বাম জমানার মতো তৃণমূলের জমানাতেও জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ‘হুঁশিয়ারি’র মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। রাস্তা সম্প্রসারণের চেষ্টার প্রতিবাদে এ বার খাস কলকাতায় ধর্মতলায় বিক্ষোভ-সভার পরে মহাকরণে পূর্তমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করলেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশের দাবি, কৃষিজমি, বাস্তু ও জীবন-জীবিকা রক্ষা কমিটি নামে একটি মঞ্চের তরফে ২০০-২৫০ জন সমর্থক বুধবার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিল করে ধর্মতলার সভায় যোগ দিয়েছিলেন। কমিটির প্রতিনিধিরা পরে পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সীর সঙ্গে দেখা করেন।
কমিটির সভাপতি নরসিংহপ্রসাদ গুপ্ত ও সম্পাদক মানস জানার দাবি, ৩১ ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ‘চার লেন’ করার নামে জলপাইগুড়ি থেকে দিনাজপুরের ডালখোলা হয়ে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অংশে বিপুল সংখ্যক মানুষকে ‘উচ্ছেদ’-এর ‘চক্রান্ত’ চলছে। নরসিংহবাবুর কথায়, “সেই ১৯৫০ সালেই জাতীয় সড়ক হবে বলে এ রাজ্যের জেলায় জেলায় রাস্তার দু’ধারে ১২০-২০০ ফুট জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তার সাত ভাগের এক ভাগেও রাস্তা হয়নি। বাম আমলের শেষ দিকে ওই অধিগৃহীত এলাকার বাইরেও রাস্তা চার লেনের করার কথা বলে বাড়তি জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা শুরু হয়।” এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে মামলা গড়িয়েছে হাইকোর্টে। কমিটির দাবি, এই ‘বাড়তি’ জমি দখলের চেষ্টার পিছনে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য রয়েছে। সড়ক নির্মাণে এত জমির দরকার নেই। ‘উচ্ছেদ’ হওয়া বাসিন্দাদের জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নিয়েও কমিটির ক্ষোভ রয়েছে। তাদের বক্তব্য, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নতুন প্রস্তাবে এর ১০ গুণ ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছে। নরসিংহবাবু বলেন, “যে-জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, তা আদৌ কতটা প্রয়োজনীয়, পূর্তমন্ত্রী তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।” তাঁর দাবি, এই কমিটিতে দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক শিবিরের লোকজনই রয়েছেন। এর আগে কমিটির তরফে বিচ্ছিন্ন ভাবে আঞ্চলিক স্তরে বিক্ষোভ দেখানো হলেও একজোট হয়ে কলকাতায় পূর্তমন্ত্রীর কাছে দরবার করার ঘটনা এই প্রথম। রাজ্য সরকার বিষয়টি বিবেচনা না-করলে পরবর্তী পর্যায়ে জেলায় জেলায় আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নরসিংহবাবুরা। |