তুলি হাতে রং ছড়িয়ে কলকাতা ছাড়লেন তেন্ডুলকর
ই দেখুন, উনি আঁকছেন। হাতে ব্যাট নয়, তুলি। সামনে বাইশ গজের চেনা ভূখণ্ড নয়, অচেনা ক্যানভাস। নিরানব্বইটা সেঞ্চুরি মালিক যাতে আঁচড় কাটছেন অনভ্যস্ত হাতে। আগে কখনও কোথাও দেখতে না-পাওয়া দৃশ্যপট চোখের সামনে।
আঁকছেন, মন দিয়ে ছবি আঁকছেন সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। ক্রিকেট অধীশ্বরের তুলির আঁকিবুকিতে বর্ণিল হয়ে উঠছে ক্যানভাস। ওই দেখুন, সচিন আঁকছেন!
শততম সেঞ্চুরি ইডেনে হল তো না তো কী, বৃহস্পতিবার বিকেলে মুম্বই রওনা হওয়ার আগে কলকাতাকে রাঙিয়ে দিয়ে গেলেন সচিন তেন্ডুলকর। বিমানবন্দর যাওয়ার পথে বাইপাসের ধারে এক বহুতলে শিল্পী সনাতন দিন্দার স্টুডিওতে তৈরি হল ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে ব্যাটের বদলে ‘ক্রিকেটের ভগবান’-এর হাতে উঠে এল তুলি।
সামনে বিশাল সাদা ক্যানভাস, সচিনের বাঁ হাতে ধরা তুলি। রঙের প্যালেটে লাল-নীল-সবুজেরই মেলা বসেছে। পরম যত্নে তুলি তুলে নিয়ে সচিন ডোবালেন নীল রঙে, ক্যানভাসে দিতে লাগলেন আঁচড়। হাত লাগাতে বললেন সনাতনকে। যিনি বললেন, “সচিন, এত রঙ থাকতে নীল কেন?” সংক্ষিপ্ত উত্তর এল, “আমার ভাল লাগে।”
শুরু হল ছবি আঁকার যুগলবন্দি। সনাতন একটা আঁচড় দেন তো সচিন আর একটা। হাসতে হাসতে বলেন, “আমার মেয়ে সারা ছবি আঁকতে খুব ভালবাসে। আঁকেও। কিন্তু আমি ছবি ভালবাসলেও আঁকতে পারি না। জীবনে এই প্রথম এত বড় ক্যানভাসে ছবি আঁকছি!”
অচেনা সচিন
ক্যানভাসে তুলির আঁচড়। শিল্পী সচিন তেন্ডুলকর।
বৃহস্পতিবার শহরের একটি স্টুডিওয়।
আগে আঁকেননি কোনও দিন? গায়ে বিশ্ববিখ্যাত জিওর্জিও আর্মানির ডিজাইন করা ধূসর রঙের শার্ট, পরনে নেভি ব্লু জিন্স। তুলির টান দিতে দিতে হাসলেন সচিন, “না না, আমি আবার আঁকতে পারি নাকি? কিন্তু বরাবর ভাল ছবির ভক্ত। যেখানেই ভাল ছবি পাই, কিনি। জানেন হুসেন সাহেব আমাকে একটা ছবি দিয়েছিলেন। ঘোড়া। হর্স সিরিজ। আমার বেডরুমে টাঙানো আছে। যেমন আছে সনাতনের একটা ছবি।”
কত বিস্ময়কর হতে পারে সৃষ্টির মুহূর্ত, দু’হাত দূরে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দেখছিলাম। কী পরম যত্নে সচিনের বাঁ হাত খেলা করছে ক্যানভাসে, এক একটা আঁচড় যেন এক একটা স্ট্রেট ড্রাইভ। এক বার তুলি পাল্টে তুলে নিলেন সবুজ রঙ। প্রায় মিনিট পনেরো ধরে চলল ছবি আঁকা। তুলির শেষ টান দিয়ে সনাতন বললেন, “ছবির তলায় সই করবে না?” সচিন মাথা নাড়েন, “আমি? এত সুন্দর ছবিটা তুমি ছাড়া আঁকা হত নাকি? আমি কি সই করতে পারি?” আবার অনুরোধ এবং এ বার এক কথায় রাজি। কিন্তু দিলেন অদ্ভুত শর্ত। তেন্ডুলকর লিখে যে ভাবে সই করেন, ভক্তদের অটোগ্রাফ দেন সে ভাবে সই করবেন না। বললেন, “এত সুন্দর ছবিটা আমি আঁকিনি, শুধু তোমাকে একটু সাহায্য করেছি। তাই তেন্ডুলকর লিখে সই করতে পারছি না। স্রেফ সচিন লিখে সই করে দিই, কেমন?”
