|
|
|
|
ভর্তুকির টাকা পড়ে, পাম্প কেনা হচ্ছে না |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পাম্প কেনার জন্য সরকারি ভর্তুকির টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অথচ, এখনও পর্যন্ত পাম্প কেনা হয়েছে পাঁচশো! এই পরিস্থিতি ‘পিছিয়ে পড়া’ পশ্চিম মেদিনীপুরে!
গত বছর এ জেলায় খরা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। ক্ষতির মুখ দেখেন কৃষকেরা। অবস্থা খতিয়ে দেখতে জেলায় আসে কেন্দ্রীয় সচিব পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল। তার পরই সিদ্ধান্ত হয়, চাষের কাজে ব্যবহৃত পাম্প কেনার জন্য সরকার ভতুর্কি দেবে। সেই মতো পরিকল্পনা তৈরি হয়। দু’টি প্রকল্পে এ জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার পাম্পে কেনার জন্য ভর্তুতির টাকা আসে। কিন্তু, বরাদ্দ অর্থের বেশিটাই পড়ে রয়েছে কৃষি দফতরের কোষাগারে। ফলে, সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। এই অবস্থার কথা মেনে নিয়েই জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তপন ভুঁইয়া বলেন, “দ্রুত পাম্প বিলির চেষ্টা চলছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে বৈঠক ডাকা হবে।” পশ্চিম মেদিনীপুরের অধিকাংশ মানুষই কৃষি-নির্ভর। তবে, নানা কারণে প্রায় প্রতি বছরই ক্ষতিগ্রস্ত হন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা। কখনও জলের অভাবে চাষ শুরুই করা যায় না। কখনও মাঝপথে চাষের কাজ মার খায়। এ বার যেমন খরিফ চাষের শুরু বেশ ভালই হয়েছিল। কিন্তু, জলের অভাবে সমস্ত এলাকায় ফসল ঘরে তোলা যায়নি। মাঠেই চাষ নষ্ট হয়েছে।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে সাধারণত ৫ লক্ষ ৪৪ হাজার ৯৮৪ হেক্টর জমিতে খরিফ চাষ হয়। অথচ, এ বার ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৮৪৪ হেক্টর জমিতে চাষ শুরু হয়েছিল। অর্থাৎ, স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি। কিন্তু, এই পরিমাণ জমির ফসল শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “চাষের একেবারে শেষ সময় যে জল লাগে, তা মেলেনি। সে জন্যই এই পরিস্থিতি।”
খরা পরিস্থিতির জন্যই কৃষকদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দিতে তৎপর হয় কেন্দ্রীয় সরকার। চাষের কাজে ব্যবহৃত পাম্প কেনার ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় চলতি বছরের শুরুতে। পরে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হয়। তবে, কোনও কৃষক ব্যক্তিগত ভাবে এই পাম্প কিনতে পারবেন না। স্বনির্ভর গোষ্ঠী অথবা কোনও সমবায় কৃষি-উন্নয়ন সমিতি যদি পাম্প কেনার জন্য কৃষি দফতরের কাছে আবেদন করে, তা হলে সে ক্ষেত্রেই ভর্তুতির টাকা দেওয়া হবে। প্রতিটি পাম্পের জন্য ১২ হাজার টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে (এক-একটি পাম্পের দাম ১৭ থেকে ১৯ হাজার টাকা, ভর্তুকির পরে সমবায়ের খরচ পড়ছে মাত্রই ৫-৭ হাজার টাকা)। কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “পাম্পে ভর্তুকির সরকারি সিদ্ধান্তে কৃষকদের উপকৃত হওয়ারই কথা।” কিন্তু সেউ উপকারটাই আর মিলছে না।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ৫৫৬৯টি পাম্প কেনার জন্য সরকারি ভর্তুকির টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে মেদিনীপুর মহকুমায় ১২৬৫টি, খড়্গপুরে ১৬৬৫টি, ঘাটালে ৭১৯টি ও ঝাড়গ্রামে ১৯২০টি। ৫৫৬৯টি পাম্পের মধ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দেওয়ার কথা ৪৪২৪টি ও কৃষি-উন্নয়ন সমবায় সমিতিকে দেওয়ার কথা ১১৪৫টি পাম্প। কিন্তু, বছর শেষ হতে চলল। এখনও পর্যন্ত পাঁচশো পাম্পও বিলি হয়নি। এ দিকে ভর্তুকির জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থ এসে পড়ে থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) বলেন, “এ ক্ষেত্রে কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতেই বৈঠক ডাকা হবে।” |
|
|
|
|
|