কিন্তু স্টেডিয়ামের মাঠকে তাঁদের সাটিফিকেট দিচ্ছেন। পামের কথায়, “কে বলে এই মাঠ ফুটবলের জন্য যোগ্য নয়? এত সুন্দর মাঠে যারা চোট-আঘাত পায়, তারা ফুটবল খেলারই যোগ্য নয়।” এক মত বুরিজেরও। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, নিউ ক্যাসল ইউনাইটেড এবং অ্যাস্টন ভিলার মতো বিশ্বের প্রথম সারি ক্লাবে খেলে আসা গোলকিপার বুরিজ বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালেন ইস্টবেঙ্গলের তরুণ গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিংহের সঙ্গেও। গুরপ্রীতের উচ্চতা দেখে মুগ্ধ তিনি। বললেন, “গুরপ্রীতকে দারুণ লাগল। এত বড় চেহারা বিদেশেও নেই। কাজে লাগাতে পারলে অনেক দুর যাবে ছেলেটা। বিদেশের কোনও ক্লাবে ট্রায়ালে ডাকলে প্রথমে দুটো জিনিসই দেখা হয়। কম বয়স আর উচ্চতা। গুরপ্রীতের দু’টোই আছে।” গুরপ্রীতের পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার কোচ অতনু ভট্টাচার্যের সঙ্গেও নানা আলোচনা করলেন বুরিজ। দিলেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শও।
মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এখনও অপরাজিত লাল-হলুদ কোচ ট্রেভর মর্গ্যান। মোহনবাগানে সুব্রতর উপস্থিতি কি ছবি পাল্টে দিতে পারে? মর্গ্যান বললেন, “আমরা মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলব। কোচের বিরুদ্ধে নয়। তাই প্রতিপক্ষ ফুটবলার কে আছে সেটা আমার কাছে বেশি জরুরি। কোচ নয়।” এ দিকে বড় ম্যাচে খেলতে না পারার আফসোস যাচ্ছে না মেহতাবের। এ দিন অনুশীলনে এলেও সারাক্ষণ কাটালেন মাঠের বাইরে বসেই। যাওয়ার আগে শুধু বলে গেলেন, “ফেডারেশন কাপ ফাইনাল খেলাটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। পুরো সুস্থ না হলে আর ঝুঁকি নিতে চাই না।”
মেহতাবের অভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে পেন ওর্জির ভূমিকা। পেন স্পষ্ট বললেন, “চাপটা মোহনবাগানের উপর। গতবার চারটে জিতেছি আমরা। যতক্ষণ না ওরা জিতছে, চাপটা থাকবে ওদের উপর।” তার পরের কথাটা আরও চমকে দেওয়ার মতো, “যে দু’জন ই পি এল তারকা এখানে এসেছেন, তাঁদের সামনে আরও ভাল খেলতে চাই। আমি ওদের ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না। তবে আমি যদি ভাল খেলতে পারি, তা হলে ওঁরা আমায় চিনবেন।” |