দাবি দাওয়া না করে ‘ওঁরা’ কাজ করেছেন
টা নেই কেন, ওটা হচ্ছে না কেন বলে বিক্ষোভের পথে হাঁটেননি ওঁরা।
দিস্তা দিস্তা অভিযোগ পাঠিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও করেননি। বরং স্বাস্থ্য দফতরের ‘কাজটা’ কিছুটা এগিয়ে দিয়েছেন। তারপর পাল্টা প্রশ্নটা ঝুলিয়ে দিয়েছেন— আমাদের যা করার করেছি, এ বার স্বাস্থ্য দফতর তাদের কাজটা করবে তো?
ওঁরা তেহট্টের ছোট নলদহ গ্রামের জনা পঁচিশ তরুণ। ওদের দলে বিমা সংস্থার কর্মী বা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্ব শিক্ষকদের পাশাপাশি রয়েছে ছাত্র বা কৃষিজীবীও। গত মাসখানেক ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চেহারাটাই বিলকুল বদলে দিয়েছেন ওরা। এর আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির বেশ কিছু জায়গায় কোন দেওয়াল না ছিল না। যখন তখন গরু ঢুকে পড়ত। আবর্জনা ছড়িয়ে থাকত চার পাশে। সেই আবর্জনা পার হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রায় ঢুকতেই পারতেন না সাধারণ মানুষের। এ ছাড়াও সন্ধ্যের পরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রাঙ্গণে বসত মদের ঠেকও। তবে স্থানীয় ওই যুবকদের চেষ্টায় স্বাস্থকেন্দ্রের ছবিটা একেবারেই পাল্টে গিয়েছে। বাঁশের বেড়া তৈরি করে ঘিরে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। প্রধান দরজার সামনেই তৈরি হয়েছে দু’টো ফুলের বাগান। আগাছা পরিষ্কার করে দেবদারু ও হরেক রকম ফুলের গাছও লাগানো হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিষ্কার রাখতে গ্রামে গ্রামে তাঁরা প্রচারও করেছেন। নিয়মিত পালা করে বাগান পরিচর্যার কাজ তারাই করছেন।
চলছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সাফাই। ছবিটি তুলেছেন কল্লোল প্রামাণিক।
ছোট নলদহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে আশপাশের এলাকার অন্তত আটটা-নটা গ্রামের মানুষ নির্ভর করেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবেশ ও পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের বহু অভিযোগ আছে। অনিত মণ্ডল, শ্যামল মণ্ডল বা শ্যামল চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘শুধু নেই নেই বলে কিছু হয় না। আমরা সব কিছু করতে না পারলেও কিছুটা তো করতেই পারি। এই ভাবনা থেকেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে যে অভিযোগ ওঠে সেটা ঠিক করার জন্য কোনও স্বাস্থ্যকর্তার দরকার নেই। এটা আমরা সকলে মিলেই ঠিক করতে পারি। এর পরেই গ্রামের আরও কয়েক জন ছেলেকে নিয়ে আমরা গোটা চত্বর পরিষ্কার করেছি। গ্রামের মানুষও আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন। অনেকে তো নিজের বাগানের বাঁশও দিয়েছেন বেড়া তৈরির জন্য। কেউ টাকা, কেউ শ্রম দিয়ে আমাদের সাহায্য করেছেন। সে সব সাহায্য আর আমাদের সকলের মিলিত পরিশ্রমে আমরা অনেকটাই সফল হয়েছি। গ্রামে গ্রামে প্রচার করাটাও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে বেশ সাহায্য করেছে।
ওই যুবকদের মধ্যে মাণিক, পরিতোষ মণ্ডলরা বলেন, ‘‘সদিচ্ছা থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব হয়। আমরা কাজে তা করে দেখিয়েছি। এই কথাটা স্বাস্থ্য দফতর বুঝলেই হয়। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিসক থাকার কথা বিকেল চারটে পর্যন্ত। অথচ দুপুর একটা-দেড়টা বাজলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। ছোট নলদহ ছাড়াও বড় নলদহ, বড় নলদহ কলোনি, কুলগাছি, ছোট চাঁদঘর, বড় চাঁদঘর ও পলশুণ্ডা, বারুইপুর, বরেয়া গ্রামের লোক জন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য আসেন। অথচ চিকিসক রয়েছেন মাত্র এক জন। ফলে সব মিলিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় সাধারণ মানুষকেই। গ্রামের মানুষ আমাদের পাশে আছেন।’’
ছোট নলদহের বাসিন্দা সাহেবনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের জীবনকৃষ্ণ সরকার বলেন, ‘‘গ্রামের ওই ছেলেরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য অনেক করছে। এক সময়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনেক সুযোগ সুবিধা ছিল। চিকিৎসকেরা রাতে এখানে থাকতেন। শয্যার ব্যবস্থাও ছিল। এখন সে সব আর কিছুই নেই। এলাকার মানুষকে সামান্য অসুখ-বিসুখেও পলাশীপাড়া, কৃষ্ণনগর কিংবা বহরমপুর ছুটতে হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরের বেহাল দশা অনেকটাই ঘুচিয়েছে এলাকার ছেলেরা। চিকিৎসা সংক্রান্ত বেহাল অবস্থা যাতে দ্রুত ঠিক হয় সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরকে আমরাও জানাব।’’
তেহট্টের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই যুবকদের এই নজিরবিহীন কাজের কথা আমি শুনেছি। এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ছবি, ফুলের গাছের ছবি তুলে স্বাস্থ্যভবনে পাঠানো হবে। এটা একটা দৃষ্টান্ত। যে সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শয্যা নেই, সেখানে চিকিৎসকের থাকার কথা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত শুনেছি ওখানে চারটের আগেই চিকিৎসক চলে যান। বৃহস্পতিবার গিয়ে সবকিছু খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
গ্রামের দেবাশিস সরকার বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগেও আবর্জনায় ভর্তি হয়ে থাকত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এখন চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতর গুরুত্ব দিয়ে ভাবলে সকলের পক্ষেই মঙ্গল হবে।’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.