নয়া অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কমিটিগুলিতে ছাত্র, আধিকারিক, শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিত্ব নেই। কিন্তু অর্ডিন্যান্স সম্পর্কে তাঁদের মতামত চাওয়া হল।
অর্ডিন্যান্সের ব্যাপারে ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং তাঁদের সংগঠনের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে উপাচার্যদের চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদ। ২৪ নভেম্বরের মধ্যে তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানাতে বলা হয়েছে। সব তরফের প্রতিক্রিয়া জানার পরে অর্ডিন্যান্সে কিছু পরিবর্তনও করা হতে পারে বলে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর।
অর্ডিন্যান্সে কিছু অসঙ্গতি বা অসম্পূর্ণতা রয়েছে বলেও উচ্চশিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করছেন। রাজ্য সরকারের গড়া উচ্চশিক্ষা উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারও তা স্বীকার করেছেন। উদাহরণ হিসেবে অভিরূপবাবু বলেন, “স্নাতক সংসদের ডিনদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে অর্ডিন্যান্সে। কিন্তু সব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সংসদ নেই। তা ছাড়া ডিন, ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের নির্বাচন প্রসঙ্গে অর্ডিন্যান্সে কিছু বলা নেই। এগুলি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে।” অভিরূপবাবু আরও জানান, উচ্চশিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি যে-অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দিয়েছিল, অর্ডিন্যান্সে তার পুরোপুরি প্রতিফলন নেই।
উপদেষ্টা কমিটিও অর্ডিন্যান্স নিয়ে আলোচনা করে নিজেদের মতামত উচ্চশিক্ষা সংসদকে জানাবে। ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের কাছ থেকে অর্ডিন্যান্স নিয়ে যে-মতামত আসবে, উচ্চশিক্ষা উপদেষ্টা কমিটির কাছেও তার প্রতিলিপি পাঠাতে বলা হয়েছে।
অর্ডিন্যান্সটি জারি হয়েছে গত ২ নভেম্বর। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, বামফ্রন্টের আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে রাজনীতির দাপাদাপি চলেছিল দীর্ঘকাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের খুঁটিনাটি সব বিষয় নিয়ন্ত্রিত হয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনকেও দলীয় রাজনীতির প্রতিষ্ঠার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যত দূর সম্ভব রাজনীতিমুক্ত করতেই বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়েছে অর্ডিন্যান্স জারি করে।
কিন্তু অর্ডিন্যান্স জারি হওয়ার পরেই সেটি নিয়ে কিছু ক্ষোভ-বিক্ষোভও দেখা গিয়েছে। সেনেট, সিন্ডিকেট, কোর্ট, কাউন্সিলের মতো নীতি নির্ধারক কমিটিতে ছাত্র, আধিকারিক, শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিত্ব নেই। এর প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেছে এসএফআই। প্রেসিডেন্সির আইনেও একই ধরনের প্রতিফলন থাকবে ধরে নিয়ে সেখানকার একটি ছাত্র সংগঠনও আন্দোলনে নেমেছে। কলকাতা, যাদবপুর-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনও ওই অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান ভাস্কর গুপ্ত, সরকারের উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য অশোকেন্দু সেনগুপ্তেরা যে-শিক্ষক সংগঠনের সদস্য, সেই ‘টাসাম’-ও ওই অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে ছাত্র, শিক্ষাকর্মীদের যুক্ত না-করার সমালোচনা করেছে তারাও। এই পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষা সংসদের পক্ষ থেকে অর্ডিন্যান্স সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত জানতে চাওয়াটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, আগে মতামত জানতে না-চেয়ে অর্ডিন্যান্স জারি হয়ে যাওয়ার পরে এই উদ্যোগ কেন?
রাজ্য সরকারের তরফে এর স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।
তা হলে কি বিক্ষোভের মুখে মত পরিবর্তন করে রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কমিটিতে ছাত্র ও শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধি রাখার পথেই হাঁটবে?
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি শুধু বলেন, “সবার মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। সেগুলি পাওয়ার পরে খতিয়ে দেখা হবে।” |