অকাতর প্রশংসায় মিলোভানের ছাত্ররাও
নতুন প্রজন্মের জয়ে নতুন আশা
ভারত-৩(সুনীল-২, জেজে)
মালয়েশিয়া-২(সফি সালি-২)
কিপ শেপ এবং উইন সেকেন্ড বল। বব হাউটনের মুখে এই দুটো কথা বারবার শোনা যেত। লং বল তো ছিলই।
আর্মান্দো কোলাসোর আবার জোর ছিল গ্রাউন্ড পাসিংয়ে। “ভারতকে বার্সেলোনার মতো পাসিং ফুটবল খেলানোর খুব ইচ্ছে” বলে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছিলেন।
তরুণ কোচ স্যাভিও মিদেইরার নতুন ভারত এই দুটো তত্ত্ব-কথার মধ্যেই মসৃণ ঘোরাফেরা করল। ৩-২ জয়ে চমৎকার মেশাল দুটো বিপরীত স্টাইলকে। পাসিং এবং গতিকে অস্ত্র করে। ভালই বলতে হবে। সাতাশ বছর আগে, যুবভারতীর উদ্ধোধনী বছরে এই দুই প্রতিপক্ষের স্কোর ছিল ভারতের পক্ষে ২-১। ভারতের দায়িত্বে তখন সেরা বিদেশি কোচ চিরিচ মিলোভান।
মিজোরামের লালরিনডিকা রালতে। গোয়ার ফ্রান্সিস ফার্নান্ডেজ। পঞ্জাবের বলদীপ। মেঘালয়ের রোকাস লামেরে। স্যাভিও-র প্রথম দলের মাঝমাঠে এই সব অচেনা তরুণ ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে অনেক পরে আসবেন। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন প্রশান্ত-সুদীপ-কৃশানু-পারমিন্দর-বিকাশ-সত্যজিৎ-মরিসিওদের দেখে ২৭ বছরের তরুণ হয়েছে। এঁদের মনে রাখবে কেন?
এই নতুন প্রজন্মকে মনে রাখা যায় ক্লান্তিহীন অনিঃশেষ দৌড়ের জন্য। চোখ বুজে লিখি, এঁদের সেরা সম্ভাবনা লালরিনডিকা। জেজের পরে সাম্প্রতিক ভারতীয় ফুটবলকে মিজোরামের দ্বিতীয় উপহার।
জেজে বলতে মনে পড়ল, বিরতির মিনিট আটেকের মধ্যেই ১-১ থেকে ম্যাচটা ৩-১ হয়ে গিয়েছিল সুনীল-জেজের গোলক্ষুধার জন্য। কিন্তু ভারতীয় ডিফেন্ডারদের অবস্থা খুব খারাপ। বিশেষত আনোয়ার। বছর তিন আগে দিল্লিতে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ জেতার পর দিন এক পাঁচতারা হোটেলে ‘আনোয়ার’ লেখা জার্সি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এক বিদেশি তরুণ। আনোয়ার এত ভাল খেলেছিলেন ম্যাচটা। সেই দিনগুলো কোথায় ফেলে এলেন এত দ্রুত? তাঁর ব্যর্থতাতেই মালয়েশিয়ার সেরা স্ট্রাইকার সফি সলি দুটো গোল করে গেলেন। চোট পেয়ে তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরে ভারতীয় রক্ষণকে ধাতস্থ দেখাল। স্যাভিও দ্রুত ডেম্পোর তিন মূর্তি মহেশ, সমীর, অ্যান্টনিকে নামালেন।
দুই গোলদাতা ও নতুন অধিনায়ক। বুধবার যুবভারতীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
আনোয়ার যদি খারাপ ফুটবলের বিজ্ঞাপন হন, মোহনবাগানে তাঁর সতীর্থ সুনীল ছেত্রী তা হলে সেরা ফুটবলের বিজ্ঞাপন। অনেক তারকা ক্লাবের হয়ে রোদ্দুর হলে দেশের হয়ে অন্ধকার। সুনীল উল্টো। দেশের হয়ে নামলেই তিনি অন্য মূর্তিতে। ক্লাবের হয়ে তেমন গোল পাচ্ছেন না বলে প্রচুর লেখালেখি। অথচ বুধবার তাঁর হ্যাটট্রিক হয়ে যায় একটা সিটার নষ্ট না করলে। সুনীল-জেজের বোঝাপড়া অন্য আলো দিয়ে গেল ম্যাচটাকে।
