সরকারি হাসপাতালগুলিতে শিশুদের চিকিৎসা যাহাতে যথাযথ রূপে হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাহার জন্য উদ্যোগী হইয়াছেন। যে সকল শিশু সংকটজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হইবে, তাহাদের অহোরাত্র চিকিৎসা এবং যত্ন প্রয়োজন। সেই পরিষেবা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল আধিকারিক ও কর্মী তৎপর হইবার নির্দেশ পাইয়াছেন। সরকারি হাসপাতালে মাতা এবং শিশুর চিকিৎসা কী রূপে যথাযথ করা যায়, তাহা খতাইয়া দেখিবার জন্য মুখ্যমন্ত্রী একটি টাস্ক ফোর্সও গঠন করিয়াছেন। শুভ উদ্যোগ। সাধুবাদের অনতিপরেই অবশ্য একটি প্রশ্নচিহ্ন জাগে। পরিষেবা তো প্রদত্ত হইবে, কিন্তু পরিকাঠামোটি যথাযথ রূপে আছে তো? নিছক সাজসরঞ্জাম এবং উপযুক্ত সংখ্যক কর্মী অথবা চিকিৎসক নহে, প্রশাসনিক পরিকাঠামোটিও এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সত্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নূতন মন্ত্রিসভা মাত্র অর্ধবর্ষকাল ক্ষমতায় আসীন। সুতরাং, সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রশাসনিক পরিকাঠামোর ভিতরে বিগত কয়েক দশক ধরিয়া যে ঘুণ ধরিয়াছে, তাহা এই স্বল্প সময় দূর করা কঠিন। কার্যত অসম্ভবই বলা চলে। প্রশ্ন হইল, সেই অসুখটিকে সারাইবার জন্য যে ধরনের কঠোর প্রশাসনিক মনোভাব থাকা জরুরি, তাহা কি দৃশ্যমান?
অন্য একটি দৃষ্টান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। সেখানে জনৈক ‘মদ্যপ’ চিকিৎসকের উপস্থিতিই শুধু গোল পাকায় নাই। তাঁহার জায়গায় অন্য যে চিকিৎসকপ্রবরকে যোগ দিতে বলা হইয়াছিল, তিনি বলিয়া দিয়াছেন, যাইবেন না। জনৈক ‘প্রভাবশালী’ মন্ত্রীও নাকি চিকিৎসকটির বর্তমান কর্মস্থলের অধিকর্তাকে দূরভাষে বলিয়া দিয়াছেন, ওই চিকিৎসকটিকে ছাড়া চলিবে না। পরিণামে, বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ‘জেনারেল মেডিসিন’ বিভাগ কার্যত অনাথ। চিকিৎসকপ্রবরও কিছু বিচিত্র যুক্তি দিয়াছেন। বর্তমানে তাঁহার চিকিৎসাধীন রোগীদের যদি কিছু হইয়া যায়, সেই দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করিতে নারাজ। এই কুযুক্তিটি মানিলে বলিতে হয়, কোনও হাসপাতালে কর্মরত কোনও চিকিৎসককেই বদলি করা চলিবে না। কারণ, চিকিৎসা একটি চলমান প্রক্রিয়া। মধ্যপথে যদি কোনও চিকিৎসক চলিয়া যান, পরিণামে যদি কোনও রোগীর প্রাণসংশয় হয়, তাহা তো বিষম এক বিপত্তি!
এই জাতীয় ওজর ছুড়িয়া ফেলা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য দফতর এই যুক্তি ছুড়িয়াও ফেলিয়াছে। কিন্তু, তাহার পর? যথাযথ বন্দোবস্ত গ্রহণের কোনও লক্ষণ এখনও পর্যন্ত তেমন ভাবে দৃশ্যমান নহে। অন্যথায়, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সরকারি নির্দেশ হেলায় অমান্য করিবার সাহস পাইতেন না। তাঁহার জন্য জনৈক মন্ত্রিবরের প্রভাব খাটাইবারও প্রয়োজন পড়িত না। ইহা এক গভীর অসুখ, যাহা স্বাস্থ্য পরিষেবার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়া গিয়াছে। অসুখটি অপরিচিত নহে, কিন্তু যে রূপে তাহার মোকাবিলা প্রয়োজন, তাহা হইতেছে কি? নিরাময়ের পথ সহজ। বিধিভঙ্গকারীগণের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিলেই পরিস্থিতি শুধরাইবে। প্রশাসন কঠোর না হইলে কিন্তুকোনও দিনই সেই ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হইবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বটেন। তিনি স্বাস্থ্য প্রশাসনের অচলায়তনে নূতন গতি আনিতে তৎপর। তাহার জন্য কঠোর হস্তে প্রশাসনিক শৈথিল্যকে দমন করা জরুরি। |