পুলিশ, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের ডেকে শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখার প্রক্রিয়া জোরদার করতে উদ্যোগী হলেন শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ। বুধবার শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কের রবীন্দ্র মঞ্চে শহরের অন্তত ৪৩ টি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, থানার পুলিশ কর্তা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিক, শিলিগুড়ি বিএড কলেজের অধ্যক্ষকে সামিল করে এ ব্যাপারে সচেতনতা প্রচারে সভা করা হল। শীঘ্রই শহরের স্কুলগুলিতেও কচিকাঁচাদের সচেতন করতে প্রচার চালানো হবে বলে জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখার প্রক্রিয়া জোরদার করতে আর কী কী করা দরকার এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি-সহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের পরামর্শও এ দিন নথিভুক্ত করা হয়। চোরাগোপ্তা কোথাও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার হতে দেখলে তা বন্ধ করতে সকলেই যাতে সক্রিয় হন সে জন্য সভায় আবেদন জানানো হয়। সেই সঙ্গে বাইরে থেকে যাঁরা শহরে আসছেন তাঁরাও সঙ্গে করে যাতে ক্যারিব্যাগ না আনেন সে জন্য শহর এবং শহর লাগোয়া স্টেশন, বাস টার্মিনাস, অটো, রিকশা স্ট্যান্ডে প্রচার চালাবে পুরসভা। এ দিন সভায় বিষয়টি তুলে ধরেন পুরসভা পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল। |
পরিবেশ বিভাগের মেয়র পারিষদ তথা ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মাও এ ব্যাপারে একই মত প্রকাশ করেন। ডেপুটি মেয়র বলেন, “বাসিন্দাদের সহযোগিতায় শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ওই কাজের জন্য দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তো বটেই দেশের বাইরেও প্রশংসা কুড়িয়েছে শিলিগুড়ি পুরসভা। নেপাল-সহ বিভিন্ন জায়গায় থেকে সংশ্লিষ্ট পুরসভার কর্মকর্তারা জানতে চাইছেন আমরা কী ভাবে এ কাজ করেছি। তারাও সেই পথে নিজেদের শহর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত করতে চান। শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখার এই প্রক্রিয়া ধারাবাহিক ভাবে বজায় রাখতে হবে।” বস্তুত দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে পাহাড় এবং লাগোয়া এলাকা, বনাঞ্চল, সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে সমস্ত রকমের প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। দীর্ঘদিন তা কার্যকর না হলেও বর্তমান পুরবোর্ড বছর দুয়েক আগে তা কার্যকর করতে উদ্যোগী হয়। তাতে সাফল্য মেলে। শিলিগুড়ি শহর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়। রাজ্যে তো বটেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই কাজের জন্য প্রশংসা পায় পুর কর্তৃপক্ষ। তাই চোরাগোপ্তা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের চেষ্টা হলে কোনও ভাবেই যে তা বরদাস্ত করা হবে না এ দিন সে ব্যাপারে কড়া মনোভাবের কথা জানিয়েছে দিয়েছেন পুরসভার পরিবেশ বিভাগের দায়িত্বে থাকা রঞ্জনবাবু, সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত, অরিন্দম মিত্ররা। প্লাস্টিকের চায়ের কাপ, গুটকা, চিপসের মতো মুখরোচক খাবারের ক্ষেত্রেও প্লাস্টিকের মোড়ক বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। রঞ্জনবাবু বলেন, “এই সাফল্য ধরে রাখতে বাসিন্দাদের সচেতন থাকতে হবে। শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখা তাঁদেরই দায়িত্ব। আমরা তাদের সমস্ত রকম সাহায্য করছি মাত্র। এই বিভাগের পূর্বতন মেয়র পারিষদের সময় এই উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। আমাদের সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। সমস্ত ব্যবসায়ী সংগঠনগুলিকে সজাগ থাকতে হবে।” ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থবেঙ্গল (ফোসিন)-এর সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস জানান, তাদের অধীনে থাকা সমস্ত ব্যবসায়ী সংগঠনগুলিও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বর্জনের ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন। চোরাগোপ্তা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করতে সহযোগী ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। এর বদলে বিকল্প ব্যবস্থা করতে গরিব পরিবারের মেয়েদের কাগজের ক্যারিব্যাগ বানানোর প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অনেকে সফল ভাবে সেই কাজ করছেনও। |