উদ্দেশ্য, মাওবাদী-প্রতিরোধ। এক দিকে, জঙ্গলমহলে যৌথ বাহিনীর অভিযানের তীব্রতা বাড়ানোর ইঙ্গিত দিল পুলিশ-প্রশাসন। পক্ষান্তরে, ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে মাওবাদীদের জন-বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা বহাল রাখল রাজ্যের নব্য শাসক দল, তৃণমূল।
ঝাড়গ্রামে ধৃত জনগণের কমিটির নেতা অসিত মাহাতোকে জেরা করে বুধবার লালগড়ের জঙ্গল-অঞ্চলে মাওবাদী ডেরার সন্ধান মিলেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। বলরামপুরে সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষিতে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে মাওবাদীদের ঘাঁটি খুঁজে বের করতে লাগাতার অভিযানের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ায় লাগাতার কর্মসূচি রাখছেন তৃণমূলের নেতারা। খুনটাঁড় গ্রামে মাওবাদীদের হাতে নিহত বাবা ও ছেলেকে এ দিন কলকাতায় শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের তাবড় নেতারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়, সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর মতো তৃণমূল নেতারা রাতে মৃতদেহ দু’টি নিয়ে খুনটাঁড়ে পৌঁছন। |
সোমবার খুনটাঁড়ের জোড়া খুনের পরেই যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় দুই মাওবাদীর। সেই প্রেক্ষিতে অভিযানের রূপরেখা ঠিক করতে এ দিন পুরুলিয়ায় বৈঠকে বসেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ, ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) বিনীত গোয়েল, এসপি (কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্স) মনোজ বর্মা, পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সুনীলকুমার চৌধুরী এবং সিআরপি-র এক কর্তা। বৈঠকে কী ঠিক হল তা না ভাঙলেও আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) বলেন, “এটা একটা যুদ্ধ। যুদ্ধে সব সময়ই কৌশল বদলাতে হয়। কৌশল ওরাও (মাওবাদী) বদলাবে। আমরাও।”
জেলা গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর, এখন অযোধ্যা পাহাড়ে মাওবাদীদের কম-বেশি ২০টি ঘাঁটি আছে। কোথায় সেগুলি রয়েছে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছে পুলিশ। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার বলেন, “যে রকম খবর পাচ্ছি, তার ভিত্তিতেই তল্লাশি চলছে। চলবেও।” সোমবার রাতের গুলিযুদ্ধে আরও কিছু মাওবাদী জখম হয়েছে বলে দাবি আইজি-র। তাদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।
একই ভাবে মঙ্গলবার থেকে শালবনি ও লালগড়ের বিভিন্ন জঙ্গলেও যৌথ বাহিনী চিরুনি তল্লাশি করছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠীর নেতৃত্বে এ দিন তল্লাশির সময় পূর্ণাপানি-করমশোলের জঙ্গলে ‘মাওবাদী ডেরা’র হদিস মেলে। পুলিশের দাবি, মাওবাদী নেতা বিকাশের নেতৃত্বে ৫-৬ জনের একটি সশস্ত্র দল সেখানে ছিল। ওই ‘ডেরা’ থেকে ২টি ইনসাস রাইফেল, ১টি এসএলআর, ১টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, ৫টি ৯ এমএম পিস্তল, ৫টি ম্যাগাজিন, ২২০ রাউন্ড কার্তুজ ও
৪০ কেজি বিস্ফোরক মেলে।
জোড়া মৃতদেহ নিয়ে তৃণমূল নেতাদের কনভয় এ দিন রাত ৮টা নাগাদ খুনটাঁড়ে পৌঁছয়। ওই রাতেও ঘর ছেড়ে বেরিয়েছিলেন অনেকেই। তৃণমূল সূত্রের খবর, সে দৃশ্য দেখে দলের কিছু শীর্ষ নেতা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, আতঙ্কের আবহ ‘অগ্রাহ্য করার মানসিকতা’ তৈরি হয়েছে ওই এলাকায়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনা জেনে মমতা মনে করছেন, ‘জনশক্তি জেগে উঠছে’। |
গত ১১ নভেম্বর বলরামপুরে গিয়ে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, খুনের রাজনীতি বন্ধ না করলে মানুষই মুখ ফেরাবেন মাওবাদীদের থেকে। খুনটাঁড় গ্রামে বুধবার রাতের ভিড় তেমনই ‘ইঙ্গিতবাহী’ বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মাওবাদী প্রভাবিত ওই এলাকায় রাতে গেলেন কেন তৃণমূল নেতৃত্ব? মুকুলবাবুর জবাব, “যারা খুনের রাজনীতি চালাচ্ছে, তাদের একটা বার্তা দিতে এখানে এসেছি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও চান, এই এলাকার মানুষের ভয় কাটুক।”
আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে মাওবাদী-প্রভাবিত পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইলেও যুব তৃণমূলের সভা রয়েছে। সেখানে শুভেন্দুই প্রধান বক্তা। থাকার কথা মুকুলবাবুরও। |