|
|
|
|
|
নবাববাড়ি |
ঝাড়বাতি উধাও, এখন ভাঙা জাফরির আবডালে ঘুমন্ত শ্বেতপাথরের দরবার। শূন্য মহল, মেহফিলে অনুপস্থিত অতিথি। ভারত তখন ইংরেজদের। তবু জলপাইগুড়ির নবাবকে তোপধ্বনির বিরল সম্মানে স্বাগত জানায় ব্রিটিশ। এই নবাব পরিবারের সূচনা সিপাহি বিদ্রোহের পর। মহারানি ভিক্টোরিয়া এক সনদ বলে ১৮৫৮-তে শাসনক্ষমতা স্বহস্তে নেন। এই সময় মহারানির সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্নেল হিদায়েত আলির উদ্যোগেই জলপাইগুড়ি এলেন নবাব পরিবারের প্রথম ব্যক্তিত্ব রহিম বক্স। ১৮৬৪-তে ব্রিটিশ-ভুটানি মহারণ বাধে। কর্নেল হিদায়েত আলি এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দিলে ভুটানিরা পরাজিত হয়ে পাহাড়ে চলে যায়। সম্ভবত কর্নেলের নামেই ভুটানের পথে আলিপুরদুয়ার। যুদ্ধের সময় রহিম বক্স ব্রিটিশ সেনাদের রসদ-সহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করলে ইংরেজ সরকার তাঁকে জমি-সহ প্রচুর পারিতোষিক দেয় এবং খানবাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করে। রহিম বক্স ইংরেজি ভাষা শিখে নেন এবং ডেপুটি কমিশনারের পেশকার নিযুক্ত হন। |
|
ছবি: সন্দীপন নন্দী |
১৮৭৫-এ ব্রিটিশরা ডুয়ার্সে প্রথম চা-বাগান তৈরির কাজ শুরু করলে ১৮৭৭-এ মুন্সি রহিম বক্সই প্রথম ভারতীয় হিসেবে চা-বাগান নির্মাণের সম্মতি পান। তাই তাঁর স্মৃতি আজও অম্লান। ১৮৮২-তে জলপাইগুড়ি শহরে চা শিল্পের রেনেসাঁস শুরু হয়। রহিম বক্সের বিবি মেহেরুন্নেসা ও গুলাবজাম’কে চা-বাগান তৈরির জন্য চেংমারি তালুকে ৭৭৭.৮২ একর জমি দিলে তাঁরাই প্রথম মহিলা হিসেবে ভারতে ইংরেজদের বাণিজ্যিক স্বীকৃতি লাভ করেন। রহিমের কোনও পুত্রসন্তান ছিল না। দুই মেয়ের মধ্যে রহিমুন্নেসা খাতুন বড় এবং ফয়জুন্নেসা ছোট। ফয়জুন্নেসার সঙ্গে বিয়ে হয় নবাব মুশারফ হোসেনের। তিনিই রহিম বক্সের একান্ত অনুগত হয়ে সম্পত্তি দেখভাল শুরু করেন। ১৯০৩-এর ৪ সেপ্টেম্বর রহিম বক্সের মৃত্যু হয়। মুশারফ হোসেন জার্মানি ও ইতালি থেকে শিল্পী এনেই গড়ে তোলেন এ নবাববাড়ি। ১৯৩৫-এ জলপাইগুড়ির রাজা প্রসন্নদেব রায়কতের বাংলাদেশ থেকে ধার করা টাকার সুদ-আসল ছাড়াতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হকের কাছে আবেদন করেন। এবং পরে প্রসন্নদেব নিষ্কৃতি পান। এমনই ছিল তাঁর বন্ধুপ্রীতি। নবাবিয়ানার বৈভবেও মনুষ্যত্ব হারাননি নবাব। অবশেষে ১৯৬৬-র ১৪ সেপ্টেম্বর ৯১ বছর বয়সে নবাব মারা যান ও তাঁর ইচ্ছানুসারে বেগম ফয়জুনের পাশেই তাঁকে কবরস্থ করা হয়।
|
পরিবেশের ক্ষতি
|
২০১০-এ জলপাইগুড়ির জোরপাকড়ির মালিপাড়ায় একটি মিগ বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এই ঘটনায় ওই অঞ্চলে কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা জানতে জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাব একটি সমীক্ষা করে। মানবী রায়ের নেতৃত্বে অর্পিতা দেবনাথ, সীমা রায়, কাকলি সেন এবং চম্পা রায় এই সমীক্ষা করেন। ওঁরা জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলে আড়াই কিলোমিটার ব্যাসার্ধের জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মাটি খুঁড়লে সালফার-দূষণের জন্য বিশেষ একটা গন্ধ পাওয়া যায়। মাটিতে ভারী ধাতব পদার্থ বিশেষত সিসার উপস্থিতি খুব বেশি। দুর্ঘটনার পর তিন মাস পর্যন্ত ওখানকার মানুষ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগেছেন। গবাদি পশুর দুগ্ধক্ষরণ এবং পুকুরে মাছ ও জলজ জীব প্রচুর পরিমাণে কমে গিয়েছে। বিমানটি মাটিতে ভেঙে পড়ার সময় কম্পনে বেশ কিছু গাছের মঞ্জরী নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সমীক্ষাদলটি সরকারকে যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তার মধ্যে রয়েছে এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট, এলাকাটির মাটি পরীক্ষা, টীকাকরণ এবং প্রকৃতি ও মানুষের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটা, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে সরকারি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। দলটির মতে, ওই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র আগের অবস্থায় ফিরতে কমপক্ষে দশ বছর লাগবে। দলটির প্রশিক্ষক ছিলেন জ্যোতির্ময় রায় ডাকুয়া এবং বাবনচন্দ্র সরকার।
