সিনিয়রকে বিরল স্বীকৃতি নেতা নবির
ত দিন যার প্রত্যাশায় দুঃখ বুকে চেপে প্রহর গুনতেন, মহার্ঘ্য সেই ‘ক্যাপ্টেন্স আর্ম ব্যান্ড’টা হাতে পেয়েও রহিম নবি ম্যাচের মাঝপথে তা তুলে দিলেন সিনিয়র মহেশ গাউলিকে!
নাটকীয় এই ঘটনা ঘটল বুধবার যুবভারতীতে। ষাট মিনিটে মহেশ বদলি হিসাবে মাঠে নামার পর। সেই ঘটনা দেখে দলের কোচ স্যাভিও মিদেইরা থেকে প্রেসবক্সে বসে থাকা সিনিয়র ফুটবলার ক্লাইম্যাক্স লরেন্স- সবাই বিস্মিত। অবাকও।
বুধবার সকালে টিম মিটিংয়ে এক বঙ্গসন্তানকে ঘরের মাঠে অধিনায়ক করে দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন স্যাভিও। তিনিই কান্ড দেখে হনহন করে ড্রেসিংরুমে ঢুকে নবিকে প্রশ্ন করলেন,“কেন এটা করলে? এটা তো নিয়ম বিরুদ্ধ।” আর এশিয়া কাপে পরে নেমে ভাইচুং যাঁর কাছ থেকে আর্মব্যান্ডটা নিয়ে নিয়েছিলেন, সেই ক্লাইম্যাক্স লরেন্স বললেন, “মহেশ তো স্থায়ী অধিনায়ক নয়। সাধারণত স্থায়ী অধিনায়ক মাঠে নামলে আর্ম ব্যান্ডটা দেওয়া হয়। তা হলে কেন নবি ওকে দিল ব্যান্ডটা?”
আবেগ না, ক্ষণিকের উত্তেজনা? মহানুভবতা না, এক গ্রাম্য ছেলের নিতান্তই সাদামাটা ভাবনানবি কেন এই বিরলতম ঘটনা ঘটালেন তা নিয়ে যখন স্টেডিয়ামে তীব্র বিতকর্, তখনই প্রেসরুমে প্রবেশ করলেন ‘নায়ক’ স্বয়ং। এবং নবি যা বললেন তার থেকে কোনও তর্কেরই মীমাংসা হওয়ার কথা নয়। “মহেশ আমার চেয়ে সিনিয়র। মরিশাসে ও আমাকে হাতে করে মাঠে নামিয়েছিল। তাই ও মাঠে নামার পর আর্ম ব্যান্ডটা খুলে দিয়েছিলাম। যদি এটা নিয়মবিরুদ্ধ হয়, আর দেব না।” সবাইকে অবাক করে বলে দিলেন পান্ডুয়ার ছেলে।
মুহূর্তে অবশ্য তাঁর চিন্তিত মুখে আবেগ উথলে ওঠে। “ম্যাচে নামার আগে সবাইকে বলেছিলাম আমি অধিনায়ক হয়েছি ভাই, ম্যাচটা যেন জিতে ফিরি। কী ভাল লাগছে বোঝাতে পারব না। আমার জীবনের সব থেকে স্মরণীয় দিন। ঘরের মাঠে দেশের অধিনায়ক হয়ে বিদেশি দলকে হারিয়েছি। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে?”
সকালে টিম মিটিং-এ বহু প্রত্যাশিত সুখবরটা পাওয়ার পরও ভেসে ছিলেন অবশ্য অন্য আবেগে। “আমি অধিনায়ক হয়েছি শোনার পরই শরীরের মধ্যেটা কেমন যেন করছিল। বিশ্বাসই হচ্ছিল না। জুনিয়ররা একের পর এক ক্যাপ্টেন হয়ে যাচ্ছিল, ভেবেছিলাম আর মনে হয় শিকে ছিঁড়ল না।” নবি যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন মনে হচ্ছিল ‘ব্রাত্যজনের রুদ্ধসঙ্গীত’।
পান্ডুয়ার নাকসিমহল্লা গ্রামের সাদাসিধে নবি জাতীয় দলের অধিনায়কত্বের প্রশ্নে এত দিন ছিলেন ‘ব্রাত্যজনই’! ক্লাব ফুটবলে চূড়ান্ত সফল। সাত বছরেরও বেশি সিনিয়র দলে। ট্রফি জয়ী দলের নিয়মিত সদস্য। তারও আগেও দেশের জার্সি পরে খেলেছেন বয়সভিত্তিক টুর্নামেট। তা সত্ত্বেও জাতীয় দলের অধিনাকত্ব জোটেনি কখনও।
ভাইচুং ভুটিয়া যখন জাতীয় দলে ছিলেন তখন ‘আর্ম ব্যান্ডটা’ থাকত তাঁর সিন্দুকেই। ভাইচুং পরবর্তী সময়ে যাদের অধিনায়ক করা হয়েছে তাদের অনেকেই নবির চেয়ে জুনিয়র। মঞ্জু, গৌরমাঙ্গি সিংহ, সুব্রত পাল এমনকী সুনীল ছেত্রীও। “সুনীল আমার চেয়ে পরে ইন্ডিয়া খেলেছে। আমি যখন যুব দলে খেলছি তখন তো মঞ্জু বলবয় ছিল। আর গৌরমাঙ্গি, মিষ্টুরা আরও অনেক পরে শুরু করেছে। তারাও ক্যাপটেন হয়ে গেছে। (হেসে) ফেডারেশন ম্যানেজমেন্টের যাঁরা অধিনায়ক বাছেন তাঁরা হয়তো আমাকে আরও বাচ্চা মনে করতেন।” অভিমানী শোনাচ্ছিল জো পল আনচেরির পর ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ইউটিলিটি ফুটবলারের গলা। “দুঃখ যে হত না তা নয়। তবে এটাও ভাবতাম হয়তো আমি অধিনায়কত্বের যোগ্য নই। তাই চুপ করে ভাল খেলার শপথ নিতাম।” শেষ বার জাতীয় দল বঙ্গসন্তান অধিনায়ক পেয়েছে সোদপুরের সুব্রত পালকে। তবে তা বিদেশে। কিন্তু ঘরের মাঠে দেশের অধিনায়কত্ব? ফুটবল-পরিসংখ্যানবিদরা বই পত্তর ঘেঁটে যা বলছেন, তাতে দেবজিৎ ঘোষ-বাসুদেব মণ্ডলের পর আর কোনও নাম নেই। ম্যাচের পর নবি সেজন্যই সম্ভবত বলছিলেন, “বলতে পারেন ১৬ নভেম্বরটা আমার জীবনের রেড লেটার ডে। অধিনায়ক হয়ে জয়।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.