খালি পায়েই ম্যারাথনে শম্ভু
দারিদ্রকে সঙ্গী করেই জয়ের লক্ষ্যে দৌড়ে চলেছেন ঝাড়গ্রামের পুকুরিয়া গ্রামের শম্ভু মল্লিক। বছর তেত্রিশের লোধা-উপজাতি সম্প্রদায়ের শম্ভুর ট্র্যাক-রেকর্ডে রয়েছে ৫, ১০, ১২ কিলোমিটার দৌড় থেকে ৪২ কিলোমিটার ম্যারাথন-দৌড়ে প্রথম হওয়ার মতো অজস্র শিরোপা। অনায়াসে প্রতিদ্বন্দ্বীকে পিছনে ফেলে পৌঁছে যান ফিনিশিং লাইনে।
গত দশ বছরে সরকারি ও বেসরকারি-স্তরে অসংখ্য দৌড় ও ম্যারাথন-দৌড় প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রথম হয়েছেন শম্ভু। ভাল দৌড়বীর হওয়া সত্ত্বেও শম্ভুর সংসারে অভাবের বারোমাস্যা। কিছু দিন আগে বেসরকারি-স্তরে আয়োজিত আদিবাসীদের একলব্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় খালি পায়ে ম্যারাথন-দৌড়ে নজির গড়েছেন শম্ভু। বাঁকুড়ার রাইপুর থেকে বেলপাহাড়ি পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার পথ মাত্র ৩ ঘণ্টায় পৌঁছে প্রথম হয়েছেন তিনি। অর্থাভাবে জুতোটাও কিনতে পারেননি। শম্ভুর কথায়, “জুতো থাকলে আরও কম সময়ে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারতাম।”
ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
প্রতিদিন সকালের অনুশীলনে ৩০ কিলোমিটার দৌড়ন তিনি। শম্ভুর কথায়, “আগে জঙ্গলমহলের অশান্তির কারণে অনুশীলনে কিছুটা সমস্যা হত। তা-ও অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছি। এক বার তো ছুটতে ছুটতে রাস্তায় পড়ে থাকা একজোড়া মৃতদেহের উপর হুমড়ি খাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।” এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। তাই মনের আনন্দে গ্রামান্তরের পথে-মাঠে ছুটে চলেন শম্ভু।
নবম শ্রেণির পর অর্থাভাবেই পড়াশোনা বন্ধ হয়েছিল। বাবা মেথরা মল্লিক অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের মুখের গ্রাস জোটাতে ঝাড়গ্রামে মণ্ডপ-শিল্পীদের অধীনে শ্রমিকের কাজ করেন শম্ভু। দিনমজুরিও করতে হয়। স্ত্রী মিনাদেবীও খেত-মজুরের কাজ করেন। শম্ভুর জমিজিরেত নেই। আছে বলতে টালির ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়ি। তবে স্কুলজীবনে পড়া স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ ভোলেননি এই লোধা-যুবক। তাঁর বক্তব্য, “শরীরচর্চার উপর স্বামীজি বিশেষ জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। দৌড়তে পয়সা লাগে না। সরঞ্জামেরও বিশেষ দরকার নেই। তাই সতেরো-আঠারো বছর বয়স থেকেই কেবল দৌড়তাম। এ ভাবেই স্থানীয় ক্লাব-প্রতিষ্ঠানের নজরে পড়ে দৌড় প্রতিযোগিতায় নাম দিই। তার পর থেকে দৌড়েই চলেছি।”
সরকারি সাহায্য না পেলেও শম্ভুর পাশে দাঁড়িয়েছে মেদিনীপুরের তরুণ সঙ্ঘ ব্যায়ামাগার কর্তৃপক্ষ। কৃতজ্ঞ শম্ভু জানিয়েছেন, ব্যায়ামাগার-কর্তৃপক্ষ সাধ্যমতো তাঁকে সাহায্য করেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। ব্যায়ামাগারের সম্পাদক তপন ভকত বলেন, “দৌড়নোর অপরিসীম ক্ষমতা শম্ভুর। তিরিশ পেরিয়েও ও যে ভাবে ছুটতে পারে তা নজিরবিহীন। সঠিক প্রশিক্ষণ ও সাহায্য পেলে শম্ভু দেশের অন্যতম সেরা দৌড়বিদ হতে পারত। ২০০৭-’০৮ সালে রাজ্যস্তরে ৫ কিমি ও ১০ কিমি দৌড়ে শম্ভু প্রথম হয়েছিল।”
রাজ্যের বাইরেও একাধিক দৌড় প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছেন তিনি। এ বার পুলিশের হোমগার্ড পদে আবেদন করেছেন শম্ভু। তিনি বলেন, “চাকরিটা পেলে অভাবের দুঃশ্চিন্তা কাটবে। আমি তখন প্রাণভরে দৌড়তে পারব। দৌড়তে আমার ভীষণ ভাল লাগে।” এলাকার ছেলেবুড়োদেরও মাঝেমধ্যে দৌড়তে উৎসাহ দেন শম্ভু। তাঁর বক্তব্য, সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করি, দৌড়লে শরীর ও মন ভাল থাকে। স্ত্রী মিনাদেবীর সরস মন্তব্য, “আমার স্বামীর প্রথম ভালবাসাই দৌড়নো!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.