|
চূড়ামন জমিদারবাড়ি |
|
ছবি: বৃন্দাবন ঘোষ |
নবাব আলিবর্দির কানুনগো ঘনশ্যাম চৌধুরি জমি জরিপ করতে আসেন চূড়ামনে। মহানন্দার তীরে ব্যাঙে সাপ ধরার দৃশ্য দেখে মনে ভাবলেন তাঁর সংসারে সুখ-শান্তি আসবে। অল্প কিছু নজরানা দিয়ে তিনি নবাবের কাছ থেকে ওই স্থান-সহ চূড়ামন এস্টেটের ৮৬ নং তৌজি লাভ করেছিলেন। তার পর থেকে তাঁর জমিদারির আয়তন বাড়তে বাড়তে বিশাল আকার নিয়েছিল। জমিদারির প্রভূত উন্নতি ঘটে। মহানন্দার তীরে গড়ে ওঠে বিশাল জমিদারিবাড়ি। কারুকার্যখচিত সুদৃশ্য দোতলা বাড়ির বারান্দায় বসে জমিদাররা উত্তাল মহানন্দার সৌন্দর্য উপভোগ করতেন। জমিদারবাড়ির মধ্যে একে লক্ষ্মীনারায়ণ, সিংহবাহিনী, কালী ও কৃষ্ণের মন্দির স্থাপিত হয়। আর তাঁদের বহির্বাটিতে স্থাপিত হয় শিবমন্দির, যেখানে আজও হিন্দু-মুসলিম পুজো দিয়ে থাকে। জমিদারদের উদ্যোগে চূড়ামনে দাতব্য চিকিৎসালয়, নাট্যসমাজ, বিদ্যালয় ও ডাকঘর গড়ে ওঠে। সেই দাতব্য চিকিৎসালয়ে বহু দুঃস্থ মানুষ চিকিৎসার সুযোগ পেতেন, আর তাঁদের নাট্যসমাজ বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে নাটক প্রদর্শন করে বহু শ্রোতা দর্শকের হাততালি কুড়িয়ে নিয়েছিল। ধূলহর, খোকসা, রাইপুর গ্রামের কিছু মন্দিরের পুজোর জন্য জমিদাররা জমি দান করেছেন। জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ ও বিধ্বংসী বন্যার কারণে জমিদারবাড়ি ভেঙে পড়ে। বাড়ির সিংহভাগ মহানন্দার অতল গর্ভে পতিত হয়। বাকিটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইতিহাস অনুরাগী মানুষজন তা দেখার জন্য আজও দলে দলে ভিড় করে থাকেন।
|
বেঁচে গেল |
এ যাত্রায় রক্ষা পেল কক্কোলোবা ইউনিফেরা। সৌজন্য শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। এর আদি নিবাস ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কক্কোলোবা-র বিপদ কেটে গিয়েছে শুনে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন শহরের উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ পি আর সেন। এটি আদতে একটি গাছ। এ শহরে এ গাছের সংখ্যা মাত্র তিন। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং রোগী কল্যাণ সমিতি উন্নয়নমূলক কিছু কাজ করতে চলেছে। নির্মাণের জন্য হাসপাতালের চাতালের এক কোণে বেড়ে ওঠা কক্কোলোবা ইউনিফেরা গাছটি কাটা পড়ার উপক্রম হয়। খবর পেয়েই বাধা দেন রুদ্রবাবু। তিনি বলেন, দুষ্প্রাপ্য এই গাছ কোনও মতেই কাটা হবে না। প্রয়োজনে ডালপালা ছেঁটে নির্মাণকাজ করতে হবে। ১৯৯৮-৯৯-এ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিন উপলক্ষে গাছটি রোপণ করা হয়। বর্তমানে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল, দাগাপুর হর্টিকালচার সোসাইটির নিজস্ব উদ্যানে এবং তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে একটি, মোট তিনটি কক্কোলোবা ইউনিফেরা গাছ রয়েছে। পাতার বিশেষ গড়নের জন্য এটি সংশ্লিষ্ট এলাকার দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। |
উত্তরের কড়চা বিভাগে ছবি ও লেখা দিলে পুরো নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
উত্তরের কড়চা এ বি পি প্রাঃ লিমিটেড
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|
|
|
|
|
|