‘ক্যাপ্টেন হো তো অ্যায়সা!’
দিনের প্রথম তিরিশ মিনিটের মধ্যে পেসার সুধীন্দ্রর বলে ক্লিন বোল্ড সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে বাংলা ৩৩৭-৪। আধঘণ্টা যেতে না যেতে উইকেটকিপারের গ্লাভসে বল তুলে দিয়ে ফিরে গেলেন ঋদ্ধিমান সাহা-ও। বাংলা ৩৫৪-৫। হাতঘড়ির কাঁটা দশ থেকে এগারোটা ছোঁয়ার মধ্যে জোড়া উচ্ছ্বাস মধ্যপ্রদেশ শিবিরে। ঈশ্বর পাণ্ডের বলের আলতো টোকায় পড়ে গিয়েছে লক্ষ্মীরতন শুক্ল-র বেল। মিনিট কুড়ি পরে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেলেন সামি আহমেদ-ও। সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঠের সবুজ-সাদা স্কোরবোর্ড বলছে, বাংলা ৪০৪-৭।
হবে না? প্রথম দিনের শেষে বড় রানের যে শক্তপোক্ত ভিতটা তৈরি করেছিলেন মনোজ তিওয়ারি এবং অরিন্দম দাস, তার উপর প্রাসাদ দূরে থাক, সামান্য দোতলা বাড়ি তুলতেই তো বাংলার মিডল ও লোয়ার ব্যাটিং অর্ডার হিমসিম। উপায়? আর কী, সেই পুরনো স্ক্রিপ্ট।
‘ক্যাপ্টেন শরণং গচ্ছামি!’ |
প্রথম দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, শুক্রবার সেখান থেকেই শুরু করলেন ক্যাপ্টেন মনোজ। প্রথম আধঘণ্টা সৌরভ ছাড়া গোটা দিন ক্রিজের অন্য প্রান্ত থেকে বলতে গেলে কোনও সমর্থনই পেলেন না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এক দিনের দল বাছার আগে জাতীয় নির্বাচকদের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার এর চেয়ে ভাল মঞ্চ পেতেন না বাংলা অধিনায়ক। যার সামনে ভারতীয় দলের দরজা খুলেও বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তিনি আজ দেখিয়ে দিয়ে গেলেন, নির্বাচকেরা যতই মুখ ঘুরিয়ে থাকুন, আমি লড়াই ছাড়ব না। উল্টো দিকে যে কোনও এক জন ব্যাটসম্যান ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে গেলেই তিনশো-র ম্যাজিক সংখ্যায় পৌঁছে যেতেন বাংলা অধিনায়ক। ট্রিপল সেঞ্চুরিটা তাঁর প্রাপ্যও ছিল আজ। হল না।
কিন্তু আগের ম্যাচেই ১৩২ রানের ইনিংসের ঠিক পরে আসা ২৬৭-ই বা কম কী? দু’দিন মিলিয়ে সাড়ে আট ঘণ্টা ক্রিজে থেকে রঞ্জিতে নিজের সর্বোচ্চ স্কোরই শুধু করলেন না মনোজ। ভারতের জার্সি পরার দৌড়ে তাঁর চেয়ে এগিয়ে যাওয়া সুরেশ রায়না, রবীন্দ্র জাডেজাদের দিকে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজই শুধু নয়। সামনে আছে অস্ট্রেলিয়া সফরও। মনোজ বোঝালেন, পন্টিংদের দেশে যাওয়ার ভিসা পাওয়ার আশা তিনি ছাড়ছেন না। |
কেরিয়ারের প্রথম দিকে তাঁর ব্যাট যে রকম গর্জে উঠত, হালফিল সেই গর্জন আর শোনা যায় না। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং ছেড়ে মিডল অর্ডার ব্যাটিং ধরনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন নিজেকে। শুক্রবারের মনোজ তাই অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত, দায়িত্ববান। ছাত্রের খেলা দেখতে আসা মানবেন্দ্র ঘোষের গলায় তাই গর্ব থাকা স্বাভাবিক। “ডিফেন্সে দারুণ উন্নতি করেছে মনোজ। প্রচুর খেটেছে। শট খেলা নিয়ে তো কোনও দিনই ওর সমস্যা ছিল না।”
তবুও দিনের শেষে বলা যাবে না, রোদ্দুর পুরো উঠেছে। মনোজের নায়ক হওয়ার দিনে তাঁর টিমের মাথার উপরে কিন্তু মেঘলা আকাশ। গ্রুপের অন্যতম সহজ টিমের বিরুদ্ধে যতটা আশা করা গিয়েছিল, তত বেশি রান তোলা গেল না। তার পর তিন ঘণ্টার উপর বল করে বাংলার বোলাররা তুলেছেন মাত্র একটা উইকেট। ক্রিজে থাকা নমন ওঝা (৬০ ন.আ.) এবং মণীশ মিশ্র (২০ ন.আ.) দু’জনেই ছন্দে রয়েছেন।
গত বছর লক্ষ্মীর আড়াইশোর মর্যাদা দিতে পারেননি রণ-দিন্দারা।
মনোজেরটা-র দিতে পারবেন?
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ৪৯৬ অল আউট
(মনোজ ২৬৭, অরিন্দম দাস ১০৫, সৌরভ ৪৭, ঈশ্বর পাণ্ডে ৪-১১৫)।
মধ্যপ্রদেশ ১৩৬-১
(নমন ৬০ ব্যাটিং, জলজ সাক্সেনা ৪৬, সামি আহমেদ ১-৩৫)। |