সই করে আনন্দবাজারকে বললেন, “স্রেফ সনাতনের ছবি দেখব বলে এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে এখানে এসেছিলাম। আমার নতুন বাড়ির জন্য একটা গণেশের ছবি দরকার। এই চার ফুট বাই চার ফুট মতো সাইজ।” বলা মাত্র কাজ। শিল্পীর নির্দেশে তাঁর সহকারীরা স্টুডিও থেকে বার করে নিয়ে এলেন ফাইবার গ্লাসের গণেশ। সচিন বললেন, “না না, মূর্তি নয়, আমি আঁকা গণেশ চাইছি। অ্যাবস্ট্রাক্ট কিছু। আর নীল রঙ থাকলে ভাল হয়।” কেমন গণেশ পছন্দ আপনার? সোফায় হেলান দিয়ে বসে তত ক্ষণে চায়ে চুমুক দিয়েছেন সচিন।
বললেন, “গণেশের শুঁড় বাঁ দিকে হতে হবে। আমাদের বাড়িতে সব গণেশেরই শুঁড় বাঁ দিকে। সেটাই ধর্মীয় রীতি।” ইতিমধ্যেই সামনে হাজির নলেন গুড়ের সন্দেশ। মুখে পুরতে পুরতে সচিন বললেন, ‘‘অসাধারণ। কলকাতা ছাড়া এই সন্দেশ কোথাও পাওয়া যাবে না।”
সচিনের সই করা সেই ছবি।
অপেক্ষা করেছিল আরও বিস্ময়। শততম সেঞ্চুরির জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে শিল্পী এ বার সচিনের হাতে তুলে দিলেন ফাইবার গ্লাসের তৈরি একটি জ্যাকেট, যার বুকে লেখা, “প্রিয় সচিন, একশো সেঞ্চুরির জন্য শুভেচ্ছা রইল।” শিশুর মতো খুশিতে ফেটে পড়ে সচিন বললেন, “বাহ, অপূর্ব। কত দিন লেগেছে এটা বানাতে?” উত্তরে এক দিন শুনে হেসে বললেন, “সনাতন দেখছি টি-টোয়েন্টির স্টাইলে ব্যাটিংটা ভালবাসে!” মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর ডেভিডের কথা জানেন, ‘ভেনাসের পুনর্জন্ম’ নামের একটা সিরিজ দেখতে দেখতে শিল্পীকে প্রশ্ন করলেন, “এই ছবিটা আঁকতে কত দিন লেগেছে?” ‘দেড় মাস’ শুনে আবার হাসি, “তা হলে তো তুমি টেস্ট ব্যাটিংটাও পারো!”
কথায় কথায় উঠল স্কুল ক্রিকেটে অর্জুন তেন্ডুলকরের আট উইকেট পাওয়ার প্রসঙ্গ। বললাম, আনন্দবাজারের খেলার পাতায় অর্জুনের ছবিও বেরিয়েছে। সচিন মাথা নাড়েন, “এ সব না হলেই ভাল। এই তো সবে খেলতে শুরু করল!” বরং বললেন, “আমার মেয়ে শিল্পী সৈয়দ হায়দর রাজার ছবি খুব ভালবাসে। ওঁর আঁকা একটা সিরিজ ও এখন আঁকার চেষ্টা করছে।”
বিশ্বের যেখানে যান, ছবি কেনেন? সচিনের উত্তর, “নিশ্চয়ই। ভাল ছবি পেলেই আমি কিনি।” বাইরে নিরাপত্তারক্ষীরা তৈরি, শিল্পীর কাছে গণেশ এঁকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করে ‘গুডবাই’ বলে লিফটের দিকে এগোলেন তিনি।
ক্যানভাসে রং ছড়িয়ে শহর ছাড়লেন সচিন। এখন প্রার্থনা, একশোতম একশোর রঙে রঙিন হয়ে উঠুক ওয়াংখেড়ে, যেখানে হাতে থাকবে তুলি নয়, ব্যাট।
থাকবে অচেনা ক্যানভাসের বদলে চেনা বাইশ গজের ভূখণ্ড। কে বলতে পারে, ওখানেই হয়তো শবরীর প্রতীক্ষা শেষ?

ছবি: সব্যসাচী সরকার




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.