ভর্তুকির খুঁটি সরতেই পরিবহণে বেতন-পেনশন বন্ধ
ক-দু’জন নয়। বোঝা গেল, আঠারো হাজার কর্মীর বেতন ও সঙ্গে অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের পুরোটারই উৎস ছিল ভর্তুকির টাকা। যে ‘খয়রাতি’ রাজ্য সরকার বন্ধ করে দিতেই পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি পরিবহণ নিগমের আর্থিক অবস্থার ‘কঙ্কাল’ বেরিয়ে পড়েছে। পাঁচ সরকারি পরিবহণ সংস্থাতেই স্থগিত হয়ে গিয়েছে কর্মীদের বেতন ও পেনশন।
রাজ্যের পরিবহণ-সচিব বিপি গোপালিকা জানাচ্ছেন, লোকসানের ভারে ন্যুব্জ ওই পাঁচ নিগমকে শুধু বেতন-পেনশন খাতেই মাসে ৪০-৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি জোগানো হতো। অন্যান্য খাতে বছরে আরও ১০০ কোটি। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এ ভাবে টাকা ঢালা হবে না। সেই মতো পাঁচ নিগমের কর্তাদের ডেকে বলে দেওয়া হয়, সরকার আর তাদের ভার বইবে না। বাঁচার পথ তাদের নিজেদেরই খুঁজে নিতে হবে।
ঘটনাক্রমে এই হুঁশিয়ারির পরে ভর্তুকি তুলেও নিয়েছে সরকার। তার পর থেকে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি), কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি), উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি), দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি) এবং পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম (ডব্লিউবিএসটিসি)-এর কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না। বন্ধ হয়ে গিয়েছে অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনও।
রাজ্যের সরকারি পরিবহণকে চাঙ্গা করতে বাম আমলে নিযুক্ত বিভিন্ন পরামর্শদাতা সংস্থা কর্মী কমানোর সুপারিশ করেছিল। পরিবহণ-সূত্রের খবর, সেই পরামর্শ মানা তো হয়ইনি, উল্টে আরও লোক ঢোকানো হয়েছে। এবং অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগ-বিধিরও তোয়াক্কা করা হয়নি বলে অভিযোগ। পাশাপাশি রুগ্ণ সংস্থাগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সরকার বছরের পর বছর ভর্তুকির বহর বাড়িয়ে গিয়েছে। নতুন সরকার এর অবসান চায়। তাই স্থির হয়েছে, যে সব কর্মীর নিয়োগ নিয়মমাফিক হয়নি, তাঁদের দায়ভার রাজ্য আর বইবে না।
এবং সেই ‘ভুয়ো’ কর্মীদের চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবেই ভর্তুকি বন্ধ রাখা হয়েছে, যার জেরে কোপ পড়েছে বেতন- পেনশনে। কী ভাবে?

কর্মী-কথা
নিগম মোট কর্মী অবৈধ*
সিএসটিসি ৬০০০ ৫০০
সিটিসি ৬০০০ ১০০০
এনবিএসটিসি ৩০০০ ১৮০০
এসবিএসটিসি ২৭৫০ ১৫০
ডব্লিউবিএসটিসি ৬৪১ ২৪
আনুমানিক* সূত্র: পরিবহণ দফতর
পরিবহণ-সচিবের যুক্তি, “ভুয়ো কর্মী চিহ্নিত করার জন্য গত তিন মাস ধরে পাঁচ পরিবহণ নিগমের সব কর্মী সম্পর্কে কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু নিগম-কর্তারা সাড়া দিচ্ছেন না। তাই বেতন ও পেনশন বাবদ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে না।” ফলে গত অগস্ট থেকে পেনশন বন্ধ আছে। অক্টোবর থেকে বেতন পাচ্ছেন না বর্তমান কর্মীরাও। ‘চিহ্নিতকরণের’ কাজ হচ্ছে কী ভাবে?
দফতরের খবর: প্রতি কর্মীর নিয়োগের সূচনা থেকে শুরু করে চাকরি-জীবনের যাবতীয় তথ্য জানতে চেয়ে সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর পাঁচ নিগমের চেয়ারম্যানদের চিঠি পাঠিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সি। পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ চাওয়া হয়েছে। সচিবের কথায়, “নিগমের পাঠানো ‘প্রোফাইল’গুলো ডিপোয় ডিপোয় গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মীর সামনে রেখে মিলিয়ে দেখা হবে। সই মেলানো হবে। যাঁরা ‘বৈধ’ চিহ্নিত হবেন, তাঁরা বেতন পাবেন।”
সরকারি বিভিন্ন পরিবহণ নিগমে কত অবৈধ কর্মী রয়েছেন? কোনও আন্দাজ?
সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈনের ব্যাখ্যা, “ট্রাম কোম্পানিতে দশ বছর বা তার বেশি কাজ করছেন, এমন ১০১০ জনকে স্থায়ীকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০০৯-এর ২৪ সেপ্টেম্বর। দেখা যাচ্ছে, যোগ্যতা না-থাকা সত্ত্বেও তখন বেশ কয়েক জনকে কৌশলে পাকা চাকরি করে দেওয়া হয়েছে।” এনবিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডন বস্কো লেপচা বলেন, “আমাদের ২২টি ডিপোর কর্মী-অফিসারদের বিশদ তথ্য কোথাও নথিভুক্ত নেই।” সিএসটিসি-র চেয়ারম্যান তারাপদ মাজির মন্তব্য, “আমাদের অধিকাংশ তথ্য দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু আরও তথ্য দরকার।”
এই পরিস্থিতিতে কর্মীমহলে প্রশ্ন উঠেছে, ভুয়ো কর্মী থাকার অভিযোগ যদি সত্যিও হয়, তবু সকলের বেতন-পেনশন বন্ধ রাখা হচ্ছে কেন? কিছু কর্মীর নিয়োগে অনিয়মের দায় নির্দোষদের কেন নিতে হবে?
এনবিএসটিসি’র এমডি-র যুক্তি, “নিগমগুলো গোড়া থেকেই লাভ-লোকসানের কথা ভাবেনি। তাই এই অবস্থা। রাতারাতি নীতি বদলাতে গেলে সমস্যা তো হবেই।” সিটিসি-র চেয়ারম্যান বলেন, “সরকারকে বলব, বৈধ কর্মীদের বেতনের টাকা যেন আটকে রাখা না-হয়।” সরকার কী বলছে?
পরিবহণ দফতর-সূত্রের বক্তব্য, যত দিন না সব ‘ভুয়ো কর্মী’কে ধরা যাচ্ছে, তত দিন বেতন ও পেনশন স্থগিত থাকবে। প্রক্রিয়াটা কত দিনে শেষ হবে, তার কোনও ‘সময়সীমা’ অবশ্য পরিবহণ-কর্তারা দিতে পারেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.