১৯৮৪-র ভারত বনাম মালয়েশিয়ায় মিলোভানের দলে বাংলার ‘হুজ হু’রা প্রায় সবাই ছিলেন। তাঁদের তিন জন এখন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল কোচিং টিমের সঙ্গে যুক্ত। সুব্রত-প্রশান্ত-অতনু তিন জনই এ দিন সুনীল-জেজের বোঝাপড়া দেখে মুগ্ধ। মোহনবাগানের এক নম্বর ভারতীয় স্ট্রাইকারকে দেখে ইস্টবেঙ্গল কিপার কোচ বলে ফেললেন, “সুনীলকে এত ভাল খেলতে আগে দেখিনি।” হাউটনের আমলের ম্যানেজার প্রদীপ চৌধুরীও সবার আগে রাখলেন সুনীল-জেজের বোঝাপড়া। বহু দিন বাদে বর্তমান দলের খেলায় প্রাক্তনরা অকপট প্রশংসায় মুখর।
এবং রহিম নবি। জীবনে প্রথম নেতৃত্ব পেয়ে নিংড়ে দিলেন নিজেকে। প্রথম দিকটায় আক্রমণে মন, বিরতির পরে রক্ষণে। সুনীলের প্রথম গোলটার লং পাস তাঁরই সৃষ্টি। হাউটনের আমলের ম্যানেজারের মুখে তাঁরও প্রশংসা। মহেশ গাউলি নামতেই নিয়ম ভেঙে নবি নিজেই ক্যাপ্টেন আর্মব্যান্ড দিয়ে দেন তাঁকে। সিনিয়রদের স্বীকৃতি। বাঙালি ছেলেটি কত বড় টিমম্যান, তার প্রমাণ আর একবার মিলল। নতুন আশার মধ্যে এটাও রাখুন।
সুনীল-নবি-লালরিমডিকা-জেজের আলোর মধ্যে আরও এক জন দ্রষ্টব্য ছিলেন ম্যাচে। সহকারী রেফারি মাঘো সিংহ। আই লিগে অফসাইডের ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে সাসপেন্ড হয়েছিলেন মাঘো। তাঁকে কেন ভারতের ম্যাচে রাখা হল, সেটাই প্রশ্ন। শাস্তি পেয়েও মাঘোর বোধোদয় হয়নি। অফসাইড ধরতে ভুল করলেন সুনীলের প্রথম গোলে। মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় গোলটা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। আর এক বার ভারত প্রায় গোল হজম করছিল অফসাইডে।
মালয়েশিয়ান ফুটবল বলতেই স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন ভারতের অনেক তারকা। শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন। ফাঁকা যুবভারতীতে এসেছিলেন তাঁর আমলের সুপারস্টার মোখতার দাহরির মতো কাউকে খুঁজতে। ১৯৯৪ সালে ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে মালয়েশিয়ান ফুটবল শেষ হয়ে গিয়েছিল। এখন নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টায় স্ট্রাইকার মহম্মদ সফি মহম্মদ সলিকে কেন্দ্র করে। সফি সলি যে কতটা ভয়ঙ্কর, বুঝিয়ে গেলেন দুটো গোল করে। শুভাশিস দুটো চমৎকার সেভ না করলে সমস্যা ছিল।
ওই সময়ই বোঝা যাচ্ছিল, আই লিগে কেন এত গোল হচ্ছে। কেন এখন ক্লাবগুলো স্ট্রাইকারদের মতো দৌড়চ্ছে বিদেশি ডিফেন্ডারদের দিকেও। স্যাভিও নিজেও পরে বলছিলেন, “আর একটু সময় পেলে রক্ষণটা ভাল সাজানো যেত।” এত অদলবদল, এত পরীক্ষানিরীক্ষা তো দিল্লির সাফ ফুটবলের কথা ভেবে। এই রক্ষণ থাকলে ভাল উৎসাহ নিয়ে দিল্লি বিমানবন্দরে নামবেন সাফ ফুটবলের সেরা স্ট্রাইকাররা। সফি সলির মতো এঁরাও তাঁদের দেশের সেরা মুখ। মলদ্বীপের আলি আসফাক, বাংলাদেশের জাহেদ হাসান এমিলি, নেপালের অনিল গুরুং।
গৌরমাঙ্গি-নবিরা এখন থেকেই সাবধান! তবে তাঁরা বলতে পারেন, আমাদেরও তো সুনীল-জেজে আছে!

ভারতের হয়ে খেলেন:
শুভাশিস, দেবব্রত (সমীর), গৌরমাঙ্গি, আনোয়ার (মহেশ), নবি, বলদীপ (জুয়েল), রোকাস, লালরিনডিকা (ক্লিফোর্ড), ফ্রান্সিস (অ্যান্টনি), সুনীল (সুশীল), জেজে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.