|
|
|
|
১০০ দিনের কাজে গতি আনতে নির্দেশ সচিবের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
১০০ দিনের কাজ-প্রকল্পে গতি ফেরাতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিল রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর।
সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের কাছে এই সংক্রান্ত এক নির্দেশ এসে পৌঁছেছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। ওই সূত্র জানাচ্ছে, শুধু এ জেলাই নয়, পূর্ব মেদিনীপুর-সহ আরও কয়েকটি জেলায় এই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন প্রাথমিক ভাবে ১২৭ কোটি টাকা পেয়েছিল। অথচ, অর্থবর্ষ শেষ হতে যখন সাড়ে চার মাস মাত্র বাকি তখনও খরচ হয়েছে মাত্র ৮৮ কোটি টাকা! এই পরিসংখ্যানে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে নানা-মহলে। বরাদ্দের বাকি টাকা আগামী পাঁচ মাসেও খরচ করা যাবে কি না, সংশয় রয়েছে। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তর অবশ্য বক্তব্য, “এই প্রকল্পের গতি বাড়াতে সব রকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
রাজ্যে পালাবদলের পর জেলা জুড়েই উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে এ জেলায় বামেদেরই একচেটিয়া প্রাধান্য। পালাবদলের পর অধিকাংশ পঞ্চায়েতেই দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। অনেক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষরা নিয়মিত আসতে পারছেন না। কোথাও আবার গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা দীর্ঘ দিন এলাকা ছাড়া। অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজনের হুমকির জেরেই এই পরিস্থিতি। এরই সঙ্গে রয়েছে জোর-জুলুমের নালিশ। অভিযোগ, সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের উপর সর্বত্রই কমবেশি অত্যাচার চলছে। সেই সঙ্গে জরিমানাও আদায় করা হয়েছে। এই অত্যাচারের ভয়েই পঞ্চায়েতের একাংশ সিপিএম সদস্য তেমন সক্রিয় নন।
তাই জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার জন্য তৃণমূলকেই দুষছেন জেলা পরিষদের সিপিএম সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “একাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজ করার পরিবেশই নেই। বিষয়টি প্রশাসনের সব স্তরেই জানানো হয়েছে।” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের আবার দাবি, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এমন অভিযোগ করা হচ্ছে। সর্বত্রই কাজের পরিবেশ রয়েছে। সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলো ইচ্ছে করে কাজ করছে না। এটা ওদের কৌশল।”
রাজনৈতিক এই চাপানউতোরের মধ্যে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ১০০ দিনের প্রকল্পের উপর নির্ভর করেন অনেক গরিব মানুষ। এই প্রকল্পে কাজ করে যে অর্থ পান, তা দিয়েই অনেকের সংসার চলে। অন্তত, না-খেয়ে থাকতে হয় না। কিন্তু, প্রকল্পের বেহাল পরিস্থিতিতে তাঁদের আর্থিক অবস্থাও এখন সঙ্গিন। অন্যের জমিতে মজুর খেটে কিংবা অন্য কোনও কাজ করে কোনও রকমে সংসার চলছে। ২০০৯-’১০ আর্থিক বছরে ১০০ দিনের প্রকল্পে এ জেলায় খরচ হয়েছিল ২৩৪ কোটি টাকা। ২০১০ সালে তা বেড়ে হয় ২৬৭ কোটি।
অথচ, এ বারের পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। চলতি আর্থিক বছরের সাত মাসে খরচ হয়েছে মাত্র ৮৮ কোটি টাকা! প্রশাসন সূত্রে খবর, সম্প্রতি রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের সচিব বরুণকুমার রায় জেলাশাসকদের কাছে এক নির্দেশ পাঠিয়েছেন। ওই নির্দেশে সর্বস্তরে সমন্বয় বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর পরামর্শ, কাজের অগ্রগতির দিকে যেন সব সময় নজর রাখা হয়। পাশাপাশি, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্লক-ভিত্তিক কর্মদিবস সংক্রান্ত এক রিপোর্ট পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে ওই নির্দেশে। জেলাশাসক বলেন, “প্রকল্পের কাজে গতি আনতে ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। সব স্তরে নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|