|
|
|
|
বিয়ের চেষ্টা রুখতে অপহরণের নাটক |
বাড়ি ফিরল নারাজ মেয়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
রাত প্রায় ১১টা। তীব্রগতিতে ছুটতে থাকা সাদা মারুতির জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে এক তরুণী ‘বাঁচাও-বাঁচাও’ বলে আর্তনাদ করছেন। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে মহানন্দা সেতু লাগোয়া এলাকায় ওই দৃশ্য দেখে অনেকেই স্তম্ভিত হয়ে যান। ওই সময়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা টহলদারি ভ্যান চিৎকার শুনে তাড়া করে মারুতি ভ্যানটি আটকে তরুণী ও অন্য আরোহীদের থানায় নিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত জেরার মুখে ভেঙে পড়ে ওই তরুণী জানান, অপহরণের অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। তাঁর অমতে বাড়ির লোকজন বিয়ে ঠিক করায় তিনি পালাচ্ছিলেন। সেই সময়ে আত্মীয়-স্বজনেরা রাস্তা থেকে ধরে জবরদস্তি গাড়িতে তোলায় তিনি ওই রকম আর্তনাদ করেছেন। তখন তরুণী ও তাঁর আত্মীয়দের সকলকে বাড়ি পৌঁছে দেয় পুলিশ। তার পরে থানায় জড়ো হওয়া কৌতুহলী মানুষও হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন।
শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের ফুটপাতের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তাঁরা মালপত্র ভ্যানে তুলে দিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। সেই সময়ে গাড়ি থেকে যুবতীর আর্তনাদ শুনে ঘাবড়ে যান। মুহূর্তের মধ্যে পুলিশের টহলদারি ভ্যান যে ভাবে ছুটে গিয়ে গাড়িটি আটক করে তরুণীটিকে উদ্ধার করে তাতে আশ্বস্ত হন। এক ফুটপাত ব্যবসায়ীর কথায়, “আমরা প্রথমে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। পরে পুলিশের তৎপরতা দেখে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হয়েছি।”
শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি অবশ্য জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর থেকেই শিলিগুড়ির সমস্ত প্রধান সড়ক ও গলিতে টহলদারি চলে। তিনি বলেন, “রাতে গাড়ির ভিতর থেকে তরুণীর আর্ত চিৎকার শুনে পুলিশ গাড়িটি আটক করে। পরে দু’পক্ষের মতামত শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তরুণীকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।” পুলিশ জানায়, ওই তরুণীর মূল বাড়ি সিকিমের গ্যাংটকে। বর্তমানে তিনি মায়ের সঙ্গে লেক টাউন এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সম্প্রতি তাঁর বিয়ে ঠিক করেন অভিভাবকরা। কিন্তু, তরুণীটি বিয়েতে নারাজ। তিনি তাঁর পছন্দের মানুষকেই বিয়ে করতে চান বলে বাড়ির লোকজনকে জানিয়ে দেন। বুধবার রাতে লেক টাউনের বাড়িতে তা নিয়ে মায়ের সঙ্গে বচসা হয় তাঁর। রাত ১০টা নাগাদ তিনি তাঁর মাকে ঘরের মধ্যে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে বেরিয়ে পড়েন। সিকিমের বাস স্ট্যান্ডের কাছে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। ইতিমধ্যে ঘর থেকে তরুণীর মা ফোনে গোটা ঘটনাটি আত্মীয়দের জানিয়ে দেন। তাঁরা একটি গাড়ি নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সিকিমের সরকারি বাস স্ট্যান্ডের সামনে তরুণীটিকে দাঁনিয়ে থাকতে দেখে দেখে জোর করে তাঁরা গাড়িতে তুলে নেয়। পুলিশ জানায়, তখনই গাড়ির ভেতর থেকে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে থাকেন তরুণীটি। হাসমিচকের লোকজন এবং শিলিগুড়ি থানার পুলিশ গাড়িটিকে আটক করে। ওই তরুণী পুলিশের কাছে দাবি করে, তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গাড়ির লোকজন তাঁর আত্মীয় বলে পরিচয় দিলেও তা মানতে চায়নি শ্যামলী। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাঁদের শিলিগুড়ি থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তরুণীকে জেরা করে গোটা বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। |
|
|
|
|
|