বিডিও-র দেওয়া ‘শাস্তি’তে আরও সবুজ হয়ে উঠছে গোঘাটের গৌরাঙ্গবাটি গ্রাম।
মাস খানেক আগে স্থায়ী দুর্গামণ্ডপ করার জন্য ওই গ্রামের একটি বিতর্কিত জমির তিনটি গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছিলেন কয়েক জন গ্রামবাসী। তা নিয়ে অভিযোগ পেয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট রঘুবাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং গোঘাট-১ এর বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল। ‘শাস্তি’ হিসাবে তিনি গ্রামবাসীদের নির্দেশ দেন, গাছ বিক্রির টাকা ব্লক অফিসে জমা দিতে হবে এবং যত গাছ কাটা হয়েছে, অন্তত তার দ্বিগুণ লাগাতে হবে। ‘শাস্তি’র টাকা এখনও জমা দিতে পারেননি গ্রামবাসীরা। কিন্তু বুঝেছেন গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা। তাই, গত শুক্রবার রীতিমতো শাঁখ বাজিয়ে, উলু দিয়ে ২৭টি গাছের চারা রোপণ করেছেন ওই জমিতে। তার পরে আরও দু’দিন গাছ পোঁতা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিডিও-র কাছে আবেদন গিয়েছে, আরও গাছের চারা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে। |
গ্রামবাসীদের এই কাজে অভিভূত প্রশাসনের কর্তারা। বিডিও বলেন, ‘‘গাছের চারা চেয়ে প্রচুর আবেদন আসছে আমাদের কাছে।” বন দফতরের আরামবাগ শাখার চাঁদুর রেঞ্জের অফিসার চন্দ্রশেখর মাহাতো বলেন, “বিডিও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গাছ কাটা হলে তিনি হস্তক্ষেপ করতেই পারেন। গ্রামের মানুষও দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।”
কী বলছেন গৌরাঙ্গবাটির বাসিন্দারা?
গাছ কাটতে গেলে যে সরকারি ভাবে অনুমতি নিতে হয়, এ কথাটাই তাঁরা জানতেন না। আরামবাগ শহর থেকে ওই গ্রামে ঢুকতে গেলে সামনেই বিতর্কিত জমিটি। জমির কিছুটা সরকারি, কিছুটা ব্যক্তি মালিকানাধীন। তার মাপজোক নিয়ে বিতর্ক থাকায় বিষয়টি ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর দেখভাল করছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। গ্রামবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে ওই জমিতে নানা পুজো করে আসছেন। এ বার দুর্গাপুজোর আগে তাঁরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, ওই জমিতে স্থায়ী দুর্গামণ্ডপ বানাবেন। এ জন্যই তাঁরা জমির তিনটি গাছ কেটে ফেলেন।
স্থায়ী দুর্গামণ্ডপ আর হয়নি। প্রশাসন তার আগেই হস্তক্ষেপ করে। গ্রামবাসীদের তরফে শিশির ঘোষ এবং জয়দেব ঘোষ বলেন, “গাছ কাটতে গেলে যে অনুমতি নিতে হয়, কী ভাবে তা নিতে হয়, তা আমরা কিছুই জানতাম না। সরকারি স্তরে কোনও প্রচার নেই। তাই গাছ কাটি।” শিশিরবাবুর প্রতিবেশী পরেশ পাল বলেন, “তিনটি গাছ বিক্রি করে ১২ হাজার টাকা পেয়েছি। কিন্তু সেই টাকা ব্লক অফিসে এখনই জমা দিতে পারছি না। তবে পরে দিয়ে দেব।” আরও কয়েক জন গ্রামবাসী জানান, বিডিও-র দেওয়া ‘শাস্তি’কে গ্রামে ‘উৎসব’ হিসাবে বরণ করা হয়েছে। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন গাছের পরিবেশগত মূল্য। সামাজিক দায়িত্ব পালনে তাঁরা এককাট্টা।
বনভূমি রক্ষায় প্রচারে যে কিছুটা খামতি থেকে যাচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত স্তর, ব্লক স্তর এবং বনবিভাগ থেকে প্রচারের কাজ চলে। বনভূমি রক্ষার নানা ব্যবস্থাও রয়েছে। আরও ব্যাপক প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
গ্রামবাসীরা এখনই ১২ হাজার টাকা দিতে না-পারলেও তাঁদের চাপ দিতে নারাজ বিডিও। তিনি বলছেন, গ্রামবাসীদের মধ্যে যে শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, সেটাই বা কম কী! |